সাদাকালো-রাজনৈতিক আগ্রাসনে যাহা বুশ তাহা ওবামা by আহমদ রফিক

কয়েক দিন ধরে দৈনিক পত্রিকায় দুটো বিষয় প্রধান হয়ে উঠেছে_আরব বিশ্বে গণজাগরণ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অপসারণের প্রতিক্রিয়া। শেষোক্ত বিষয়টি স্থানিক হয়েও একাধিক কারণে আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়ে গেছে। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে অনেক লেখালেখি।


কিন্তু প্রথম বিষয়টির রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। এর কারণ লিবিয়া। তাই খবরের পাশপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষ্যকারদের বিচার-ব্যাখ্যার বিরাম নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের চোখের মণি যেমন মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র, শেখতন্ত্র, তেমনি পথের কাঁটা লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে বাগে আনতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় দোসররা। মধ্যপ্রাচ্যসহ আরব বিশ্বে তাদের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু ইরান ও লিবিয়া। সেই সঙ্গে দুর্বল সিরিয়া। প্রথম দুটোকে নিয়ে তাদের টানাপড়েন শেষ হওয়ার নয়। তবে এবার সুযোগ এসেছে গাদ্দাফির আসন উল্টে দেওয়ার। তিউনিসিয়ায় হঠাৎ করে যে গণ-অভ্যুত্থান শুরু, তা মিসর হয়ে সংলগ্ন লিবিয়াকে ব্যাপকভাবে স্পর্শ করেছে, গাদ্দাফি এখন মহাসংকটে। এমন সুযোগ কদাচিৎ মেলে।
তাই লিবিয়ায় সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন খবরে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ ঘোলা পানিতে মাছ ধরা সাম্রাজ্যবাদের বরাবরের নীতি। এদিক থেকে ইঙ্গ-মার্কিন আধিপত্যবাদের তুলনা মেলে না, তবে কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামকে নিয়ে বিশ্বের গণতন্ত্রমনা মানুষের একটা ভুল প্রত্যাশা গড়ে উঠেছিল। তাঁরা বুঝতে পারেননি যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, যাহা বুশ তাহা ওবামা_ওরা একই ধানের খই, রঙেই যা ফারাক। বরং রং কালো হওয়ায় বিশ্ব সাধারণের মনভোলানো সহজ হয়েছিল। নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে ক্ষমতায় বসে ওবামা তা প্রমাণ করেছেন। প্যালেস্টাইন থেকে আফগানিস্তান_ওবামার বিদেশনীতির চরিত্র দেখে বোঝা কঠিন দেশটা চালাচ্ছেন কে_বুশ না ওবামা, ঘরোয়া নীতি যদিও অনেকাংশে আলাদা। পূর্বোক্ত গণপ্রতিবাদের মুখে স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের নজর পড়েছে সেসব দেশে_প্রতিশোধ ও স্বার্থসিদ্ধ এই লক্ষ্যে। ওবামার পূর্বসূরি জর্জ বুশ কোনো উপলক্ষ ছাড়াই ইরাক আক্রমণ করে সেখানকার তেল সম্পদ দখল করে যে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, তা নেভার কোনো লক্ষণ নেই।
এবার আরব বিশ্বে সরকারবিরোধী গণ-আন্দোলনের জোয়ার ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তির জন্য একই সুযোগ এনে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কাছে দাসখত লিখে দেওয়া মিসরের একনায়ক হোসনি মুবারকের পতন নিয়ে দ্বিধায় ছিল ওয়াশিংটনের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা। একদিকে গণজাগরণ, অন্যদিকে ঘরের গরু স্বৈরশাসক_কোনদিকে সমর্থন দিলে গণতন্ত্র রক্ষা হয় এবং নিজ রাজনৈতিক স্বার্থও কাটা পড়ে না, এ হিসাব কষতে কষতে মুবারকের পতন ও পলায়ন। সমস্যার আপনি সমাধান।
কিন্তু চিরশত্রু গাদ্দাফি কাদায় পড়েছে দেখে সাত তাড়াতাড়ি নড়েচড়ে বসেছে ওয়াশিংটন প্রশাসন। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট দফায় দফায় করণীয় বিষয় নিয়ে বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। মনে হচ্ছে, এটা যেন তাঁর ঘরের সমস্যা, উত্তর আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের মতো ঘটনা_কিছু একটা না করলেই নয়। অর্থাৎ এ সুযোগে বেয়াড়া গাদ্দাফিকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে হবে এবং জলে, স্থলে, আকাশপথে আক্রমণ চালাতে পারলে গাদ্দাফি তো সপরিবারে শেষ হবেই, সেই সঙ্গে লিবিয়ার বিশাল তেলক্ষেত্র দখলে চলে আসবে। কী আনন্দ!
তাই অন্য দেশ আক্রমণের রাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মার্কিন রণতরী লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। অন্য সব ব্যবস্থাও প্রস্তুত_এখন শুধু মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা, দরকার নামকাওয়াস্তে মিত্রদের নৈতিক সমর্থন_ওবামা তখন বুশ হয়ে যাবেন, দখল করে নেবেন লিবিয়া। ইরাকের মতো পুতুল সরকার তৈরি করতেও সময় লাগবে না। কারণ, একনায়ক গাদ্দাফি ইতিমধ্যে বাইরেই শুধু নয়, ঘরেও অনেক শত্রু তৈরি করে ফেলেছেন। তা ছাড়া কোটি পাউন্ডের টোপ অগ্রাহ্য করা মোটেই সহজ নয়।
এভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কার্যসিদ্ধি হওয়াটাই কাম্য, যেমন দেখা গেছে, কয়েক শতক আগেকার ঔপনিবেশিক আমলে। পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) তার প্রমাণ_বঙ্গ দখলের পর গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ইংরেজ বণিকের দখলে চলে আসে। তখন বঙ্গজয়ের পর মসনদে বসেছিল তাদের সমর্থক পুতুল নবাব_তারপর যথারীতি তার প্রস্থানের ধারাবাহিক নাটক। আশ্চর্য সেকাল-একালের ক্ষমতা দখলের নাটকীয় ঘটনার মধ্যে কোনো ফারাক নেই। আধুনিকতার চেতনা সেখানে কোনো ছাপ ফেলে না।
কিন্তু বেয়াড়া গাদ্দাফিকে নিয়ে এ মুহূর্তে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো এখনো একাট্টা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন জানাতে তৈরি নয়। ফ্রান্স ইতিমধ্যে জানান দিয়েছে, লিবিয়ায় সামরিক অভিযান চালানোর ফল ভালো হবে না। এর ফলে ব্যাপক রক্তপাত এবং সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও হবে অনেক। কায়রোতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফ্রান্স ও তার অনেক মিত্র দেশ লিবিয়ায় সামরিক অভিযান চালানো সমর্থন করবে না। এমনকি দিন কয়েক আগেকার এক খবরে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের বশংবদ আরব দেশগুলোর অনেকেই ওই অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে। হয়তো ভয়টা তাদেরও। কারণ, হঠাৎ করেই তিউনিসিয়া থেকে গণজাগরণের যে জাদুকরী শক্তির প্রকাশ আরব বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তার ফলে ভীতসন্ত্রস্ত্র আরব রাজতন্ত্র ও একনায়ক শাসকগোষ্ঠী। সম্প্রতি যে ইসলামী জঙ্গিবাদ মুসলিম বিশ্বে তোলপাড় ঘটিয়ে চলেছে, তার ফলে এ গণজাগরণের অবশেষে পরিণাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে উদ্বেগ শুধু আরববিশ্বেরই নয়, তথাকথিত গণতান্ত্রিক বিশ্বেরও। বর্তমান জঙ্গিবাদের উদ্ভব ঘটার আগেই ইরান তেমন একটা উদাহরণ তৈরি করেছে সর্বদলীয় গণজাগরণের মুখে রাজতন্ত্র ধ্বংস করার পর কট্টর ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে ও সেই লক্ষ্যে গণতন্ত্রী এবং সমাজতন্ত্রী রাজনীতিকে সমূলে উপড়ে ফেলে ও নায়কদের কচুকাটা করে।
পশ্চিমা বিশ্বের সুবুদ্ধি সেদিকে নজর দিতেও পারে। লিবিয়াসহ আরববিশ্বের এ গণজাগরণের পেছনে জঙ্গিবাদী ধর্মীয় শক্তির প্রভাব কতটা, সে হিসাব কেউ করছে বলে মনে হয় না। কারণ গণজাগরণের চালিকাশক্তির চরিত্র নিয়ে কোনো বিচার-ব্যাখ্যা পশ্চিমা বিশ্লেষকদের বক্তব্যে উঠে আসছে না। ইরান ও আফগানিস্তানের ভুলটা তারা দ্বিতীয়, তৃতীয়বার করবে? আফগানিস্তানে পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে যত সহজে কার্যোদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছিল ইউরো-মার্কিন আধিপত্যবাদী শক্তি, কট্টর ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী সে গুড়ে যথেষ্ট পরিমাণ বালি মিশিয়ে দিয়েছে, সে ধারা এখনো চলছে। আফগানিস্তান বিজয় মনে হয় দূরস্থ।
এমন সব ভাবনা কি ফরাসি সরকারের হিসাব-নিকাশে প্রাধান্য পাচ্ছে। বণিকী চিন্তায় অভ্যস্ত আধুনিক ধনিক রাষ্ট্র ব্রিটেন বরাবরই তার উপনিবেশবাদী চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছে তার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে, আর সেখানে লেবার বা টোরির মধ্যে কোনো ভেদ নেই, তাদের উপনিবেশবাদী স্বার্থ সব কিছুর ঊধর্ে্ব। গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা সেখানে হিসাবে আসে না। এদিক থেকে ওয়াশিংটন তাদের শিষ্য হয়েও এখন গুরুর অবস্থানে। অস্ত্র, অর্থ, সম্পদ ও প্রযুক্তির জোরে যুক্তরাষ্ট্র সবার সেরা। সমাজবাদী রাশিয়ার পতনের পর তারা এখন বিশ্ব মোড়ল_যেমন তাদের সংবাদমাধ্যম, তেমনি তাদের বুদ্ধিজীবী সমাজ। ব্যতিক্রমীরা অতীব সংখ্যালঘু।
সম্প্রতি 'নিউ ইয়র্ক টাইমসে' এক উসকানিমূলক সংবাদে বলা হয়েছে, 'বিদ্রোহীদের হাত থেকে লিবিয়ার কয়েকটি শহর গাদ্দাফি বাহিনী দখল করে নিয়েছে।' এ খবরে বিচলিত ওয়াশিংটন। তাদের জনদরদ উথলে উঠেছে। এ সংঘাতে সাধারণ মানুষের হতাহত হওয়ার সংবাদ ওবামা প্রশাসনকে এতটা বিচলিত করেছে যে লিবিয়ায় সামরিক হামলার বিষয়টা নীতিনির্ধারকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমেই নানা ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আমরা গাদ্দাফির সমর্থক নই, বরং গণতন্ত্রের রীতিনীতি রক্ষা পাক, সেটাই চাই এবং তা সমগ্র বিশ্বপরিসরে। আমরা চাই যেমন গণজাগরণে, তেমনি বিশ্ব মোড়লদের আচরণে 'গণতন্ত্র রক্ষা পাক'। আজ লিবিয়ায় প্রতিবাদী জনগণের কষ্টে যুক্তরাষ্ট্রের যে উদ্বেগ, আমাদের প্রশ্ন ১৯৭১ সালে তাদেরই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশে ইয়াহিয়া বাহিনীর গণহত্যার ঘটনায় সে উদ্বেগ কোথায় ছিল? তারা তো তখন ছিল পাকিস্তানি হত্যাকারীদের দোসর এবং সমর্থক।
ওয়াশিংটন তখন পাকিস্তান-প্রীতিতে অন্ধ হয়ে গণ-অভ্যুত্থানের বাস্তবতাকে অস্বীকার করেছে। চরম মানবিক দুর্দশা অগ্রাহ্য করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান থেকে সদরুদ্দিন আগা খান, নিঙ্ন-কিসিঞ্জার তো দূরের কথা, উদ্বাস্তু বাঙালির মরণদশা আর স্থানীয় বাঙালির রক্তাক্তদর্শীর প্রতিবেদন হাতে পেয়ে এবং স্বচক্ষে দেখেও পাকিস্তানি জান্তাকে সামলাতে চেষ্টা করেনি। বরং পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রাখার চেষ্টায় সংঘটিত সব রকমের বর্বরতা তাদের সমর্থন পেয়েছে।
এমনকি একাত্তরের শেষ দিকে অনেক রক্ত ও লাঞ্ছনার বিনিময়ে বাঙালি জনগণের আকাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্রী স্বদেশ অর্জন যখন নিশ্চিত, তখন ওয়াশিংটন রণতরী পাঠিয়ে পাকিস্তানি ঘাতকদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়েছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি জান্তার গণহত্যা তাদের গণতান্ত্রিক চেতনা বা মানবিক বোধ স্পর্শ করেনি। কারণ বাংলাদেশকে সমর্থনের পেছনে তাদের প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত ছিল না, বরং তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ ছিল পাকিস্তানের জন্য। ভাগ্যিস, সোভিয়েত সমাজবাদী শক্তি তখনো সজীব এবং তারা বাংলাদেশের মুক্তির পক্ষে, তাই যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী-হুমকি স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় ঠেকাতে পারেনি।
তাই লিবিয়া আক্রমণের এবং গাদ্দাফিকে হটানোর হুমকি যে ওয়াশিংটনের আপন রাজনৈতিক স্বার্থে এবং লিবীয় জনগণের দুর্দশার জন্য নয়, তা বুঝতে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সাধারণ বুদ্ধিই সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
স্বভাবতই বিশ্বের গণতন্ত্রকামী একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আবারও আমার প্রশ্ন_অন্য দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী হামলার চিন্তা গণতন্ত্রের কোন ধারায় পড়ে? যুক্তরাষ্ট্র তো নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলেই দাবি করে এবং তাদের বহু খ্যাত সংবিধানও একই কথা বলে। তাহলে কেন সংবিধান লঙ্ঘন করে তাদের স্বৈরাচারী আচরণ? গাদ্দাফি তো ভিনদেশ আক্রমণ করতে যাননি। তাঁকে জীবিত বা মৃত ধরার জন্য পুরস্কার ঘোষণা জাতিসংঘের কোন আইনে পড়ে? নৈতিকতার কোন বিধানে পড়ে? ওয়াশিংটনকে এটাই আমাদের জিজ্ঞাসা।
এ পর্যন্ত অর্থাৎ ১২ মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, ইতালি তো একপায়ে খাড়া। এখন ফরাসি সরকারও লিবিয়ার সরকারবিরোধী বিদ্রোহী সংগঠন ন্যাশনাল কাউন্সিলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নিছক গণতন্ত্রের নীতি নয়, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কারণ। কই, একাত্তরের বাংলায় বিপুল জনযুদ্ধকে তো রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি তৎকালীন ফরাসি সরকার, মুজিবনগর সরকারকে সমর্থন জানায়নি। স্বৈরশাসনের বর্বরতার বিরুদ্ধে সেটাও ছিল বাঙালি জনযুদ্ধ এবং জনযুদ্ধের প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার। ওবামার গণতন্ত্রবিরোধী যাত্রা এবার সহজ হবে।
আর এ ধরনের দুষ্কর্মে ওয়াশিংটন বরাবর উদারনৈতিক গণতন্ত্রী নামে পরিচিত ব্রিটেনকে নিকটসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে_শাসন লেবার বা টোরি যে দলেরই হোক। মিথ্যা অভিযোগে ইরাক আক্রমণের মদদদাতা টনি ব্লেয়ারের কুখ্যাতি তো সর্বজনবিদিত। এবারও গাদ্দাফিকে কোণঠাসা করতে বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দিতে ইইউর প্রতি ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আহ্বান কাজে পরিণত করে ইউরোপ হয়তো প্রমাণ করে আগ্রাসনের অন্যায়ে ওদের সব শিয়ালের এক রা। এমন ঘটনা অতীতেও দেখা গেছে। দেখা যাক স্বৈরাচারী একনায়ক গাদ্দাফি বাঁচে কি মরে? ইঙ্গ-মার্কিন মদদে বহু ঘাতক স্বৈরাচারী কিন্তু দশকের পর দশক চরম নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটিয়ে দেশ শাসন করেছে, তখন কোনো রা করেনি।

লেখক : ভাষাসৈনিক, কবি, গবেষক, ভাষাবিদ

No comments

Powered by Blogger.