উভয় সংকটে পাক সেনা নেতৃত্ব by আয়েশা সিদ্দিকা

পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তাদের এখন একটা অদ্ভুত সময় পার করতে হচ্ছে। দৃশ্যত তারা বাহিনীর ভেতরের ও বাইরের নানা অভিযোগে ভারাক্রান্ত। একদিকে তারা নৌঘাঁটি পিএনএস মেহরান সন্ত্র্পাসবাদী হামলার শিকার হওয়ার কারণে নিজেদেরই রক্ষা করতে অক্ষমতা প্রদর্শন ও অন্যদিকে জনগণের সঙ্গে রূঢ় আচরণের দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে।


আধা-সামরিক বাহিনীর হাতে করাচিতে এক যুবকের মৃত্যু ও উর্দিধারী লোকদের হাতে মানুষের অত্যাচারিত হওয়ার কয়েকটি ভিডিও চিত্র বাহিনীর অভ্যন্তরীণ অসন্তোষকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
এটি আসলে পাকিস্তানের '৭১-পরবর্তী ইতিহাসে এক নজিরবিহীন মুহূর্ত। যদিও আজ সামরিক বাহিনীর দিকেই সবাই তীর নিক্ষেপ করছে। সেনাবাহিনী মনে করে, দেশের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে এটি তাদেরই কাজ। সশস্ত্রবাহিনীর গণসংযোগ বিভাগ বর্তমান সেনাপ্রধান সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টটিসহ এ ধরনের খবরের ব্যাপারে বেশ অসন্তুষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের ব্যাপারে তার গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে জেনারেল আশফাক কায়ানি অনেক অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে রয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের একই রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর জুনিয়র অফিসার ক্যাডাররা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে যে কায়দায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিমান হামলা পরিচালনা চালাচ্ছে বা যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র লাদেনকে ধরা ও মারার জন্য অপারেশন পরিচালনা করেছে_ তাতে তারা খুবই অখুশি। বলা হয়েছে, এই অখুশি জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা বা কর্নেলরা সামরিক অভ্যুত্থান পর্যন্ত ঘটিয়ে বসতে পারেন। ব্রিটিশ ধরনের আধিপত্যপরম্পরাভিত্তিক আমলাতান্ত্রিক পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সেনাপ্রধানকে একজন অতি ক্ষমতাশালী ব্যক্তি মনে করা হয়। তাই সেনাপ্রধানের দিকে আঙুল তোলা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বিরল ঘটনা। তবে সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা ও জুনিয়র ক্যাডারদের মধ্যে বিভক্তি থাকার ক্রমবর্ধমান ধারণা রয়েছে। বিবরণ অনুসারে জুনিয়র সামরিক ক্যাডাররা আদর্শিকভাবে অনেক বেশি রক্ষণশীল ও চিন্তার দিক থেকে জাতীয়তাবাদী। অন্যদিকে সিনিয়র কর্মকর্তারা নিতান্ত ব্যবহারিক ও বাস্তববাদী অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত। অতএব, কূটনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই একটি ধারণা চালু রয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জুনিয়র ক্যাডাররা সিনিয়র কর্মকর্তাদের থেকে ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে জুনিয়ার অফিসারদের কাছ থেকে অসন্তুষ্টির কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। এটি কারও কারও মধ্যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে সম্ভাব্য সংকট বৃদ্ধির ধারণা সৃষ্টি করছে।
এ ধরনের অসন্তোষ সিনিয়র কর্মকর্তারা কতটা সামাল দিতে পারবেন সে ব্যাপারে তারা নিজেরাই সন্দিহান।
এ আদর্শগত অসন্তুষ্টির সঙ্গে জেনারেল কায়ানির চাকরির মেয়াদ তিন বছরের জন্য ও তারই পছন্দের আইএসআই মহাপরিচালক হিসেবে জেনারেল সুজা পাশার মেয়াদ এক বছরের বৃদ্ধির ঘটনা মিলে সিনিয়র অফিসারদের একাংশের মধ্যে এক ধরনের হতাশার জন্ম দিতে পারে। স্বভাবতই জেনারেল কায়ানি সেনা সংগঠনের ভেতরে ও বাইরে থেকে অনেক চাপের মুখে পড়বেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, নাগরিক সমাজ সেনাবাহিনীর ব্যাপারে ক্রমবর্ধমানভাবে সমলোচনামুখর। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানে কর্নেলদের ক্যুদেতা এখনও দুরঅস্ত।
তবে সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জুনিয়র অফিসার স্তরে মার্কিনবিরোধী মনোভাব ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে দীর্ঘ চার দশক ধরে মার্কিনবিরোধী প্রচারণা পল্লবিত হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় জেনারেল কায়ানিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কঠিন দরকষাকষির ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ দরকষাকষির খেলায় তাকে বিজয়ী হিসেবে বেরিয়ে আসতে হবে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেমনটা মনে করে তাকে সেই জাতীয় অহঙ্কার পুনরুদ্ধার করতে হবে।

আয়েশা সিদ্দিকা : ইসলামাবাদ ভিত্তিক বিশ্লেষক। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে ভাষান্তর, সুভাষ সাহা
 

No comments

Powered by Blogger.