শিশু জেদ করছে? by তৌহিদা শিরোপা

হরেক রকম আবদার থাকে শিশুদের। সেসব আবদার পূরণ না হলে অনেক সময় তারা জেদ করে। একরোখা হয়ে ওঠে, যা শিশুটির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মা-বাবাও সাময়িক শান্তির জন্য সন্তানের জেদ মেনে নেন। এতে সে প্রশ্রয় পেয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে মা-বাবাকে ধৈর্য ধরতে হবে। সন্তান যতই জেদ করুক, তাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।


এমন মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ।
তিনি বলেন, ‘সন্তান জেদ করলে শুরুতে দেখতে হবে প্রায়ই সে এটি করছে কি না। এরপর যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝাতে হবে। জেদি শিশুকে বোঝানোর কোনো বিকল্প নেই। হয়তো সে বুঝতেও চাইবে না, ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকবে। তবুও ধৈর্য ধরে তাকে বোঝানোর কাজটি করে যেতে হবে। জেদ করে সে যা চাইছে তা পেয়ে গেলে এটি স্বভাবে পরিণত হবে। অনেক সময় অভিভাবকদের সময় থাকে না কিংবা বাড়িতে কোনো অতিথি এসেছে, সে সময় শিশুটি জেদ করে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে তাৎক্ষণিকভাবে তার জেদ মেনে নেওয়া হয়। যা করা উচিত নয়। আবার দেখা যায়, শিশুটি হয়তো জেদের কারণে চিৎকার করে কাঁদছে তখন মা-বাবার মধ্যে কেউ বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য তার আবদার মেনে নেন। এতে করে শিশু আরও প্রশ্রয় পেয়ে গেল। সে ভাববে তার দাবি যিনি পূরণ করছেন না, সে-ই আসলে দোষী। তবে কোনো অবস্থাতেই শিশুর সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলবেন না। তাকে আঘাত না করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’
শিশুকে যে কাজটি করতে নিষেধ করা হয়, দেখা যায় সেটিই সে বেশি করে করছে। কোনো কোনো শিশু নিজের দিকে অন্যকে মনোযোগী করে তুলতে এমন আচরণ করে। সে ক্ষেত্রে জেদের বশবর্তী হয়ে শিশু যে কাজটি বারবার করছে, সেই কাজ থেকে তার মনোযোগ সরিয়ে দিতে হবে। এই যেমন একটি ক্লাসে সব শিশু ছবি আঁকছে। একজনের আঁকতে ইচ্ছা করছে না। ছবি না এঁকে সে অন্য একটি ছাত্রকে মারল। তখন ক্লাস শিক্ষক হয়তো তার ওপর রাগ করলেন। এ সময় রাগ না করে শিশুকে বলতে হবে, ‘চলো, আমরা ক্লাস গোছানোর কাজ করি।’ একেক শিশুর মনোজগৎ একেক রকম। ফলে মা-বাবাকে তাঁর সন্তানের জগৎটাও বুঝতে হবে। অনেক শিশু জেদ করলে চুপ করে থাকে। তখন একবার জিজ্ঞাসা করবেন কী হয়েছে? কিন্তু বারবার জিজ্ঞাসা করবেন না। পরে সে একে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। তাকে খানিকক্ষণ এড়িয়ে চললে দেখবেন নিজেই এসে কথা বলছে।
সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। মা-বাবার উচিত সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া। মজা করার সময়, গল্পের ছলে বলতে হবে কেন জেদ করা উচিত নয়। আচরণের ভালো-মন্দ নিয়েও নানা ধরনের গল্প করা যেতে পারে। এতে শিশুটির আত্মোপলব্ধি হবে। নিজেই আচরণ পরিবর্তন করতে চেষ্টা করবে। সঙ্গে মা-বাবা তো আছেনই।

No comments

Powered by Blogger.