সরকারের পদক্ষেপ যেন অর্থবহ হয়-শেয়ারবাজারে গতি ফেরানো

অবশেষে শেয়ারবাজারের সংকট নিরসনে সরকার কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে। গত রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সন্ধ্যায় তা গণমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন।


এর মধ্য দিয়ে সরকার যে শেয়ারবাজারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে, বিনিয়োগকারী ও কারবারিদের কাছে সে রকম একটি বার্তা দেওয়ারই চেষ্টা করা হয়েছে। এই বার্তা বাজার কতটা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে, তা আজকে লেনদেন শুরু হওয়ার পর বোঝা যাবে। কঠিন বাস্তবতা হলো, শেয়ারবাজারকে হঠাৎ করে বা জোর করে চাঙা করা যাবে না, সেই চেষ্টা করাও ঠিক হবে না। বরং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই সরকার-ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বিশ্লেষণ করাও জরুরি ।
সাধারণ মূল্যসূচকের ওপর সার্কিট ব্রেকার প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক। বলা যেতে পারে, ধসের সময় এসইসি আরেকটি ভুল করেছিল এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে। এর বদলে বরং খাতওয়ারি সার্কিট ব্রেকার আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারত। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) পুনর্গঠনের ঘোষণাটিও ইতিবাচক। তবে এটি দ্রুত ও সুপরিকল্পিতভাবে দৃশ্যমান করতে হবে, যেন সত্যিই সুফল পাওয়া যায়। কয়েকটি কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করার ঘোষণা সময়োপযোগী। সর্বোপরি, বাজারের অস্বাভাবিক উত্থান ও বিরাট পতনে অনিয়ম-কারসাজির বিষয়টি তদন্ত করার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের ঘোষণাও ইতিবাচকভাবে নেওয়া যায়। সমস্যা হলো, আগে এ রকম তদন্তের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছু হয়নি। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ধসের পরই এসইসি তা তদন্ত করবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে আর কিছুই করা হয়নি। আশা করা যায়, অর্থমন্ত্রী যখন নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন তা বাস্তবায়িত হবে।
আসলে, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি—এই তিন পদক্ষেপই দরকার। আর তাই তাৎক্ষণিক এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি মধ্য মেয়াদে কী কী করা হবে, সে বিষয়েও দ্রুত ঘোষণা আসা প্রয়োজন। প্রয়োজন শেয়ারবাজারের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিপরিকল্পনা। তাহলে তা বিনিয়োগকারীদের ভেতর এই আস্থার সঞ্চার করতে সমর্থ হবে যে, বাজারকে নিয়মানুগভাবে উন্নত করা হবে। এটি সরকারের শীর্ষপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে হবে। গত কয়েক দিন কোনো কোনো নীতিনির্ধারক শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা নিতান্তই অনভিপ্রেত। সংকটকালে এ ধরনের মন্তব্য জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষই বাড়ায়।
বাজারে গতি ফেরানোর জন্য বিকিকিনি শুরু করা জরুরি। এই অবস্থায় সংগত কারণেই সহজে কেউ শেয়ার কিনতে চাইবে না, বরং বিক্রি করে বেরিয়ে যেতে চাইবে। আর তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিশেষত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয়তা এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। স্ফীত বাজার থেকে তারা ভালো মুনাফা করেছে, আগামী দিনেও মুনাফার প্রত্যাশায় তারা টাকা খাটাতে আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কাজেই সংকটকালে তাদের নিষ্ক্রিয়তা কাম্য নয়। বরং আইন মেনে সতর্কতার সঙ্গে সাময়িকভাবে অর্থপ্রবাহ বাড়িয়ে সমর্থন দেওয়া গেলে তা বাজারকে সহায়তা দেবে।

No comments

Powered by Blogger.