নিয়ম রক্ষা নয়, কার্যকর ভূমিকা রাখুন-সংসদ ও বিরোধী দল

মঙ্গলবার শুরু হওয়া প্রথম অধিবেশনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের যোগ না দেওয়া আমাদের সংসদীয় রাজনীতিতে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে। খ্রিষ্টীয় বছরের শুরুর এই অধিবেশনে প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেন, সরকার ও বিরোধী দলের সর্বোচ্চসংখ্যক সাংসদ তার ওপর বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।


তাঁরা নিজ নিজ এলাকার সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। প্রশ্ন হলো, বিরোধী দল এ সুযোগ হাতছাড়া করবে কেন? রাষ্ট্রপতির ভাষণে সাধারণত সরকারের সাফল্য ও কৃতিত্বের বর্ণনা থাকে, ব্যর্থতার কথা থাকে না। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো সরকারের ব্যর্থতা জনগণের সামনে তুলে ধরা। জাতীয় সংসদে বিরোধী দল না গেলে দেশবাসী মনে করবে, এই সম্পর্কে তাদের কোনো বক্তব্য নেই কিংবা রাষ্ট্রপতির বয়ানে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, শেয়ারবাজারের অস্থিরতাসহ দেশের চলমান সমস্যা নিয়ে বিরোধী দল কথা বলবে, এটা কেবল জনগণের প্রত্যাশা নয়, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নৈতিক কর্তব্যও।
সংসদ বর্জনের ব্যাপারে বিরোধী দল একেক সময় একেক অজুহাত খাড়া করে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কোনো অজুহাতেই লাগাতার সংসদ বর্জন চলতে পারে না। সংসদকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব সরকারি ও বিরোধী দল উভয়েরই। ১৮৬ কার্যদিবসের অধিবেশনে ৪৪ দিন অনুপস্থিত থেকে এ কথা বলা যৌক্তিক নয় যে সরকারি দল কথা বলতে দেয় না। তারা যদি সংসদেই না যায়, কথা বলবে কীভাবে?
এ অবস্থায় যদি সংসদ সদস্যপদ রক্ষার জন্য বিরোধী দল এক বা দুই দিনের জন্য সংসদে যায়, সেটি হবে দুর্ভাগ্যজনক। দেশবাসী আশা করে, তারা সংসদে এসে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে, তাদের কল্যাণে আইন প্রণয়ন করবে। সংসদ কোনো দলের সম্পত্তি নয়। সংসদ কার্যকর করতে হলে সরকারি ও বিরোধী দলের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। সরকারি দল অন্যায় আচরণ করলে কিংবা দেশবাসীর ওপর অগণতান্ত্রিক আইন চাপিয়ে দিলে বিরোধী দল অবশ্যই প্রতিবাদ করবে। এমনকি তারা সংসদ থেকে সাময়িকভাবে বের হয়েও যেতে পারে। কিন্তু তা কখনোই স্থায়ী বর্জনের পথ নিতে পারে না। একদিকে বিরোধী দল উপনির্বাচনে অংশ নেবে, অন্যদিকে সংসদ বর্জন করবে—এটি স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়।
বিএনপি ও তাদের সহযোগীদের উচিত হবে অবিলম্বে সংসদে গিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নেওয়া এবং দেশ ও জনগণের সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখা। বিরোধী দলকে অবশ্যই সংসদ বর্জনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও এই আশ্বাস দিতে হবে যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে সংসদে খোলামেলা আলোচনা হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংখ্যালঘিষ্ঠের মুখ বন্ধ করার পরিণাম কখনোই ভালো হয় না। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংসদ যে কার্যকর হয় না, সেই সত্যটিও তাদের উপলব্ধি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.