ফলোআপ: একাত্তরের বীর মা এবং... by আনিসুল হক

গত ৮ মে ২০০৮ প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত আমার ‘শহীদ আজাদের ভ্রাতুষ্পুত্র শোয়েবের কথা’ লেখাটির ফলোআপ হলো এই লেখা। একাত্তরের এক বীর মায়ের সত্য কাহিনিটি আরেকবার বলে নিতে হচ্ছে। ষাটের দশকের ঢাকা। আজাদ ছিল তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ক্লাস সিক্সে পড়ে। আজাদের বাবা ছিলেন অনেক বড়লোক।


আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করলে আজাদের মা প্রতিবাদ হিসেবে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বস্তিতে গিয়ে ওঠেন। বহু কষ্টে ছেলেকে লেখাপড়া করান। আজাদ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে।
আজাদের বন্ধুরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলে সেও তাদের দলে ভিড়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট রাতে আজাদদের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালায়। আজাদের খালাতো/চাচাতো ভাই জায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়। আজাদকে সেনারা ধরে নিয়ে যায়। আজাদের মা আজাদের সঙ্গে দেখা করে বলেন, ‘শক্ত হয়ে থেকো, কোনো কিছু স্বীকার করবে না।’ আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চায়। মা পরদিন ভাত নিয়ে রমনা থানায় গিয়ে দেখেন, ছেলে নেই। আজাদ আর কোনো দিনও ফিরে আসেনি, এই মা ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, কোনো দিনও ভাত খাননি।
সেই শহীদ আজাদের ভ্রাতুষ্পুত্র, গুলিবিদ্ধ জায়েদের ছেলে শোয়েব। শোয়েবের বয়স এখন ২৪। সে ছিল তিতুমীর কলেজের ছাত্র। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয় বছর দুয়েক আগে। তার পরিবার দুই বছর ধরে চিকিৎসা চালায়। তারপর তাদের ক্ষমতা ফুরিয়ে আসে।
গত মাসে আমি ধানমন্ডির ডিফ্যাম হাসপাতালে শোয়েবের সঙ্গে দেখা করি। সে বলে, ‘কাকু, আমি বাঁচতে চাই।’
প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় শহীদ আজাদের ভ্রাতুষ্পুত্র শোয়েবের কথা নামে একটা লেখা বেরোলে লাখ আটেক টাকা জোগাড় হয়। যাঁরা এই সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ। শোয়েবকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। সে ভালো আছে।
কিন্তু হাসপাতালের বিল এসেছে অনেক বেশি। আরও লাখ ১৫ টাকা আমাদের সংগ্রহ করতেই হবে।
আসুন, মুক্তিযুদ্ধের এ বীর মায়ের কথা স্মরণ করে শোয়েবের চিকিৎসার এই অর্থটা আমরা জোগাড় করে দিই।
আপনিও কিছুটা সাহায্য করতে পারেন নিচের হিসাব নম্বরে: Modasser Ahmed Moheb, Brac Bank Gulshan Branch, AC no 1501101528270001।

No comments

Powered by Blogger.