কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে এখনই-জলকামানের পানি

পুলিশ জনগণের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু কোনো আন্দোলন হলে তারা কেন যেন খুব একটা বন্ধুসুলভ আচরণ করে না। নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে তারা আন্দোলনকারীদের ‘টাইট’ দিয়ে থাকে। যেমন—টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, গুলি, জলকামান ইত্যাদি! অনেক ক্ষেত্রেই আন্দোলন থামাতে পুলিশের প্রথম পছন্দ হয়ে দাঁড়ায় জলকামান।


ঐতিহ্যবাহী এই পদ্ধতি বেশ কার্যকর। অনেকটা ‘সাপ মরল, লাঠিও ভাঙল না’ টাইপ অস্ত্র। আন্দোলন থামল, মানুষও মরল না। চমৎকার ব্যবস্থা। কিন্তু দেশে কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা প্রশ্ন তোলা ছাড়া আর তেমন কিছু করেন না। তেমনই কিছু মানুষ হচ্ছেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা। পুলিশের জলকামান ব্যবহার নিয়ে যথারীতি প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। নদীমাতৃক দেশ হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ‘পানি নিয়ে ভাবনা, আর না আর না’—এই গান বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় পানির জন্য মানুষ এবং বালতি, কলস ও পাতিলের বিশাল লাইন। এমন ভয়াবহ পানি-সংকটের মধ্যেও পুলিশ ভাইয়েরা নিশ্চিন্তে জলকামান থেকে পানি ছুড়ে মারছেন। কোনো মানে হয়? এত এত অস্ত্র থাকতে পানি কেন? দেশের চলমান পানি-সংকটকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এভাবে পানির অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আগে থেকে ঘোষণা দিলে জনগণ জলকামান থেকেই পানি সংগ্রহ করতে পারত। পানিহীন মানুষকে পানি দিয়ে সত্যিকারের বন্ধু হতে পারত পুলিশ। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। এখানেই শেষ নয়, আরও প্রশ্ন উঠেছে। এমনিতেই তীব্র দাবদাহে জনগণ অতিষ্ঠ। তার ওপর দেশে পানি-সংকট। তার ওপর পুলিশ জলকামান থেকে মারে গরম পানি! খুবই হতাশাজনক। আরে ভাই, পানি যদি মারতেই হয়, ঠান্ডা পানি মারেন। গরমে অতিষ্ঠ আন্দোলনকারীদের ওপর যদি বরফশীতল পানি মারা হয়, তাহলে আকস্মিক প্রশান্তিতে তারা আন্দোলনের কথা ভুলে গিয়ে মেতে উঠবে জলকেলিতে। অথচ এই সহজ বিষয় কর্তৃপক্ষের মাথাতেই আসে না। তা ছাড়া জলকামানে কোন পানি ব্যবহার করা হয়, কিংবা কামানের পানি বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত কি না, তারও উল্লেখ নেই কোথাও। অতএব, বিষয়টা পানির মতো সহজ। অবিলম্বে জলকামানের পানির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আর যদি জলকামানে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করা না যায়, তাহলে জলকামানগুলো এফডিসিতে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। শীতকালে তীব্র শীতের মধ্যে বৃষ্টিভেজা গানের শুটিং করতে নায়িকাদের বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়। জলকামানগুলো সেখানে সার্ভিস দিলে নায়িকাদের দুর্ভোগ দূর হবে, সেই সঙ্গে বাঁচবে শত শত আন্দোলনকারী। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাববে।

No comments

Powered by Blogger.