বিশেষ সাক্ষাৎকার-বিশ্বমন্দা চলতে থাকলে আমাদের অবস্থাও খারাপ হবে by এ কে এন আহমেদ

এ কে এন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বিতীয় গভর্নর ছিলেন। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নির্বাহী পরিচালক, পাকিস্তানের শিল্প উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), স্বাধীন বাংলাদেশে পুনর্গঠিত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরও দায়িত্ব পালন করেন।


পঞ্চাশের দশকের শুরুতে বিশ্বব্যাংকে কাজ করেছেন। আর সত্তরের দশকের মধ্যভাগে আইএমএফের উপদেষ্টা ছিলেন। আশির দশকের মধ্যভাগে তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সে সময় তিনি জাপানি সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকায় ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট গোল্ড মেডেল’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। বিশ্ব অর্থনীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর কয়েকটি বই রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকার ওয়াশিংটনে বসবাসরত এই প্রথিতযশা ব্যাংকার সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন ব্যাংকিং খাতের নানা দিক নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুর আহমেদ

প্রথম আলো  স্বাধীনতার পর কোন সময় আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হলেন?
এ কে এন আহমেদ  আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে আটকা পড়েছিলাম। ফিরে এলাম ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে। তখন আমাকে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান করা হয়। ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে একদিন রাতে বাসায় ফিরে দেখি দরজায় বড় করে লেখা আছে, বঙ্গবন্ধু আমাকে খুঁজছেন। রাত ১১টা বাজে। আমি ফোন করলাম। আমাকে বলা হলো, উনি আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি বাধ্য হয়েই তখন গণভবনে গেলাম। ওনার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথমেই তিনি বললেন, ‘আপনাকে গভর্নর হতে হবে।’ আমি আপত্তি করে বললাম, হামিদুল্লাহ সাহেব আছেন, তাঁকে মেয়াদপূর্তি পর্যন্ত থাকতে দিন। তা ছাড়া আমার স্ত্রীও অসুস্থ, তিনি হাসপাতালে আছেন, আমি ছুটিতে আছি। শেখ সাহেব জানালেন, তিনি খোঁজ নিয়েছেন, আমার স্ত্রীর অবস্থা উন্নতির দিকে। আর কী করব! বঙ্গবন্ধুর কথা না শুনে তো কোনো উপায় ছিল না।
প্রথম আলো  কী পরিস্থিতিতে আপনি দায়িত্ব নিলেন?
এ কে এন আহমেদ  দেশে তখন মূল্যস্ফীতির বিরাট চাপ। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে অনেক পণ্য গুদামজাত করেছেন। কালোবাজারিরাও টাকা লুকিয়ে রেখেছেন। জাতীয়করণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষত পাটকলগুলো অবিরত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যাচ্ছে। দেশে একটা অনিশ্চিত অবস্থা চলছে, জনগণ অস্থির হয়ে আছে। আমি শেখ সাহেবকে বললাম, এ অবস্থার প্রতিকার করতে হবে। কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে হবে আর বাজার থেকে ১০০ টাকার নোট সব তুলে নিতে হবে। উনি তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হয়ে গেলেন। কোনো বিতর্ক করতে হলো না।
প্রথম আলো  কীভাবে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলো?
এ কে এন আহমেদ  আমি আমার সহকর্মী ডেপুটি গভর্নর নুরুল মতিন সাহেবকে বললাম, গোপনে এর একটা কর্মপরিকল্পনা বানান। তিনি সেটা বানানোর পর তখনকার অর্থসচিব ও আমার বন্ধু সদ্যপ্রয়াত কফিলউদ্দিন সাহেবকে অবহিত করলাম। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আমাদের বৈঠকের স্থান ঠিক করা হলো দূরে, জয়দেবপুরের কাছে এক মাঠে। সেখানে আমি নুরুল মতিনের সঙ্গেও আলাদা করে মিলিত হতাম। যখন বিস্তারিত কার্যক্রম তৈরি হলো, তখন আমি গণভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করলাম। এটা বাস্তবায়ন করার দিন ধার্য হলো। তাঁকে সেদিনই অনুরোধ করলাম, তিনি যেন এই কার্যক্রম এবং তাঁর ঘোষণার দিন-তারিখ গোপন রাখেন। তিনি কথা দিলেন এবং তা রক্ষাও করলেন।
যখন সময় এল, তখন বঙ্গবন্ধু বললেন, ঘোষণার দিন আমরা যাতে গণভবনে চলে যাই এবং স্মরণ করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর কেউ যেন বিষয়টি জানতে না পারেন। ঠিক হলো, ওই দিন সকালে আমি আর নুরুল মতিন পিকনিকের নাম করে গণভবনে চলে আসব এবং বঙ্গবন্ধু সেখানে তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী, অর্থমন্ত্রী এ আর মল্লিককে ডেকে এনে এই কার্যক্রমের ব্যাখ্যা করবেন। আমি আপত্তি তুলে বলেছিলাম, ওনারা ভুলক্রমে কারও কাছে বলে দেবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বঙ্গবন্ধু হেসে বলেছিলেন, সবাই এসে গেলে গণভবনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
পরে বুঝেছি, বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রতিটি কথাই যথাযথভাবে রেখেছিলেন।
প্রথম আলো  আপনার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে শীর্ষ পর্যায়ে আর কারা ছিলেন?
এ কে এন আহমেদ  আমার একেবারেই নিকটতম কর্মকর্তাদের মধ্যে এ কে গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ আলী কবির, আমিনুল হক চৌধুরী আর নুরুল মতিন ছিলেন। আমরা সবাই অনেক বছরের বন্ধু ছিলাম। এই বন্ধুত্ব আমাদের অনেক কাজে লেগেছে। তখন ডিমনিটাইজেশনের (১০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার) ক্ষেত্রে নুরুল মতিন ছিলেন অতুলনীয়। এর যত ছোট-বড় কাজ সব উনি করেছেন। তো এসব বন্ধু আমার পাশে না থাকলে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একদল নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা-কর্মচারী দক্ষতার সঙ্গে কাজ না করলে এবং অবশ্যই বঙ্গবন্ধু অনেক বিষয়ে সহায়তা না করলে এ কাজ এত সুন্দরভাবে শেষ করা যেত না। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বন্ধুরা আমাদের কাছে এ বিষয়ে প্রশংসা করলেও তাঁদের বিস্ময় ছিল, কীভাবে এ সিদ্ধান্ত আমরা গোপন রাখতে পেরেছি। তাঁদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশে কোনো কিছুই যেন গোপন থাকে না।
প্রথম আলো  শুরুতে আপনারা কীভাবে মুদ্রানীতি তৈরি করতেন?
এ কে এন আহমেদ  শুরুতে ঠিক কী হয়েছিল, আমি বলতে পারব না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা পরিকল্পনা কমিশন মূল্যস্ফীতির বিষয়ে কিছুই করেনি। সরকার চালাতে রাজনৈতিক কারণে ঘাটতি অর্থায়ন হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে এবং সাধারণ মানুষ খুবই ক্ষুব্ধ হচ্ছিলেন, তাঁরা এর থেকে একটা পরিত্রাণ-সমাধান খুঁজছিলেন।
গভর্নর হিসেবে আমার সময়কালে আমি মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে আনি। টাকার বড় অবমূল্যায়ন করি। এ সময় একবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছিল, আপনি মুদ্রা সরবরাহ কমালেন আবার অবমূল্যায়নও করলেন, এটা কীভাবে সামাল দিলেন। আমি তাদের বুঝিয়েছিলাম, আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে ‘ফাইন টিউনিং অব দি ইকোনমি’ করলে কিছু হয় না। গভর্নরকে অনেক সময় পুলিশ ইন্সপেক্টরের মতো কাজ করতে হয়।
অর্থনীতিবিদেরা ঠিক সে সময় বুঝতে পারেননি যে অবমূল্যায়ন করা হলো, তার পরপরই কীভাবে মূল্যস্ফীতি নেমে গেল। আমি বলেছিলাম, বাজার থেকে ১০০ টাকার নোট তুলে নেওয়া, অবমূল্যায়ন করা এবং আরও কতগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর দেশে স্থিতিশীলতা এসেছিল।
প্রথম আলো  আপনার সময় সরকারের কেউ কি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন?
এ কে এন আহমেদ  প্রায়ই করতেন। তাঁরা কেউ কেউ ভাবতেন, ব্যাংকগুলো যখন রাষ্ট্রায়ত্ত হলো, তখন তাঁদের ব্যাংকের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতার ভ্রান্ত ধারণার ফলে তারা ছোটখাটো ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করতে লাগলেন। এর আসল কারণ হচ্ছে, অনেকেই জানতেন না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা আসলে কী? আমি প্রথম সেই ধারণার জায়গাটা পাল্টে দিই।
প্রথম আলো  আপনার দায়িত্ব পালনের সময় বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। তখন দেশের অর্থনীতি কেমন ছিল?
এ কে এন আহমেদ  যে সময় শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়, তখন কিন্তু অর্থনীতি উজ্জীবনের দিকে বেশ এগোচ্ছিল। হত্যার আগে যেসব অপপ্রচার হয়, সেটা তখন কিন্তু ছিল না।
প্রথম আলো  তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
এ কে এন আহমেদ  তিনি একই সঙ্গে দক্ষ প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি জানতেন, আমলাতন্ত্র ছাড়া সরকার চলতে পারে না। আবার তিনি জানতেন, জনগণ ছাড়া সরকার চলতে পারে না। এ দুটোর সমন্বয় তিনি করেছেন। তিনি কখনো আমাকে কোনো বিষয়ে নির্দেশনা দেননি।
প্রথম আলো  আপনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন। দেশের অর্থনীতি, আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার সম্পর্কে আপনি কি পুরোপুরি খোঁজখবর রাখতে পারছেন?
এ কে এন আহমেদ  আমার নিজস্ব আগ্রহে কিছু খোঁজখবর রাখি। কোনো সুযোগ এলে আমার ধ্যানধারণার আওতায় তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।
প্রথম আলো  দেশের অর্থনীতি বা উন্নয়নের একটা সম্ভাবনার কথা বলা হয়। আপনি বাইরে থেকে কী সম্ভাবনা দেখেন?
এ কে এন আহমেদ  সম্ভাবনা তো আছেই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদি বলেন তাহলে আমি বলব, সম্ভাবনা আমি দেখি ২০ ভাগের উন্নয়ন। ৮০ ভাগের সম্ভাবনা কোথায়? এটা নিয়ে আমি এরই মধ্যে কিছু বিভিন্ন জায়গায় লিখেছি। দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই অগ্রগতিগতি কি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে? দারিদ্র্য দূর করার প্রচেষ্টার সহায়ক হচ্ছে? দেশের অগ্রগতিতে সমতা আসছে না, নব্য ধনীরা দেশের আপামর জনসাধারণ থেকে আলাদা হচ্ছে এবং তাঁরা ব্যক্তিগত লোভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে?
এখন সময় এসেছে প্রগতি বলতে কী বোঝায়, আমরা কী বুঝি, তার একটা পর্যালোচনা করার। বেশ কিছুদিন আগে শরৎচন্দ্রের একটা উপন্যাসে পড়েছিলাম। সেখানে তিনি এক জায়গায় বলেছিলেন, ‘শুধু দৌড়াইলেই এগোনো যায় না।’ এ কথাটা আমাদের বোধ হয় মনে রাখা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
আমি সামনে দুটো অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি। এক নম্বর: কালোবাজারি ও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করার ফলে দেশে কিছু লোকের হাতে অনেক টাকা এসে গেছে। তারা সেই টাকা খাটিয়ে ব্যাংক এবং সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে চলছে। দুই: আমাদের পরিবেশ যে দূষিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, সে সম্বন্ধে দেশবাসীকে সচেতন করা হচ্ছে না। এর জন্য আমাদের সরকার ও বুদ্ধিজীবীরা কিছুটা দায়ী বলেই আমি মনে করি।
দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে যদি সমতা না আনা যায় এবং পরিবেশদূষণ রোধ না করা যায়, তাহলে দুর্যোগ হয়তো অবশ্যম্ভাবী হয়ে যাবে। এখন আমাদের সময় এসেছে রবীন্দ্রনাথের একটি কথা মনে করার, ‘সমস্ত শরীরকে বঞ্চিত করে যদি মুখে রক্ত সঞ্চার হয়, তাহাকে স্বাস্থ্যের লক্ষণ বলা যায় না।’ আজকে আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি ও শাসনযন্ত্রের জন্য এ কথা একান্তভাবে প্রযোজ্য।
প্রথম আলো  সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই মন্দার শুরু এবং তা দেখা দিয়েছে বন্ধকি ঋণ থেকে। আপনি কীভাবে এর বিশ্লেষণ করবেন?
এ কে এন আহমেদ  আমি ২০০৬ সাল থেকেই এই আশঙ্কা করেছিলাম। এই মন্দা দুটো কারণে হয়েছে। একটি রাজনৈতিক, আরেকটি অর্থনৈতিক। আমেরিকা মুক্তবাজার করেছে। এটা করেছে তাদের যে পণ্য উৎপাদিত হয়, সেটা ওখানে বিক্রি না হওয়ার কারণে। এটা সারা বিশ্বে বিক্রির জন্য আসলে অর্থনীতি মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো  মন্দা এখন কী অবস্থায় রয়েছে?
এ কে এন আহমেদ  কেউ কেউ বলেন, কাটিয়ে উঠেছে। আবার অনেকেই বলছেন, কাটিয়ে ওঠেনি। কিছু সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়ায় আপাতত সামাল দেওয়া গেছে মাত্র। কিছু উন্নতি হয়েছে। ২০০৬-এ যে ব্যাপক কর্মসংস্থান হারিয়েছিল, তার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটা সাময়িক।
প্রথম আলো  তো বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটালে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলা হচ্ছে, আপনার এ সম্পর্কে বিশ্লেষণ কী?
এ কে এন আহমেদ  বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তার প্রধান কারণ এখানে বাইরের অর্থ বিনিয়োগ আসলে তেমন নেই। এলে প্রধানত স্টক এক্সচেঞ্জে তা আসত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতো। রপ্তানি বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে আবার তা বেড়েছে।
প্রথম আলো  বলা হয়, আমরা ভালোভাবেই সামাল দিতে পেরেছি। আর মন্দার পরবর্তী সময়ে আমাদের অর্থনীতি চাঙা হতে পারে, রপ্তানি বাড়তে পারে।
এ কে এন আহমেদ  তা এক রকম বলা যেতে পারে যে সামাল দিতে পেরেছি। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি যদি চাঙা না হয়, তাহলে আমাদের অবস্থাও খারাপ হবে। রপ্তানির বাইরে আমাদের অর্থনীতির বড় আয়ের খাত কিন্তু মানবসম্পদ রপ্তানি। মানবসম্পদ তো ফিরে আসছে। নতুন বাজার তেমন হচ্ছে না। এতে আমাদের বিদেশি মুদ্রার আয় কমে যাবে। তারপর যারা ফিরে আসবে, তাদের কাজের সংস্থান বা পুনর্বাসন করতে হবে। এরা তো আর গ্রামে ফেরত যাবে না। তা হলে তো একটা চাপ থাকবে। এমনিতেই কর্মসংস্থানের অভাব আছে, তার ওপর নতুন চাপ।
প্রথম আলো  কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন অনেক উদার, আপনার সময় কেমন ছিল?
এ কে এন আহমেদ  উদার-অনুদার প্রশ্ন নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কর্তব্য হলো টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে (ডেভেলপমেন্ট পলিসি) সাহায্য করা। আমি আপ্রাণ এ লক্ষ্যে কাজ করেছি এবং এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর পরিপূর্ণ সহায়তা পেয়েছি। কোনো দিন কোনো বাধা পাইনি। বরং যখন একদল ব্যবসায়ী বঙ্গবন্ধুর কাছে আমার সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন, তখন তিনি তাঁদের বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছি, তিনি যদি অপারগ হন, তাহলে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকে তালা-চাবি লাগিয়ে বন্ধ করে দেব।’ এই একটি বাক্যই আমাকে অনেকখানি শক্তি দিয়েছে কাজ করার জন্য।
প্রথম আলো  সম্প্রতি সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, প্রতিবন্ধকতাগুলো কী এবং তার প্রতিকার কী খতিয়ে দেখতে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কী?
এ কে এন আহমেদ  এটা খুব সময়োচিত সিদ্ধান্ত। আমি আশা করব, এই কমিটি এটিও দেখবে যে সফটওয়্যার উইদাউট হার্ডওয়্যার সত্যিকারের দীর্ঘ মেয়াদের প্রগতির সহায়ক হতে পারে কি না। যুক্তরাষ্ট্র ১০-১৫ বছর ধরে শুধু সফটওয়্যারের ওপর ভর করে তাদের অর্থনীতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বব্যাপী মন্দা ডেকে এনেছে।
প্রথম আলো  এবার আপনি কত দিন পর ঢাকায় এলেন? এ শহরের কী পরিবর্তন আপনার চোখে পড়ছে?
এ কে এন আহমেদ  এবার ঢাকায় এলাম তিন বছর পর। হাউস বিল্ডিংয়ের নামে গায়ে গায়ে ঘেঁষে প্রচুর নতুন ইমারত দেখছি। রাতে সেগুলো আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যায়। যদিও শুনি দেশে বিদ্যুতের স্বল্পতা আছে। জনসংখ্যা আরও বেড়ে গেছে। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক এবং ভয়ংকর যানজট। কিন্তু আরেক দিকে বহু লোক আশ্রয়হীন হয়ে রাস্তায়ই দিন কাটাচ্ছে।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
এ কে এন আহমেদ  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.