খোলা চোখে-বিদায় আন্দ্রেই ভজেনসিয়েন্স্কি by হাসান ফেরদৌস

সাতাত্তর বছর বয়সে দেহত্যাগ করলেন আন্দ্রেই ভজেনসিয়েনিস্ক (১৯৩৩—২০১০)। তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু—ইভেগনি ইভ্তুশিয়েনেকা ও বেলা আখ্মাদুলিনাকে নিয়ে তাঁরা তিনজন ছিলেন আধুনিক রাশিয়ার সেরা কবি। আধুনিক রাশিয়া কথাটা বলা বোধ হয় ঠিক হলো না। কবি হিসেবে তাঁদের সেরা সময় গেছে সোভিয়েত জমানায়।


এমন দিনও গেছে যখন ইভ্তুশিয়েনেকা বা ভজেনসিয়েনিস্কর কবিতা শুনতে পুরো স্টেডিয়াম উপচে মানুষ জড়ো হয়েছে। তা দেখে আরেক রুশ কবি আন্না আখ্মাতোভা সম্ভবত কিঞ্চিৎ ঈর্ষার সঙ্গেই বলতেন, ‘এরা হচ্ছে স্টেডিয়ামের কবি।’ সোভিয়েত পলিটব্যুরোর সদস্য আনাস্তাস মিকোয়ান একবার সবিস্ময়ে বলেছিলেন, ‘এই প্রথম দেখছি রুটি বা মাংসের জন্য নয়, লোকে লাইন দিচ্ছে কবিতা শোনার জন্য।’ এসব কবির বই ছাপা হতো ২৫, এমনকি ৫০ হাজার কপি। কোনো কোনো বই এক লাখ কপিও ছাড়িয়ে গেছে। এ হচ্ছে তখনকার কথা, যখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে বলা হতো পুলিশি রাষ্ট্র। সব কথা খোলামেলা বলা যেত না, বলতে হতো ইঙ্গিতে, প্রতীকের সাহায্য নিয়ে। এ কাজটা কবিদের চেয়ে ভালো আর কে করতে পারে!
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার পর অনেক কিছুই বদলে যায়। কবিতা ব্যাপারটা তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে, কবিরাও। ভজেনসিয়েনিস্কর শেষ দিকের কবিতার বইগুলো ছাপা হতো কুল্লে এক হাজার। কবিতা লেখার ব্যাপারেও উত্সাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। শব্দের কবিতার বদলে রেখা ও ছবিতে কবিতা লেখায় সময় কাটাতেন বেশি। গান লিখতেন, একটি বেশ জনপ্রিয় রক অপেরাও লিখেছিলেন। প্লেবয় পত্রিকার রুশ সংস্করণের তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান লেখক। ফিল্ম বানানোর কথাও বলতেন, যদিও শেষ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছুই তাঁর কাছ থেকে আসেনি। নব্য রাশিয়ায় তিনি কবিতা যে লেখেননি তা নয়, কিন্তু তাঁর সেরা সময় গেছে সোভিয়েত আমলে। দেশের মানুষ যখন একনায়কতন্ত্রের শিকার, ভজেনসিয়েনিস্ক তখন কবিতায় মালা গেঁথেছেন। আহ্, কী অপূর্ব সে মালা। সে কথায় পরে আসছি।
রুশ কবিতার এমন হতদশা কেন, এ কথাটা খোদ ভজেনসিয়েনিস্ককে জিজ্ঞেস করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সম্ভবত ১৯৯৪ সালে নিউইয়র্কে তিনি এসেছিলেন তাঁর নতুন কবিতার বই নিয়ে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরে রুশ কাব্যপ্রেমী কয়েকজনের সঙ্গে আড্ডাও দিয়েছিলেন। সেই আড্ডায় তাঁকে রাখঢাক ছাড়াই জিজ্ঞেস করেছিলাম, হলো কী রুশ কবিতার? যখন তোমাদের গলায় কমিউনিজমের ফাঁস, কী সব দারুণ কবিতা লিখেছ। আর এখন, যখন তোমরা দৃশ্যত স্বাধীন, যা খুশি লিখতে পার, তখন ভালো কবিতা আর বের হয় না। কারণটা কী?
কিঞ্চিৎ ভেবে নিয়ে, কিছুটা নিম্নস্বরে ইংরেজিতে ভজেনসিয়েনিস্ক বললেন, ‘আই থিঙ্ক, রিপ্রেশন ইজ গুড ফর পোয়েট্রি।’ কবিতার জন্য রাজনৈতিক নিপীড়ন মন্দ কিছু নয়।
‘রিপ্রেশন’ বলতে যা বোঝায়, ভজেনসিয়েনিস্ককে তা কখনোই সহ্য করতে হয়নি। জেল-জুলুম তো নয়ই, দেশ থেকে বহিষ্কারের হুমকিও তাঁকে সহ্য করতে হয়নি। একবার মাত্র নিউইয়র্কে ‘পেন’-এর এক সভা উপলক্ষে তাঁর ভ্রমণ ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সরকারি প্রেস রিলিজে বলা হয়েছিল, তিনি অসুস্থ, যদিও অসুখটা ছিল মনের, দেহের নয়। কার্যত, তিনি বা তাঁর অন্য দুই জনপ্রিয় ও সফল সতীর্থ সোভিয়েত ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করেই কবিতা লিখেছেন। ইভ্তুশিয়েনেকা তাঁর আত্মজীবনীতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বেলা আখ্মাদুলিনা যথেষ্ট দেশপ্রেম না দেখানোর জন্য তাঁর কবিবন্ধুদের ভর্ত্সনা করেছিলেন। আর ভজেনসিয়েনিস্ক চাপে পড়ে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার ওপরে ভালো কিছু আর নেই। তবে এ কথাও ঠিক, তাঁরা সবাই-ই দেশের ভেতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করেছেন, চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত হামলার সমালোচনা করেছেন, ভিন্নমতাবলম্বী বিজ্ঞানী আন্দ্রেই সাখারভের মুক্তি দাবি করে পিটিশনে স্বাক্ষরও করেছেন। কিন্তু এসব করতে গিয়ে ভজেনসিয়েনিস্ক বা তাঁর সতীর্থদের সোভিয়েত-ব্যবস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করতে হয়নি, যেমন চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আলেকসান্দর সোলিঝনিিসন। কবি হিসেবে তাঁরা প্রতিভাবান, এ কথা সোভিয়েত নেতারাও বুঝতেন। তাঁরা হিসাব করে দেখেছিলেন, এমন লোকদের জেলে না পুরে বরং দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতে দেওয়া যাক। তাহলে মুখ উঁচিয়ে বলা যাবে, কে বলেছে সোভিয়েত ইউনিয়নে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এই দেখো, তোমাদের চোখে যাঁরা আধুনিক রাশিয়ার কণ্ঠস্বর, তাঁরা যা খুশি লিখছেন, যেখানে খুশি যাচ্ছেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে সব সময়েই শাসকগোষ্ঠী তাদের সেরা কবি, গায়ক বা শিল্পীদের কাছ থেকে বশ্যতা আদায়ের চেষ্টা করেছে। অনেক কবি বা গায়ক স্বেচ্ছায় রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা গ্রহণও করেছেন। মোত্সার্ত বা শেক্সপিয়র, দা ভিঞ্চি বা আমাদের গালিব, তাঁরা কেউই এই নিয়মের ব্যতিক্রম নন। নিজ থেকেই রাজন্যবর্গের দরজায় গিয়ে তাঁরাই কড়া নেড়েছেন। কিন্তু সেই রাজা-রাজড়ারা কেউই ‘বড় ভাইয়ের’ মতো তাঁদের মাথার ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকেননি, কী বলল, কী লিখল, কোন ছবি আঁকল, কোন গান গাইল, তার হিসাব নেননি। যেমনটি ঘটে সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থায়। রুশ জার আমলে ভয়াবহ স্বেচ্ছাচারিতা বিরাজ করত, কিন্তু তারই ভেতর জন্মেছিলেন পুশকিন, লেরমন্তফ, গোগল, দস্তয়েইফস্কি ও নেক্রাসফ। সোভিয়েত-ব্যবস্থায় ‘সবকিছু রাষ্ট্রের জন্য’ স্লোগান তুলে নিয়ম করে দেওয়া হলো কী লেখা হবে, কীভাবে লেখা হবে। ভ্লাদিমির নবোকফ (তাঁর লেকচারস অন রাশিয়ান লিটারেচার গ্রন্থে) সবিস্ময়ে লিখেছেন, জার আমলে ভয়াবহ সেন্সর-ব্যবস্থা ছিল সন্দেহ নেই, কিন্তু ‘রাষ্ট্র যা সঠিক মনে করে তার উত্পাদনের জন্য একটি পুরোদস্তুর সাহিত্য করপোরেশন সোভিয়েত আমলের আগে কখনোই ঘটেনি। শিল্প সব সময়েই ভিন্নপথে এগোয়, নতুনকে আবিষ্কার করে, সম্ভাবনার সব সীমানাকে চ্যালেঞ্জ করে, এটাই শিল্পের নিয়ম। কিন্তু সোভিয়েত আমলে ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করলেই লেখক বা শিল্পী সমর্থন হারাতেন। রাষ্ট্রের সমর্থন হারানো মানে চাকরি খোয়ানো, প্রকাশনার সুযোগ হারানো, বিদেশে যাওয়ার পথ আটকানো। কোনো কোনো প্রতিবাদী লেখক বা কবি যাঁরা সে নিয়ম মানতে রাজি হননি, আপস করার বদলে তাঁরা লেখাই বাদ দিয়েছেন। যেমন বোরিস পাস্তেরনাক। আবার কেউ কেউ রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে আপস করে তা থেকে নিজের জন্য, কখনো কখনো সতীর্থ লেখকশিল্পীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। যেমন মাকিসম গোর্কি।’
ভজেনসিয়েনিস্ক এই দুই ধরনের লেখকের বাইরে। কবি হিসেবে তিনি বরাবর নিয়ম-বিরুদ্ধ, আধুনিক। কিন্তু তাই বলে নিয়মকে প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যানের জন্য যে সাহস চাই, তা তাঁর ছিল না। ফলে নিয়ম ভাঙার খেলা তিনি খেলতেন প্রতীকের সাহায্যে, ইঙ্গিতময়তার মাধ্যমে। এ কথা ঠিক, তাঁর কবিতায় রাজনীতির অভাব নেই, তাঁর বিখ্যাত যুদ্ধবিরোধী কবিতা ‘গয়া’ সর্বার্থেই রাজনৈতিক। ক্রিমিয়াতে ইহুদি হত্যার ওপর অসাধারণ দীর্ঘ কবিতা ‘দি ডিচ’ লিখেছিলেন। কিন্তু তিনি ঠিক সেই রকম খোলামেলা রাজনৈতিক লেখক ছিলেন না, যেমন ছিলেন তাঁর বন্ধু ইভ্তুশিয়েনেকা। সমকালীন ঘটনা বা চরিত্র তাঁর কবিতায় কার্যত অনুপস্থিত। কবিতা তাঁর জন্য ছিল কেবল শ্রুতিনির্ভর নয়, দৃষ্টিনির্ভর শিল্প। দৃষ্টিগ্রাহ্য ইমেজ ও নতুন নতুন ধ্বনিপ্রকরণ সৃষ্টির জন্য তিনি ছিলেন অতুলনীয়। ‘গয়া’ কবিতায় ব্যবহূত মেটাফোর তাই একদিকে যেমন দৃশ্যমান, তা তেমনি শ্রুতিমান। এই দুইকে মিলিয়ে না দেখলে ও শুনলে—এই কবিতার মুনশিয়ানা বোঝা যাবে না। স্থাপত্যকলার ছাত্র হিসেবে জটিল নকশা নির্মাণের কলাকৌশল তাঁর আয়ত্তে ছিল। কবিতায় সেই কলাকৌশল যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি থাকত সামঞ্জস্যপূর্ণ ধ্বনিপ্রকরণ। প্রথাগত রুশ কবিতায় তাঁর অন্তর্গত বাণী অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভজেনসিয়েনিস্কর প্রস্তাবিত নয়া কাব্য-ধারণায় কবিতার আঙ্গিক ও বাহ্যিক ধ্বনি, অর্থাৎ তাঁর ডিজাইন ও আর্কিটেকচার অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। তাঁর কবিতার এই ধ্বনিচাতুর্যের জন্য ইংরেজ কবি অডেন ভজেনসিয়েনিস্কর কবিতার নাম দিয়েছিলেন ‘ভারবাল আরটিফ্যাক্টস’। একটা টেবিল বা মোটরসাইকেল যেমন কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে নির্মিত হয়, ভজেনসিয়েনিস্কর কবিতাতেও সে দক্ষতার সকল লক্ষণ বর্তমান। অডেন সাবধান করে দিয়েছিলেন, ভজেনসিয়েনিস্কর কবিতা পড়তে এসে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ খুঁজতে এসো না। শুধু কবিতার স্বার্থেই তাঁকে আবিষ্কারের চেষ্টা করো। গঠনশৈলী ও নির্মাণ দক্ষতার জন্য একমাত্র অন্য যে রুশ কবিকে তাঁর সঙ্গে তুলনা করা চলে, তিনি হলেন বোরিস পাস্তেরনাক। এর পেছনে একটি কারণও রয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভজেনসিয়েনিস্ক নিজের কয়েকটি কবিতা পাস্তেরনাকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। জ্যেষ্ঠ কবি তা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং ভজেনসিয়েনিস্ককে নিজের শিষ্য হিসেবে স্বীকৃতিও দিয়েছিলেন। কিঞ্চিৎ পরিণত বয়সে ভজেনসিয়েনিস্ক অবশ্য তাঁর গুরুর শিক্ষানবিশি প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, পাস্তেরনাকের প্রভাবে নিজের কণ্ঠস্বরই তিনি হারিয়ে ফেলছিলেন, এমন একটি ভয় অকস্মাৎ তাঁকে আক্রান্ত করে।
অরাজনৈতিক বলছি বটে, কিন্তু ভজেনসিয়েনিস্কর খ্যাতি বা কুখ্যাতির একটা বড় কারণই ছিল ১৯৬২ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিকিতা খ্রুশ্চভের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ। সোভিয়েত নেতা রুশ লেখক ও শিল্পীদের ক্রেমলিনে ডেকেছিলেন তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য। সেখানে ভজেনসিয়েনিস্কর নাম ধরে কশে বকে দেন খ্রুশ্চভ। তাঁর দিকে আঙুল তুলে দেখান, ‘ওই দেখুন, আরেক পাস্তেরনাক এসেছেন।’ গলা সপ্তমে চড়িয়ে খ্রুশ্চভ তাঁকে পরিহাসের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী, আপনার বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট চাই? ঠিক আছে, তাই হবে। তা নিয়ে জাহান্নামে চলে যান।’ সে কথার জবাবে নিম্নকণ্ঠে, যেন নিজেকেই বলছেন, এভাবে ভজেনসিয়েনিস্ক উচ্চারণ করলেন, ‘আমি একজন সোভিয়েত নাগরিক।’ ১৯৯৪ সালে যখন এই কবি নিউইয়র্কে বেড়াতে এসেছিলেন, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন সেই ঘটনার একটি ভিডিও। সোভিয়েত রাষ্ট্রের পতনের পর রাষ্ট্রীয় মহাফেজখানা থেকে তা উদ্ধার করা হয়। কিঞ্চিৎ শ্লাঘার সঙ্গেই সে ভিডিও তিনি আমাদের দেখিয়েছিলেন।
সে ঘটনার পর আরও বার দুয়েক সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর ঠোকাঠুকি লাগে, তার একটি তো রীতিমতো নাটকীয়। ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত লেখক ইউনিয়ন যেভাবে দেশের লেখকদের ওপর তাদের নিয়মের স্টিমরোলার চালাচ্ছে, তার প্রতিবাদ করে একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লিখে সাড়ম্বরে তা তাগানকা থিয়েটারে পড়ে শুনিয়েছিলেন ভজেনসিয়েনিস্ক। আর কী, লেখক ইউনিয়নের নেতারা রেগে আগুন। তাঁরা ভজেনসিয়েনিস্ককে ডেকে পাঠিয়ে অবিলম্বে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিলেন। সে নির্দেশ অমান্য হলে তাঁকে লেখক ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হবে, এমন ধমক দেওয়া হলো। ভজেনসিয়েনিস্ক এক কথায় বলে দিলেন, ‘আপনারা যা খুশি করতে পারেন, আমি আমার কথা বিন্দুমাত্র বদলাব না।’
আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক নাট্যকার আরিস্তফানেস তাঁর লেখা নাটক ফ্রগস-এ কবিকে ‘সেনাপতি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘কবিকে আমার চাই। কারণ, যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা কেবল তাঁরই আছে।’ ভজেনসিয়েনিস্ক নিজেকে কখনো সেনাপতি ভাবেননি, নিজের জন্য তেমন কোনো ভূমিকাও বিবেচনা করেননি। তিনি জানতেন কবিতা লেখা তাঁর কাজ। ‘কবিতাই একমাত্র আশা।’ এমন কথাও তিনি বলেছিলেন। এমন একজন কবি চলেন গেলেন, সঙ্গে পৃথিবীর আলো কিছুটা হলেও ম্লান হলো।
নিউইয়র্ক, ৭ জুন ২০১০
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.