সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে-নিয়ন্ত্রণহীন রাসায়নিক দ্রব্য

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে সব দেশেই রাসায়নিক দ্রব্যের পরিবহন, গুদামজাতকরণ ও ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আমাদের দেশে কাগজে-কলমে সেই বিধিনিষেধ থাকলেও তার কার্যকরতা নেই বললেই চলে। আবাসিক এলাকায় এ ধরনের মারাত্মক বিস্ফোরক দ্রব্য রাখার পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সাম্প্রতিক নিমতলী


ট্র্যাজেডিই তার প্রমাণ। কেবল নিমতলী নয়, দেশের সর্বত্র নিয়ন্ত্রণহীনভাবে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসা চলছে।
গতকাল শনিবার প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পুরান ঢাকায় রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি ও মজুদ করার লাইসেন্স আছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের আর রাসায়নিক দ্রব্য থেকে পণ্য উত্পাদনের লাইসেন্স আছে ৭০টির। কিন্তু সেখানে রাসায়নিক দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠান। এই ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকায় বেশি হলেও অন্যান্য শহরে একেবারে কম বলা যাবে না। রাসায়নিক দ্রব্যের সমস্যার দুটি দিক রয়েছে। প্রথম সমস্যাটি হলো মজুদ ও পরিবহন-সংক্রান্ত। এসব পণ্য নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত এলাকায় রাখা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় ও প্রধান সমস্যাটি হলো এর অপব্যবহার। যে রাসায়নিক দ্রব্য ওষুধ, কাঠের আসবাব নির্মাণে ব্যবহূত হয়, সেই একই পণ্য দিয়ে বিভিন্ন জাতের মাদকদ্রব্যও তৈরি করা হয়। দেশে মাদকদ্রব্যের বিস্তার দেখেই বোঝা যায়, এর ওপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
কেন নেই? এ ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামের প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকার খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করায়। মাঠপর্যায়ে তদারকিতে বাড়তি লোকবল থাকা জরুরি—এ কথা কেউ অস্বীকার করবেন না। কিন্তু পূর্বশর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও বহু প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার কি যুক্তি থাকতে পারে? তা ছাড়া লাইসেন্স না নিয়ে কারা রাসায়নিক দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে, তাও নিশ্চয়ই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অজানা নয়। দুই পক্ষের মধ্যে অসাধু লেনদেন বা আঁতাতের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রক্ষকই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তা হলে অবৈধ মাদক ব্যবসা বন্ধ কিংবা রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারই বা নিয়ন্ত্রণ হবে কীভাবে?
আশা করি, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবার চৈতন্যোদয় হবে এবং রাসায়নিক দ্রব্যের মজুদ, ব্যবসা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.