পুলিশে পদোন্নতির একটি খারাপ দৃষ্টান্ত-মারলে পুরস্কার নইলে তিরস্কার!

মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্বে যাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি ৪৩ জনকে ডিঙিয়ে এসেছেন। সেই অর্থে তিনি সৌভাগ্যবান। তাঁর এই অভাবনীয় সৌভাগ্যের পেছনে অন্তত একটি চমকপ্রদ ঘটনা বিশেষ অবদান রেখেছে বলে ধারণা করা যায়।


গত বছরের ৬ জুলাই হরতালের সময় সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মারধর করে তিনি পত্রিকার শীর্ষ খবরে স্থান পেয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার। ১০ মাস না যেতেই তিনি উঁচুতে উঠে গেলেন। আর যাঁরা সে রকম ‘কৃতিত্ব’ দেখাতে পারেননি, তাঁরা নিচে পড়ে গেলেন।
পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের রাস্তায় দায়িত্ব পালন করার কথা নয়। তাঁরা থাকবেন পেছনে, হুকুম দেবেন, পুলিশসদস্যরা সে অনুযায়ী কাজ করবেন। এই তো সাধারণ নিয়ম। কিন্তু সেদিন অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজপথে সক্রিয় ছিলেন এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে রীতিমতো ধাওয়া করেন। মারধরে আহত হয়ে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, আর মারধর করে পুলিশ কর্মকর্তা হয়েছেন পুরস্কৃত! একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো তদন্তই হয়নি।
পুলিশের সাম্প্রতিক পদোন্নতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়েও কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়েছেন। অনিয়ম ও দলীয়করণের মাধ্যমে ৩৬ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের যথাযথ পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু ঘটনা এই দাবির অসারতাই প্রমাণ করে।
পুলিশের পদোন্নতিতে রাজনৈতিক আনুগত্য ও দলীয় প্রীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। বিশেষভাবে সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে বেধড়ক পিটিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচিত হওয়ার পর তাঁকেই আবার পদোন্নতি দিয়ে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার ও খারাপ কাজের জন্য তিরস্কারের নীতি সব সময় অনুসরণ করা দরকার। পুলিশের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম বাঞ্ছনীয় নয়।

No comments

Powered by Blogger.