দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলা-‘মেজর লিয়াকতসহ পাঁচজনকে ঘটনাস্থল থেকে নেওয়া হয়’

দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন উপপরিচালক মেজর লিয়াকত হোসেনসহ পাঁচজনকে ধরে পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে আদালতকে বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হেল বাকী।


গতকাল সোমবার দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আসামিপক্ষের জেরার জবাবে আবদুল্লাহ হেল বাকী এ কথা বলেন। তিনি ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গভীর রাতে চট্টগ্রামে সিইউএফএলের জেটি ঘাটে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন তিনি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বন্দর অঞ্চলের উপকমিশনার ছিলেন, বর্তমানে তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার।
গতকাল চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমানের আদালতে তিনজন আসামির আইনজীবী আবদুল্লাহ হেল বাকীকে জেরা করেন। জেরায় এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে মেজর লিয়াকতসহ পাঁচজনকে ফাঁড়িতে নেওয়া হয়। কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি। এ বিষয়ে কোনো জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয় কি না, তা জানা নেই।’
আদালতে দেওয়া আবদুল্লাহ হেল বাকীর সাক্ষ্য উদ্ধৃত করে মেজর লিয়াকতের আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে চার-পাঁচজনকে সার্জেন্টরা সরিয়ে নিয়ে যায় বলে আদালতে বলেছিলেন। কোথায় নিয়ে যায় সেটা বলেননি।’
জবাবে বাকী বলেন, ‘না, বলিনি।’
আইনজীবী বলেন, ‘১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন ওই চার-পাঁচজনকে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।’ জবাবে বাকী বলেন, ‘হ্যাঁ বলেছি।’
আসামির আইনজীবী বলেন, ‘১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আপনি বলেছেন পাঁচজন লোককে গ্রেপ্তার না করতে সার্জেন্ট আলাউদ্দিনকে নির্দেশ দিই। সে নির্দেশ অনুসারে কাজ করে।’ আবদুল্লাহ হেল বাকী স্বীকার করেন, তিনি এ বক্তব্য দিয়েছিলেন।
এরপর প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, ‘আপনার নির্দেশ অনুসারে সার্জেন্ট আলাউদ্দিন এ ঘটনায় করা দুটি জিডি ছিঁড়ে ফেলেন এবং পরবর্তীতে দুটি জিডি নতুন করে লেখা হয়।’ বাকী বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
জেরার একপর্যায়ে মেজর লিয়াকতের আইনজীবী বলেন, ‘ঘটনার সময় মেজর লিয়াকত এনএসআইতে ছিলেন না, ঘটনাস্থলেও ছিলেন না। সার্জেন্ট হেলালউদ্দিন ও আলাউদ্দিন মেজর লিয়াকতকে নয় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে আপনার কাছে এনেছিল। আপনি ঘটনার সময় আবুল হোসেন নামের ওই ব্যক্তির সাথে কথা বলেছিলেন।’ এটা ঠিক কি না, এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ হেল বাকী বলেন, ‘এটা সত্য নয়।’
২০০৪ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মেজর লিয়াকত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সামরিক অ্যাটাচে হিসেবে ন্যস্ত ছিলেন, এ তথ্য জানেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবেও বাকী বলেন, ‘জানা নেই।’
মেজর লিয়াকতের আইনজীবীর শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘বর্তমান সরকার ও সিআইডির চাপে কি আপনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিলেন?’ বাকী বলেন, ‘সত্য নয়।’
এরপর পুলিশ কর্মকর্তা বাকীকে জেরা করেন এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিমের আইনজীবী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২ এপ্রিল ওই ঘটনায় সর্বমোট ছয়টি জিডি হয়। ওই সব জিডির কোথাও এনএসআইয়ের বিষয় উল্লেখ নেই। জিডির পর ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত আপনি ঘটনার সর্বোচ্চ তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন।’ জবাবে আবদুল্লাহ হেল বাকী তদন্ত তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জিডিগুলোর বিষয়ে আমি কিছু জানি না। জিডি তদারকি করিনি।’
ঘটনার দিন থেকে ২০০৪ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত জিডি এবং অন্য কোথাও এনএসআই বা মেজর লিয়াকত বা ব্রিগেডিয়ার রহিম সম্পর্কে কোনো বক্তব্য ছিল না, আইনজীবীর এই বক্তব্যের জবাবে বাকী বলেন, ‘বলতে পারব না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে বাকী বলেন, ‘এনএসআইয়ের ডিজি আবদুর রহিমের সাথে ঘটনার রাতে ফোনে আমার কোনো কথা হয়নি। মেজর লিয়াকত তাঁর টেলিফোনে কথা বলতে বললেও আমি কথা বলিনি।’
সবশেষে আবদুল্লাহ হেল বাকীকে জেরা করেন রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন উদ্দিন তালুকদারের আইনজীবী ফজলুল হক ভূঁইয়া। গতকাল আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়নি, আজ মঙ্গলবার তাঁকে অসমাপ্ত জেরা করা হবে। এর আগে ৮ মে আবদুল্লাহ হেল বাকী আদালতে সাক্ষ্য দেন। ওই দিন তাঁকে আংশিক জেরা করা হয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.