নতুন জনপ্রতিনিধি নিয়ে সংসদে যাবে কি বিএনপি?-সফল উপনির্বাচন

গণতন্ত্রের জন্য সুখবর হলো, দুটি আসনেই উপনির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পৌর নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় সংসদীয় আসনেও নির্বাচন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়ল, তেমনি সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হলো না।


দ্বিতীয় খবর হলো, সরকারি দল আওয়ামী লীগের একটি আসন হারানো। রাজনীতির জন্য বিএনপির এই বিজয় তাৎপর্যপূর্ণ। দলটি জনসমর্থন বাড়াতে পারছে, একই সঙ্গে সরকারও নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করার অসাধু চেষ্টায় লিপ্ত হয়নি। সেই অর্থে বিএনপির বিজয় একটি আসন, কিন্তু সরকারের বিজয় ভোট কারচুপির আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করা। উভয়েরই উচিত একে ইতিবাচকতার সঙ্গে গ্রহণ করা।
বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ-১ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি আসনেই গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এবার হবিগঞ্জের আসনটি তাদের হাতছাড়া হলো। অন্যদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হলেও এ আসনে গত নির্বাচনের পর থেকে তাদের ভোট প্রায় ৩৪ হাজার কমেছে। পৌর নির্বাচনের মতো সংসদের উপনির্বাচনেও সরকারি দলের ভোট কমা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বিরোধী দল সেই সুযোগ নিতে চাইবে—সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগামী রোববার বিএনপির পক্ষ থেকে হরতাল ডাকা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, অনেক কেন্দ্রে সরকারি দলের প্রার্থী জবরদস্তি করেছেন এবং তাদের ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ভোট জালিয়াতির অভিযোগও তারা করেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের এই দাবি অস্বীকার করেছে। বাস্তবেও বড় ধরনের অসংগতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার পরও নিজেরা বঞ্চিত হয়েছে মনে করলে বিএনপির প্রার্থীর উচিত উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসহ আদালতের দ্বারস্থ হওয়া, হরতাল ডাকা নয়। সরকার যে বিএনপি আমলের মাগুরা ধরনের নির্বাচন করেনি, এই সত্য তো উপেক্ষণীয় নয়! স্থানীয় ও জাতীয়—উভয় নির্বাচনই ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে এবং সব রাজনৈতিক দলও নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। এতে প্রমাণিত হয়, সরকার দায়িত্বশীল আচরণ করলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে এবং বিকশিত হতে পারে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। আমরা আশা করব, বিএনপি জনগণের রায় মেনে নেবে এবং রোববারের হরতাল প্রত্যাহার করবে। হরতাল করে ভোটের ফল পাল্টানো যাবে না, জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে। কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল সেই কর্মসূচি নিতে পারে না।
বিএনপি একজন নতুন সাংসদ পেয়েছে। প্রশ্ন উঠবে, এই সাংসদও বেতন-ভাতার সুবিধার সাংসদ থাকবেন, নাকি সংসদে গিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন? বিএনপি মনে হয় জয়টাই চায়, জয়ীর দায়িত্ব পালন করতে চায় না। জয় দরকার রাজনীতির স্বার্থে, কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য চাই কার্যকর সংসদ। সরকার বিরোধী দলকে সেই সুযোগ না দিলে এবং বিরোধী দল জেদ করে সেই সুযোগ না নিলে কী অর্থ এই নির্বাচনের? নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির প্রধান স্থান সংসদ, এই দায়িত্ব যেন তাঁরা বিস্মৃত না হন।

No comments

Powered by Blogger.