জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা বন্ধ করুন-আবারও গাছের মৃত্যুপরোয়ানা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্ম আসে, আর আসে একদল গাছের মৃত্যুপরোয়ানা। গ্রীষ্মকালীন দীর্ঘ ছুটিতে ক্যাম্পাস যখন শিক্ষার্থীশূন্য, বরাবরের মতো এ সময়টায় গাছ কাটার হিড়িক লাগে। গত কয়েক বছরে এমনটাই দেখা গেছে। গত বুধবারের প্রথম আলোয় এ রকম এক সংবাদে নির্বিচারে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটার বিরুদ্ধে শিক্ষক ও


শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কথা প্রকাশিত হয়। বিষয়টি যেকোনো বিবেচক মানুষের জন্য কষ্টদায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে চরমভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
যে কাজটি হামেশাই বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহল করে যাচ্ছে, কেবল কিছু অর্থপ্রাপ্তির আশায় পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর সেই কাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করলে ভরসা রাখার আর জায়গা থাকে না। প্রথম আলোয় প্রকাশিত ওই সংবাদে দেখা যাচ্ছে, প্রশাসনের তরফ থেকে কেবল ক্ষতিকর ১৫-২০টি গাছ কাটার কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত ছুটি শুরুর প্রথম দিন ১ জুন থেকে ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত মোট ৫০টিরও বেশি গাছ কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ঝাউ ও কাঁঠালের মতো উপকারী গাছও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অতীতেও এ রকম ‘পরিবেশবান্ধব নয়’ কিংবা ‘কাষ্ঠমূল্য কমে যাচ্ছে’ অজুহাত দিয়ে সেগুন, কৃষ্ণচূড়া, দেবদারুসহ নানা পরিবেশবান্ধব এবং মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, শিক্ষার্থীরাই গাছ কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। তাই কি ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীশূন্য ক্যাম্পাসকেই বৃক্ষনিধনের উপযুক্ত মৌসুম ভাবা হয়েছে?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আকর্ষণ, এর সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ। অথচ সেখানে সামাজিক বনায়নের নামে পরিবেশ ও পাখপাখালিবান্ধব দেশি গাছ কেটে একাশিয়া, আকাশমণিজাতীয় ক্ষতিকারক গাছ লাগানো হয়েছে। এখন আবার পরিবেশের নামেই সেগুলো কাটার কথা বলে উপকারী ও দৃষ্টিনন্দন সবুজ সাবাড়ের তোড়জোড় চলছে। এসব থেকেই বোঝা যায়, পরিবেশের থেকে গাছের ‘কাষ্ঠমূল্য’ই গাছ কাটার পেছনে প্রশাসনের উত্সাহের মূল কারণ। শিক্ষার্থীসহ সচেতন মানুষ যেখানে গাছ দেখলে প্রাণ দেখে, সেখানে গাছমাত্রই ‘কাষ্ঠমূল্য’, এমন প্রশাসকীয় দৃষ্টিভঙ্গির আমরা ঘোর বিরোধী। বড় গাছ কেটে ফুল গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবৃদ্ধির যুক্তি যে হাস্যকর ও কুযুক্তি, তা তাই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
আমরা আশা করব, প্রশাসন অবিলম্বে ‘সবুজ হত্যা’ বন্ধ করবে। একটি গাছও না কেটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ ও বৃক্ষপ্রেমের নজির স্থাপন করবে, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.