দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক-সাংবাদিক পেটানো পুলিশ

‘পেটা, শালাদের পেটা, সাংবাদিক পেটা। সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না’—এই উক্তি একসঙ্গে তিন ফটোসাংবাদিককে পেটানোর ‘গুরু’ তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার এসি শহীদুল ইসলামের। নয়জন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ সদর দপ্তর এই ‘দুঃখজনক’ ঘটনার লজ্জা ঢাকতে চেষ্টা করেছে।


নাটের গুরু এসি শহীদুল ইসলামকে নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর দিনভর নানা নাটক করেছে।প্রথমে তাঁকে প্রত্যাহার, দ্বিতীয়বার রাঙামাটিতে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ গতকাল রাতে তাঁকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু তিনি ও তাঁর সহযোগীরা যে অপরাধ করেছেন, তার শাস্তি কোনোভাবেই সাময়িক বরখাস্ত হতে পারে না। এ ধরনের লোক দেখানো ব্যবস্থা সংশ্লিষ্টদের আরও বেপরোয়া করে তুলবে। অতীতের কিছু ঘটনা নির্দেশক হলে এরপর আমরা হয়তো ভবিষ্যতে তাঁদের পদোন্নতিই দেখব। চিকিৎসাধীন সাংবাদিকেরা তথ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে এমন পরিহাস করতে বিস্মৃত হননি।
শহীদুল ইসলাম ও তাঁর অনুগত পুলিশ সদস্যরা প্রকৃতপক্ষে সংবাদকর্মীদের প্রতি রাষ্ট্রের বৈরী দৃষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। গত সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে সংবাদকর্মীদের নিগ্রহ এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের আক্রোশ নানা ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু কারও বিচার হয়েছে বলে জানা যায়নি।
শেরেবাংলা নগরে মহিলা পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রীদের অবরোধ ছিল। সেখানে কোনো অরাজক পরিস্থিতি ছিল না। পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী প্রথম আলোর তিন ফটোসাংবাদিককে পুলিশ কিল, ঘুষি মেরে এবং বেধড়ক লাঠিপেটা করে মারাত্মক জখম করেছে। বিনা উসকানিতে সাংবাদিকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা করি। ধিক্কার জানাই। ঘটনার দায়ে সহকারী কমিশনার ও অন্যদের যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা গুরুপাপে লঘুদণ্ড ছাড়া কিছুই নয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধাদান, গালাগাল ও নিষ্ঠুর নির্যাতন করা, ক্যামেরা ভাঙচুর, প্রথম আলোর প্রদায়ককে পিটিয়ে নির্যাতনের ভিডিওদৃশ্য ধারণ করা মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার দায়ে অভিযুক্তদের প্রচলিত আইনে বিচার হতে হবে। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ওপরও আমাদের ভরসা কম।
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রথম আলোর অপর এক সাংবাদিককে দেখতে গিয়েছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জাকির হোসেন। তিনিও বাদী হয়ে তাঁর অভিযুক্ত বেয়াড়া সহকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। এ দৃষ্টান্ত বিরল নয়। তিনি বাদী হয়ে মামলা করলে তাঁর সহকর্মীদের নিন্দনীয় কাজের গ্লানি কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
এ ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীরা বিশেষত আলোকচিত্র সাংবাদিকেরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সমাজের নানা বিশিষ্টজন তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, অপরাধীদের বিচারের দাবি করেছেন। আমরা তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমরা প্রথম আলোর তিন ফটোসাংবাদিক ও একজন প্রদায়ককে নির্যাতনের ঘটনায় প্রচলিত আদালতে অবিলম্বে বিচারের দাবি করছি। তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। বিভাগীয় তদন্তের নামে অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না।

No comments

Powered by Blogger.