আবার সাংবাদিক নির্যাতন-দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই

সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালন ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ছে, এমন ধারণা অমূলক নয়। গত ২১ মে সাংবাদিকদের ছয়টি ইউনিয়ন ও সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পুলিশ-র‌্যাবের ব্যর্থতার প্রসঙ্গ টেনে ১৬ মে সমকালের সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল 'ক্ষমাহীন এ ব্যর্থতা' শিরোনামে। এতে লেখা হয়, 'এ ব্যর্থতায় সমাজ অসহায় বোধ করছে।' কিন্তু হামলা-আক্রমণের ঘটনা তো একটি নয়। 'অধিকার' নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, কেবল গত বছরেই ২০৬ জন সাংবাদিক পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ বছরে আক্রমণের শিকার আরও প্রায় অর্ধশত। হুমকি-লাঞ্ছনা তো আছেই। বর্িিভন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, প্রভাবশালী মহল এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী_ সবাই যেন এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। যত বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিক সংবাদই হোক না কেন সেটা প্রকাশ বা প্রচারের কারণে কারও স্বার্থে আঘাত লাগলে কিংবা তার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে আর রক্ষা নেই_ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সাংবাদিকদের শায়েস্তা করায় তৎপর এরা। এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করাও এদের কাছে অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে। গত ২০ মে গফরগাঁওয়ের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন আহমেদ পিস্তল নিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে তাড়া করছেন, এমন সচিত্র সংবাদ প্রেরণ করায় সমকালের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল আমিন বিপ্লবকে 'হামলাকারী' হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকের ছাত্রীদের বিক্ষোভের ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের নির্মমতার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর তিনজন আলোকচিত্র সাংবাদিক। মারধর করেই পুলিশি রোষের শেষ হয়নি। এসি পর্যায়ের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম তিনজনেরই ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের নয় সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত এবং মূল হোতা এসি শহীদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। পরে তাকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপ ইতিবাচক। তবে এ ঘটনা যেন নিছক আইওয়াশ না হয়। নিকট অতীতের আরেকটি পোস্টিংয়ের কারণেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি না করে পারে না। খুলনা থানায় দু'জন ছাত্রনেতাকে চোখ বেঁধে ও ঝুলিয়ে পেটানোর ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় জনরোষের মুখে ওসি এসএম কামরুজ্জামানকে ক্লোজড করার কয়েকদিন যেতে না যেতেই সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ 'দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের' সম্পূর্ণ বিপরীত বার্তাই দেয়। এসি শহীদুল ইসলামের মতো যেসব কর্মকর্তা কাউকে পরোয়া না করার মনোভাব নিয়ে চলেন তারা ভাবতে পারেন, অন্যায় করলে আরও ভালো পোস্টিং মেলে। পুলিশের এ আচরণ বদলাবে, এটাই প্রত্যাশা। আমরা চাই তিনজন সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন চালানোর অপরাধে এসি শহীদুল ইসলামসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
 

No comments

Powered by Blogger.