এসি শহীদুলকে রক্ষার চেষ্টা অবশেষে সাময়িক বরখাস্ত

প্রথম আলোর তিন আলোকচিত্র সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় অভিযুক্ত তেজগাঁও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) শহীদুল ইসলামকে রক্ষায় গতকাল দিনভর নানা রকম তৎপরতা চালায় পুলিশ প্রশাসন। তবে সংবাদকর্মীদের ক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত তাঁকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।


এর আগে তাঁকে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবে বদলি করা হয়েছিল। পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়।
গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রীদের বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের নির্মমতার শিকার হন প্রথম আলোর তিন আলোকচিত্র সাংবাদিক খালেদ সরকার, জাহিদুল করিম ও সাজিদ হোসেন। তাঁরা বর্তমানে ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন।
সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার পরপরই সাংবাদিকেরা বিক্ষোভ করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেন। সাংবাদিকদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারই ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশিকে প্রধান করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়; আর ঘটনার মূল হোতা এসি শহীদুলকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবিতে গতকাল সকালে সাংবাদিকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ চলার সময়ই সাংবাদিকদের নির্যাতনের ঘটনায় প্রত্যাহার করা মূল পুলিশ কর্মকর্তাকে আবার স্বাভাবিক দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র জানায়, ঘটনার পর থেকে শহীদুলকে বাঁচাতে নানামুখী তৎপরতা চালান পুলিশ কর্মকর্তারা। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে আড়াল করতে ঢাকা থেকে অন্যত্র বদলির পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে দ্রুততম সময়ে তাঁকে রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বদলি করা হয়। দুপুরের দিকে এ খবর প্রচারিত হওয়ার পর সাংবাদিকেরা পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান। তাঁরা অভিযোগ করেন, ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তাঁকে নতুন কর্মস্থলে বদলি করার ঘটনা দুঃখজনক। কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে এই ক্ষোভের কথা জানান। তাঁরা মহাপরিদর্শককে বলেন, ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের কমিটি করেছে ডিএমপি। সেই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই তাঁকে বদলি করা মানে তাঁকে পুরস্কৃত করা। এ ছাড়া তিন পার্বত্য জেলায় সরকারি কর্মকর্তারা বিশেষ সুবিধাও পেয়ে থাকেন। সেই সুবিধা দিয়ে তাঁকে বদলি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এরপর পুলিশ প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
রাতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শহীদুলের বদলি বাতিল করে তাঁকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ ঘটনায় গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহীদুলের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর বাড়ি রংপুর শহরের শাপলা চত্বরের হাজীপাড়ায়। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাবা আবদুস সালাম মারা গেছেন। মায়ের নাম সখিনা বেগম। রংপুর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কারমাইকেল কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তিনি সহসম্পাদক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষের বেধড়ক মারধরের শিকার হয়ে শহীদ শামসুল হক হল থেকে বিতাড়িত হয়ে ঈশা খাঁ হলে আশ্রয় পান। ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশে বদলি হয়ে আসেন। তেজগাঁও বিভাগে যোগ দেন এ বছরের ২২ মার্চ। এর আগে তিনি র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন। সেখানেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে শহীদুল কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

No comments

Powered by Blogger.