কিডনি রোগের ভয়াবহ পরিস্থিতি

গত ১০ বছরে দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে। এসব কিডনি রোগীর সঠিক চিকিৎসার যে ঘাটতি রয়েছে, তা খুবই হতাশাজনক। শতকরা ৮০ ভাগ কিডনি রোগীই বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এমনি অবস্থায় বৃহস্পতিবার পালিত হলো বিশ্ব কিডনি দিবস। সে উপলক্ষে আয়োজন-আনুষ্ঠানিতকা ছিল ভালোই। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন, কিডনি ফাউন্ডেশন, ক্যাম্পাসসহ সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন দিনটি পালন করেছে। এ দিনটিতে বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি থেকে অনুমান করা যায়, অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। দেশে পরিবেশগত কারণে এবং সঠিক খাদ্যমানের ঘাটতির কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মানুষের শরীরে কিডনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর অংশ। বহু কারণে দেশের মানুষ নানা ধরনের কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার বহু কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গুরুতর নেফ্রাইটিস, প্রসবকালীন নানা জটিলতা, প্রস্রাবে এলবোমিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ম্যালেরিয়া ও ইনজেকশন। এ ছাড়া হার্টের সঙ্গে কিডনি রোগের একটি সম্পর্ক থাকে। ডায়াবেটিসও কিডনি রোগের একটি কারণ হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপে শরীরের বড় বড় ধমনীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ডায়াবেটিস ক্ষতিগ্রস্ত করে ছোট ছোট উপশিরার। আর যাদের রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস দুটিই আছে, তাদের জন্য কিডনি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবচেয়ে বেশি। কিডনি একবার বিকল হলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। তাই এই ব্যয়বহুল ও জটিল রোগটি দেশের মানুষের মধ্যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়াটা খুবই উদ্বেগজনক। দেশবাসীর কিডনি রোগের উপসর্গগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন_পা বা মুখ ফুলে গেলে, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হলে, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে কিডনি রোগের আশঙ্কা থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, এখনই প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করা গেলে ২০২০ সাল নাগাদ এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করবে। রোগাক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে মানুষের যে কিছু করার নেই, এ কথা সর্বদা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যসচেতনতা, খাদ্যাভ্যাস এবং সুস্থ পরিবেশ মানুষকে রোগমুক্ত থাকতে সাহায্য করে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত খাদ্যের অধিকাংশই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। দেশের প্রকৃতি কেমিক্যাল-সর্বস্ব হয়ে উঠছে, নদীগুলো কেমিক্যালের বিষাক্ত বর্জ্যে ভরে উঠছে। এ অবস্থা ঠেকানো না গেলে কিডনি রোগের ভয়াবহতা ঠেকানো যাবে না। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রধান দায়িত্ব ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারকেই নিতে হবে। সরকার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেবে বলে আমরা আশা করি।

No comments

Powered by Blogger.