তেজস্ক্রিয়তার গুজব

সবারই দৃষ্টি এখন জাপানের দিকে। ভূমিকম্প ও সুনামির পর সেখানকার পরমাণু চুলি্লতে বিস্ফোরণ ও তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে যাওয়ায় জনমনে নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওদিকে এক ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত জাপান আবার কেঁপে উঠেছে আরেকটি ভূমিকম্পে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬। বুধবার সকালে রাজধানী টোকিওতে এ ভূকম্পন অনুভূত হয়।


এতে শহরের দালানকোঠা ভীষণভাবে দুলে ওঠে বলে জানা গেছে। গত শুক্রবার জাপানের পূর্ব উপকূলে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের প্রভাবে প্রায় ৩৩ ফুট উঁচু সুনামি পূর্ব উপকূলে অনেক এলাকার বেশ কিছু ছোট-বড় শহর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করেছে। ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাপানের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর একটি। সেখানকার তিনটি চুলি্লতে বিস্ফোরণের ফলে বাতাসে তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আরো একটি চুলি্লতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়ে গেছে, তবে তা প্রতিরোধের জোর প্রচেষ্টা চলছে।
সমস্যাসঙ্কুল ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বুধবার সকালে সব কর্মীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তেজস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থেকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন গ্রাহকদের অনেকে বার্তা পেয়েছেন, জাপানে পারমাণবিক চুলি্ল বিস্ফোরণের প্রভাবে বাংলাদেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। হতে পারে এসিড বৃষ্টি। মাথার চুল পড়ে যেতে পারে, ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও ওই বার্তায় সতর্ক করা হয়। এসব বিপদ থেকে বাঁচার জন্য বৃষ্টিরোধক ব্যবস্থা নিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন বা সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এমন বার্তা ছড়িয়ে পড়ার পর জনজীবনে একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অবস্থানগত কারণেই এ আশঙ্কা নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জাপান বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিকে। আর এ সময়ে বাংলাদেশে দক্ষিণ দিক থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। স্বাভাবিক কারণেই জাপান থেকে বাতাসে বা মেঘে ভর করে কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ বাংলাদেশে আসার আশঙ্কা নেই। অনেকে চেরনোবিলের কথা ভেবেও শঙ্কিত হতে পারেন। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইউক্রেনে চেরনোবিলের পরমাণবিক দুর্ঘটনার পরও বাংলাদেশে তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পরে নরওয়েতে বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর বিষয়টি ধরাও পড়েছিল। আর জাপানে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে বা ছড়িয়েছে তার মাত্রা চেরনোবিলের তেজস্ক্রিয়তার চেয়ে কম। অন্যদিকে শুরুতেই জাপান তেজস্ক্রিয়তার কথা স্বীকার করে নেওয়ায় সবাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পেরেছে।
তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই আছে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ। নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন জাপান থেকে যাঁরা দেশে আসবেন, তাঁদের সঠিকভাবে পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে তাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন কি না। কিন্তু অহেতুক আতঙ্ক সৃষ্টি করা একেবারেই অনুচিত।

No comments

Powered by Blogger.