এই ধ্বংসপ্রক্রিয়া এখনই থামান-বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অচলাবস্থা চলছে, তা নিরসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বিশেষত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সহিংস রূপ নিয়েছে। সেখানে সরকারপন্থী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ স্পষ্টই উপাচার্যের ঠ্যাঙারে বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর শনিবার তারা সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে।
বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় কার্যত অচল। শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতাদের আলোচনা হয়েছে, কিন্তু তাতে অচলাবস্থার অবসান ঘটেনি। বুয়েটের একাধিক সাবেক উপাচার্য ও অ্যালামনাই নেতারা অচলাবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছেন। উপাচার্যের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকও হয়েছে, কিন্তু সংকট কাটেনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরীফ এনামুল হকের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, সন্ত্রাসী ছাত্রদের মদদ জোগানোসহ অনেক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, যা উপাচার্যের মতো মর্যাদাবান পদে তাঁর থাকার নৈতিক অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। শিক্ষকেরা এমনই অনড় আন্দোলনে নেমেছেন যে তিনি চলে না যাওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটবে বলে মনে হচ্ছে না।
বুয়েটের বর্তমান উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও শিক্ষকদের অভিযোগগুলো গুরুতর। শিক্ষক নিয়োগে ও পরীক্ষাপদ্ধতিতে অনিয়মের অভিযোগ থেকে যে বুয়েট মুক্ত ছিল, বর্তমান উপাচার্যের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ উঠেছে। বুয়েটে সহ-উপাচার্যের পদ আগে ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে এই পদ সৃষ্টি করা হয়, কিন্তু তখন এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি; পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারও এ পদে নিয়োগ দেয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন একজন শিক্ষককে, যাঁকে নিয়োগ দিতে গিয়ে অর্ধশতাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙাতে হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অনিয়ম করে সাবরেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চূড়ান্তভাবে তাঁকে রেজিস্ট্রার পদে বসানোর লক্ষ্যে। উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলাম এই অভিযোগগুলো ঠিক নয় বলে নাকচ করেছেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে বলে চলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। গুরুতর বিষয়, বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষকদের অনেকেই সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষা-গবেষণা, পঠন-পাঠনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার পরিবর্তে সরকারের আগ্রহ যদি হয় ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সরকারি দলের অনুগ্রহভাজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধিপত্য কায়েম করা, তাহলে এমন সংকট সৃষ্টি হওয়ারই কথা। সব সরকারের আমলেই আমরা এটা দেখছি। এই ধ্বংসপ্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখনই এটা থামানোর উদ্যোগ নেওয়া সরকারের একান্ত কর্তব্য।

No comments

Powered by Blogger.