তিন-চতুর্থাংশ পরিচালক পদ হারাচ্ছেন by তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

শেয়ার কেনা সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) প্রজ্ঞাপন আদালতের রায়ে বহাল থাকায় কম্পানিগুলোর তিন-চতুর্থাংশ পরিচালক পদ হারাচ্ছেন। কেননা ২২ নভেম্বর জারি করা এসইসির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গতকাল ২১ মে ছিল ন্যূনতম ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে কম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের শেষ সময়।


এই সময়সীমায় বিভিন্ন কম্পানির যেসব পরিচালক নির্দেশনা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয়ে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা আর ওই পদে থাকতে পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত ১৯২টি কম্পানির মোট এক হাজার ৬৩৩ জন পরিচালকের মধ্যে ৭৮৫ জন (৭৭ শতাংশ) পরিচালকের শেয়ারসংখ্যা ২ শতাংশের নিচে রয়েছে। এদের মধ্যে ব্যাংক, বীমা ও অ-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ৯৭টি কম্পানির এক হাজার ৩৬ জন উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে ৫০৩ জন পরিচালক (৪৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ) রয়েছেন। আজ থেকে এসব পরিচালক পদ হারাচ্ছেন।
সিএসইর এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ১৫ মের মধ্যে ব্যাংক খাতের ৩০টি কম্পানির ৩৭০ জন পরিচালকের মধ্যে ২১১ জনই ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছেন। বীমা খাতের ৪৫টি কম্পানির ৪৯২ পরিচালকের মধ্যে ২১৮ জন ২ শতাংশের কোটা পূরণ করতে পারেননি। অ-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২২ কম্পানির ১৭৪ পরিচালকের মধ্যে ৭৪ জনও পারেননি ২ শতাংশ শেয়ার কিনতে। সিএসইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।
এসইসি নির্দেশনা জারির দিনে ডিএসই যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে সব খাতের এক হাজার ৪৯০ জন পরিচালকের শেয়ার ২ শতাংশের নিচে ছিল। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত সব খাতের কম্পানির ৮৭০ জন পরিচালক গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২ শতাংশ শেয়ার কেনেননি। এখানে তালিকাভুক্ত কম্পানির সংখ্যা ২৩৪টি, যা সিএসইর চেয়ে ৪২টি বেশি। ডিএসইর লিস্টিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান।
পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাঁরা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনকি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। এ অবস্থায় এসইসি ২০১১ সালের ২২ নভেম্বর পরিচালকদের ব্যক্তি পর্যায়ে ২ শতাংশ ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে নির্দেশনা জারি করে। একই সঙ্গে কোটা পূরণে ছয় মাস বা ২১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ এই কোটা পূরণে ব্যর্থ হলে তিনি আর সংশ্লিষ্ট কম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবেন না। পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁদের স্থলাভিষিক্ত হবেন ৫ শতাংশের ওপরে শেয়ার আছে এমন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গতকাল আদালতের রায়ের পর কোটা পূরণে ব্যর্থ পরিচালকদের পদ শূন্য হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
হাইকোর্টের রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, 'সোমবারের মধ্যে পরিচালকদের কেউ ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করতে পারলে তাঁর পরিচালক পদ চলে যাবে।' ডিএসইর সভাপতি রাকিবুর রহমান বলেন, 'আদালতের রায়ের পর এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তত ৫০ শতাংশ পরিচালক তাঁদের পদ হারাতে পারেন।' সিএসইর সভাপতি আল মারুফ খান বলেন, 'আদালতের রায় প্রদানে বিলম্ব হলেও এসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ২১ মের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকদের পদ ২২ মে থেকে শূন্য হয়ে যেত।'
এদিকে এসইসির প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে রিট দায়েরকারীদের একজন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হাইকোর্ট রায় ঘোষণার পর আমি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।'
এসইসির নির্বাহী পরিচালক ও প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র সাইফুর রহমান হাইকোর্টে রায় ঘোষণার পর গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, '২১ মের মধ্যে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার কেনায় ব্যর্থদের জন্য পরবর্তীতে সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত কমিশন নেয়নি। আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.