বিএনপির কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা আহবান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দলের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গতকাল কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আলোচনার পথ খোলা।


গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আলোচনা হতেই হবে। তবে সেই আলোচনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা নিয়ে নয়, হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দলের বিকল্প কোনো প্রস্তাব থাকলে তা তারা উপস্থাপন করতে পারে।
তবে সূত্র জানায়, বৈঠকে জোটের শরিক দলগুলো
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে এখনই আলোচনার পক্ষে মত দিলেও জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ বলেছে, সংলাপ এখনই নয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি। নির্বাচনের এক বছর আগে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সংসদ উপনেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও জোটের প্রধান আওয়ামী লীগের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শরিক দলের নেতাদের কাছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা উত্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৈঠকে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বলেন, বিরোধী দলকেও তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে। তারপর আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পেঁৗছানো যাবে।
বৈঠকে রাশেদ খান মেনন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে জোটের শরিক ১১ দলের বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তাঁরা। তবে দ্রুত সরকারি ও বিরোধী দলের সংলাপের মাধ্যমে এর রূপরেখা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। সরকারকেই সংলাপ শুরুর উদ্যোগ নিতে হবে বলে মত দেন তিনি।
সূত্র জানায় বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় সংসদ সদস্যদের বৈঠকের প্রস্তাব দেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের আবদুল জলিল ও রাশেদ খান মেননের আপত্তিতে সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে আইনসম্মতভাবে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। কোর্টের রায় বাস্তবায়ন ছাড়া গণতান্ত্রিক সরকারের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। তবে আলোচনার পথ খোলা আছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয়, গণতন্ত্র অনুযায়ী সেভাবেই দেশে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্যান্য সহযোগী প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদ্ধতি কী হবে বৈঠকে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ ব্যাপারে বিরোধী দলের কোনো প্রস্তাব থাকলে তারা দিতে পারে।'
বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচনের আগে যেকোনো ধরনের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য ১৪ দলকে আরো শক্তিশালী করার এবং তৃণমূল পর্যন্ত ঐক্যকে বিস্তৃত করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ ছাড়া ঐক্যবদ্ধভাবে পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
'আওয়ামী লীগের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে'_গণমাধ্যমে এ কথা বলার মাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে 'বিভ্রান্তিমূলকভাবে' উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেননি আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হবে। বতর্মানে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আছে। এই মহাজোট সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আপনারাই যদি নিউজ এডিট করে দেন, তাহলে জনগণ ও বিরোধী দল আমাদের কথাগুলো জানবে কিভাবে?'
সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস সংকট নিয়ে শরিক দলগুলোর নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সরকারকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে তাঁরা ধানের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও সারের দাম আর না বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম পরবর্তী বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতি দাবি করেন। বৈঠকে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, একটি চক্র দেশকে অস্থিতিশীল করতে গার্মেন্ট সেক্টরে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। এ বিষয়েও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, আবদুল জলিল, কাজী জাফরুল্লাহ, মোহাম্মদ নাসিম, মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির আনিসুর রহমান মলি্লক, কামরুল আহসান, জাসদের শরিফ নুরুল আম্বিয়া, মঈন উদ্দীন খান বাদল, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান সেলিম, ন্যাপের অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইসমাইল হোসেন, গণ-আজাদী লীগের হাজি আবদুস সামাদ, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের অসিত বরণ রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.