কালের আয়নায়-পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসলে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা সহজ হবে by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

বিএনপি নেত্রী শেষ পর্যন্ত আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন এটাই বড় কথা। সাংঘর্ষিক পথে গিয়ে তিনি দেশের কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারবেন না। সমঝোতার পথেই তাকে এগোতে হবে। এই সমঝোতার জন্য পূর্বশর্ত আরোপ করে নয়, খোলামনে খোলাখুলি আলোচনার জন্য বৈঠকে বসতে হবে।


সংসদে গিয়ে প্রস্তাব
রাখতে হবে



বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবশেষে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে কী শর্তে কী বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন তা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, 'আপনারা সংসদে আসুন, আপনাদের প্রস্তাব ও পরামর্শ দিন। আমরা খোলামনে আলোচনা করব।' সে ডাকে খালেদা জিয়া সাড়া দেননি। তিনি হরতাল ডেকেছেন। তাতে দাবি আদায় হয়নি। লাভের মধ্যে কিছু বাস ও গাড়ি পুড়িয়েছেন এবং ব্যবসায়ী সমাজ ও অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ধিক্কার কুড়িয়েছেন।
সম্ভবত এত ঢাকঢোল পিটিয়ে যে হরতাল ডাকা হয়েছিল তা নেত্রীর আশা পূরণ না করে তাদের চৈতন্যোদয় কিছুটা হলেও ঘটিয়েছে। তাই বৃহস্পতিবারের (১৬ জুন) সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তারা রাজি। তবে শর্ত হলো, সরকারকে বলতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। আলোচনা হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করতে হবে।
এই দাবিগুলো নিয়ে বিএনপি আগেই সংসদে যেতে পারত এবং পারত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে। সংবিধান সংশোধন প্রশ্নেও প্রস্তাব রাখার জন্য সংবিধান সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি বারবার তাদের ডাকছে। তারা যাচ্ছেন না। এভাবে গোসাঘরে খিল দিয়ে তো কোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যায় না। বিএনপি সংসদে গিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে যদি দেখে যে, সরকার তাদের কোনো পরামর্শ শুনতেই রাজি নয়, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সবকিছু একতরফা করতে চায়, তখন অবশ্যই তারা আন্দোলনের জন্য মাঠে নামবেন। তখন জনগণকেও তারা বোঝাতে পারবেন, আন্দোলন ছাড়া তাদের সামনে দ্বিতীয় পথ খোলা ছিল না।
কিন্তু বিএনপি তা করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বেরোবার পর সরকার এই ব্যবস্থা বাতিলের ইচ্ছা প্রকাশ করতেই বিএনপি এই ইচ্ছা প্রকাশটাকেই (সিদ্ধান্ত নয়) অজুহাত হিসেবে খাড়া করে একেবারে হরতাল ডাকার মতো চরমপন্থার আশ্রয় নিয়েছে এবং এখনই সরকার পতন ঘটানোর আন্দোলনের ডাক দিতে চেয়েছে। এটা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সম্পর্কে আদালতের রায় বেরোবার পর প্রধানমন্ত্রীরও তড়িঘড়ি একটা কথা বলে ফেলা উচিত হয়নি। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেকে সংশোধন করেছেন এবং বলেছেন, 'সরকার আলোচনার দ্বার বন্ধ করেনি। বিরোধী দল সংসদে এসে প্রস্তাব রাখুন। সরকার খোলামনে তা নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি আছে।' খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এই ডাকে তো সাড়া দেননিই, উল্টো বলেছেন, 'সরকার আগে পদত্যাগ করুন, তারপর সকল দলকে ডেকে আমরা আলোচনায় বসে ঠিক করব তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠন করা যায়, নির্বাচন কমিশন কীভাবে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী করা যায়। তারপর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাবে।'
বিরোধীদলীয় নেত্রীর এই দাবিগুলো ছিল বাড়াবাড়ির শামিল। একটি সরকার বিশাল গণম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় বসার হাফ টার্মও না যেতেই পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হারানো এবং কোনো অনাস্থা প্রস্তাব না ওঠা সত্ত্বেও এই ধরনের পদত্যাগ দাবি করার নজির গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় নেই। তাছাড়া সরকার ও বিরোধী দল কোনো জাতীয় সমস্যায় পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে_ এই দাবিও নতুন শোনা গেল।
খালেদা জিয়া এই দাবিগুলো তুলেছিলেন হরতাল ডাকার আগে চড়া গলায়। এখন তাদের দু'দফার হরতাল (অথবা ভয়তাল) হয়ে যাওয়ার পর ১৬ জুন বৃহস্পতিবার দলীয় অফিসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন নরম গলায় এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনারও ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। এটা বর্তমান পরিস্থিতির একটা উন্নতির দিক অবশ্যই। তবে প্রশ্ন হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকছেই এই দাবি আগে মেনে নিয়ে যদি সরকারকে আলোচনায় বসতে হয়, তাহলে আলোচনায় বসার দরকারটা কি? আর আলোচনা হবে কী নিয়ে? কেবল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন সেটাই কি হবে প্রধান আলোচনার বিষয়? এটা কি হরতাল ডাকার মতো একটা জাতীয় সমস্যা? সরকার যেমন বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে তারা খোলামনে আলোচনায় রাজি, তেমনি বিরোধী দলকেও খোলামনে আলোচনায় বসতে হবে, কোনো পূর্বশর্ত যোগ করে নয়। সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও বলা হয়নি, আগামী নির্বাচন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলোপ করে দিতে হবে। তারা আগামী আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থায় হতে পারে বলে রায় দিয়েছেন। সুতরাং বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক এই ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো দূর করে আরও দু'এক টার্ম এই ব্যবস্থা বহাল রাখতে সরকারের বাধা কোথায়? আবার বিরোধী দল কেন দাবি তুলছে, আগে এই ব্যবস্থা রাখা হবে একথা বলতে হবে, তারপর আলোচনা? যদি আলোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক দফায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এতটা কলুষিত করা হয়েছে যে, এখন নির্বাচন অনুষ্ঠান তদারকির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা দরকার অথবা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার খোলনলচে বদলাতে হবে, তাহলে তা করতে হবে। বিএনপি ব্যবস্থাটির এই সংস্কার চায় না। তাদের দাবি, ব্যবস্থাটি যেভাবে ছিল সেভাবে রেখে কেবল আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যার হওয়ার কথা, তাকে বদলাতে হবে। তাকে তারা মানেন না, তার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না।
বিএনপির এটা কি স্ববিরোধী কথাবার্তা নয়? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটিকে যদি অবিকল আগের অবস্থায় বলবৎ রাখতে হয় তাহলে খালেদা জিয়ার সাবেক এক সরকারের আমলেই গৃহীত আইন অনুযায়ী সদ্য অবসর গ্রহণকারী প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে হবে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী বর্তমানের সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের এই পদ গ্রহণ করার কথা। কিন্তু যেহেতু তিনি বিএনপির পছন্দের লোক নন, সুতরাং তাকে এই পদে বসানো চলবে না।
অর্থাৎ সালিশ মানি, 'তালগাছটা আমার।' বিএনপির কথা, আলোচনায় বসব, তার আগেই দাবি মেনে নিতে হবে। তাহলে আলোচনায় বসার দরকারটা কি? বিএনপি একমুখে বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগের ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে। অন্য মুখে বলছে, ওই ব্যবস্থার অধীনে যাকে এবার প্রধান উপদেষ্টা করার কথা, তাকে বদলাতে হবে। যদি আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি ব্যবস্থা বদলাতে হয়, তাহলে ঘুণে ধরা গোটা ব্যবস্থাটি নিয়েই সেটি রাখা হবে কি হবে না এবং রাখা হলে তার কী কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তা নিয়ে পূর্বশর্ত ছাড়াই খোলামেলা আলোচনায় বসা কি উচিত নয়? সরকার তো এ ধরনের আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। বিএনপির তাতে গড়িমসি কেন?
বিচারপতি খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে সামরিক ও স্বৈরাচারী আমলের অনেক বিধিব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়ে দেশের শাসনব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত করতে চেয়েছেন। বিএনপির নেতা-নেত্রীদের কাছে এটাই মনে হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানো। বিএনপির বহুরূপী নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তো বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার দাবি করেছেন এবং এমন কথাও বলেছেন, বিচার হলে বিচারপতি খায়রুল হকের ছয় বছর কারাদণ্ডও হতে পারে।
মওদুদ আহমদের মতো লোকের মুখেই এসব কথা মানায়। যে ব্যক্তি আইনমন্ত্রী থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স কমিয়ে-বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দসই অবসর গ্রহণকারী প্রধান বিচারপতির তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হওয়ার পথ সুগম করেছিলেন, গোটা বিচারব্যবস্থায় সততা, নিরপেক্ষতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ছিনিমিনি খেলা খেলেছেন, যাকে জে. জিয়া বিভিন্ন অভিযোগে সরাসরি তার মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, জে. এরশাদ ক্ষমতায় এসেই যাকে দুর্নীতির দায়ে জেলে ঢুকিয়েছিলেন, রাজনীতিতে যার ডিগবাজির কোনো তুলনা নেই, সেই ব্যক্তির মুখে বিচারপতি খায়রুল হকের নামোচ্চারণও যে শোভা পায় না, তাকে তা কে বোঝাবে? অনেকের ধারণা, ক্ষমতায় থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ ব্যবস্থায় ও দুর্নীতির, এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহিতার যেসব অভিযোগ মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে আছে, তার বিচার হলে তাকে হয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। কোনো স্বৈরাচারী আবার ক্ষমতায় না এলে তাকে হয়তো কারামুক্ত করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে না।
অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করতে গিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক তাদের রায়ে স্পষ্ট ভাষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান পদে বিচারপতিদের না বসানোর পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, এই পদে বিচারপতিদের বসিয়ে তাদের বিতর্কিত না করাই ভালো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত প্রদত্ত রায়ের এই অংশ পাঠেও মনে হয়, বিচারপতি খায়রুল হক নিজেও এই পদে বসার ব্যাপারে আগ্রহী নন।
এই অবস্থায় বিচারপতিদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা না করার সিদ্ধান্ত নিতে হলেও বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার ও বিরোধী দল দু'পক্ষেরই আলোচনা বৈঠকে বসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়া চাইলে সেই আলোচনা সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আরও দু'এক টার্ম বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হলে প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারপতিদের বদলে 'শিশু নয়, পাগলও নয়,' এমন কোনো নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে পারেন।
আমার মতো দেশের অনেকেরই ধারণা, যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে তৈরি করা যায়, তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন বিলোপ করাই ভালো। যখন এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি উঠেছিল, তখন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মোটেই নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। বর্তমানে সে অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। সুতরাং এই অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিটিও পরিত্যক্ত হওয়া দরকার। কিন্তু দেশের শিক্ষিত ও রাজনীতিক মহলের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের ধারণা, দেশের রাজনীতি আরেকটু স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাটি আরও দু'এক টার্ম থাকা প্রয়োজন। তাদের এই অভিমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েই আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত হবে ব্যবস্থাটি আরও দু'এক দফা বহাল রাখা। তবে অবশ্যই এর সংস্কার এবং ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
বিএনপি নেত্রী শেষ পর্যন্ত আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন এটাই বড় কথা। সাংঘর্ষিক পথে গিয়ে তিনি দেশের কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারবেন না। সমঝোতার পথেই তাকে এগোতে হবে। এই সমঝোতার জন্য পূর্বশর্ত আরোপ করে নয়, খোলামনে খোলাখুলি আলোচনার জন্য বৈঠকে বসতে হবে। সংসদে গিয়ে প্রস্তাব রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারকেও ক্ষমতার অহমিকার ঊধর্ে্ব উঠে সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করতে হবে। 'মানব না', 'মানি না', 'ছাড়ব না', 'পদত্যাগে বাধ্য করে ছাড়ব' ইত্যাদি অসার হুঙ্কার ছেড়ে বিএনপি সংসদে এবং সংসদের বাইরে আলোচনা বৈঠকে গঠনমূলক পরামর্শ দিন, প্রস্তাব রাখুন। তাতেই দেশের মঙ্গল। অন্যথায় হরতাল এবং তর্জনগর্জনের রাজনীতি বিএনপির জন্য কোনো মঙ্গলই বয়ে আনবে না।
লন্ডন, ১৭ জুন, শুক্রবার, ২০১১
 

No comments

Powered by Blogger.