পাঁচ এমপির জামিন-ফখরুলসহ ২৯ জনের বিষয়ে রুল জারি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারসহ ১৮ দলীয় জোটের পাঁচ সংসদ সদস্যকে ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাবন্দি ২৯ জনকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, এর কারণ জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।


বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসানের বেঞ্চ গতকাল রবিবার এ আদেশ দেন। তবে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার জামিন আবেদনের বিষয়ে আজ সোমবার আদেশ দেবেন আদালত।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের কারাবন্দি ৩৫ নেতার জামিন আবেদনের ওপর গতকাল শুনানি শেষে এসব আদেশ দেওয়া হয়। মির্জা ফখরুলসহ ২৯ জনের বিষয়ে জারি করা রুলের জবাব এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে দিতে বলা হয়েছে। আগামী ১ জুন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল যে পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ।
পাঁচ সংসদ সদস্যের জামিনের বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেন, সংসদ সদস্যদের প্রাধিকারবিষয়ক আইনের ৭ ধারা অনুযায়ী সংসদ অধিবেশনের সাত দিন আগে থেকে সাত দিন পর পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা আদালতে উপস্থিতির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন।
জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন এম কে রহমান। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যরা কারাগারের বাইরে থাকলে এ সুবিধা পাবেন। কিন্তু এখন তো তাঁরা কারাগারেই রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কী হবে তা এই আইনে বলা নেই। সুতরাং এ সুবিধাটি তাঁরা পেতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে জয়নুল আবেদীন বলেন, খোকা মারাত্মক অসুস্থ। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
জবাবে আদালত বলেন, 'পত্রিকার প্রতিবেদনে হবে না, মেডিক্যাল সার্টিফিকেট আছে কি না। থাকলে দেন।' এ সময় জয়নুল আবেদীন মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিতে গেলে আদালত বলেন, এফিডেভিট করে দিতে হবে। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, সোমবার ছাড়া তা সম্ভব নয়। এরপর আদালত আজ দুপুর ২টায় শুনানির সময় নির্ধারণ করেন।
মির্জা ফখরুলসহ ৩৫ জনের জামিনের আবেদন গতকাল সকালে আদালতে উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ অন্য আইনজীবীরা। আদালত শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন দুপুর ২টায়। নির্ধারিত সময়ে আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত হন। তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহাবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তাঁকে সহযোগিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে ডাকা ২৯ এপ্রিলের হরতালের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগেও আরেকটি মামলা করা হয়।
ফখরুলসহ জোট নেতারা আগাম জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট তাঁদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ মেনে ফখরুলসহ ৩৩ জন ১৬ মে এবং একজন ২০ মে ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার হাকিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠান। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করলেও তাঁদের আবেদন খারিজ করা হয়। এ ছাড়া রুহুল কবির রিজভী ও কামরুজ্জামান রতনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। নিম্ন আদালত তাঁদের জামিন আবেদন খারিজ করেন। এই ৩৬ জনের মধ্যে ৩৫ জনের জন্য জামিন আবেদন করা হয়। জোট নেতা শেখ শওকত হোসেন নিলুর জন্য জামিন আবেদন করা হয়নি।
যাঁদের জামিনের আবেদন করা হয় তাঁদের মধ্যে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, কামরুজ্জামান রতন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ফজলুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাইফুল আলম নীরব, মীর সরাফত আলী সফু, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, রফিকুল ইসলাম মজনু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমীরুল ইসলাম খান আলীম, আনিছুর রহমান খোকন, ইয়াছিন আলী, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।
গতকাল শুনানির শুরুতে ব্যারিস্টার খোকনের আবেদন উপস্থাপন করেন আহসানুল করিম। তিনি বলেন, এ মামলাটি বানোয়াট। কারো বিরুদ্ধেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। নিম্ন আদালত এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়েই জামিন আবেদন খারিজ করেছেন।
এরপর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ওই দিন নাটোরের একটি আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন। আদালতের আদেশে সেখানে তাঁর ব্যক্তিগত হাজিরার কথা বলা আছে। কর্নেল অলি ও শফিউল আলম প্রধান সেদিন যথাক্রমে কঙ্বাজার ও পঞ্চগড়ে ছিলেন। তাঁদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। এসব দেখেই বোঝা যায়, এটি বানোয়াট মামলা।

No comments

Powered by Blogger.