মানুষের কথা-গরিবর মরণর পালা শুরু অইছে’ by আকমল হোসেন

গরিবর মরণর পালা শুরু অইছে। কামকাজ করতাম পাররাম না। মালিক আইতে পারলে না কামও নিত। কাম করলে চাউল ডাইল নিতাম।’ কথাগুলো দিনমজুর বদিল মিয়ার (৪৫)। গতকাল রোববার মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা এলাকায় টুকরি-কোদাল নিয়ে আরও আট-দশজন শ্রমিকসহ কাজের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।


কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টা বেজে গেলেও তিনি কাজ পাননি।
বদিল মিয়া জানান, গত সপ্তাহের তিন দিনের হরতালেও তিনি কাজ পাননি। হরতাল কেন ডাকা হয়েছে, তা কি জানেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিতার লাগি হরতাল দিছে কইতাম পারি না। আতকা হুনি হরতাল।’
বদিল মিয়ার মতো সড়কের অন্য পাশে কাজের আশায় বসে ছিলেন আরও কয়েকজন। তাঁরা বলেন, প্রতিদিন ভোরে চৌমোহনা চত্বরে শ্রমিকের হাট বসে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজন বেলা বাড়ার আগেই শ্রমিক নিয়ে যান। এত বেলা পর্যন্ত তাঁদের কাজের জন্য বসে থাকতে হয় না। দিনমজুর খেজুর মিয়া (২৬) বলেন, ‘হেরা তো হরতাল ডাকিয়া বড় বড় তালাত থাকে। তারা তো বড়লোক, তারার কোনো সমস্যা নাই। সমস্যা তো যা আমরার। সকালে হোটেলও বাকি খাইয়া আইছি। এখন বাড়িত যাইবার ভাড়া নাই।’
রিকশাচালক দুলাল মিয়া (৩৫) এম সাইফুর রহমান সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরতাল অইলে গরিব মরে। গরিব মানুষেরই বিপদ। এমনে দুই-তিন শ টাকা রুজি করতাম। হরতালের দিন এক শ টাকাও অয় না।’ শহরের চৌমোহনা এলাকায় জুতায় রং দেওয়া ও সেলাইয়ের কাজ করছিলেন চম্পা লাল (৫৫)। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কইন আর আওয়ামী লীগ কইন, তারা গরিবরে দেশও রাখত নায়। একজন নেতার লাগি কইনচাইন দেশের মানুষরে এত কষ্ট দেওয়ার দরকার আছে? আপনারা একজাগাত বইতাইন, আলাপ-আলোচনা করতাইন, সমস্যার সমাধান করতাইন। এটা করতা নায়।’
সকালে শহরের শমশেরনগর সড়কে ঘোরার সময় দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে কোনো গাড়ি নেই। আরও একটু এগিয়ে দেখা যায় শমশেরনগর বাসস্ট্যান্ডে তিন-চারটি বাস দাঁড়িয়ে। কিন্তু বাসের চালক বা যাত্রী কেউ নেই।
শমশেরনগর সড়ক দিয়ে হেঁটে অনেক মানুষকে শহরের দিকে আসতে দেখা যায়। কীভাবে আসছেন, জানতে চাইলে তাঁদেরই একজন কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার এলাকার সাজ্জাদ মিয়া (৪০) ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘যেখানো অন্যদিন তিনজন আইতে লাগত ১০৫ টাকা। আইজ লাগছে ৩২০ টাকা। অও অইলো হরতালের ফল।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও পিঁয়াজ আছিল আমরার এখানো ১৪-১৬ টাকা। গত হরতালের সময় আমরার এলাকায় দাম বাড়িয়া অইছে ৪০ টাকা। কেরোসিনর লিটার ১১০ টাকার উপরে গেছিল।’
সাংস্কৃতিককর্মী পুলক কান্তি ধরের জিজ্ঞাসা, ‘এরা তেল-গ্যাসসহ জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য হরতাল করে না কেন!’

No comments

Powered by Blogger.