খুন-ডাকাতির ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচার হতে হবে-আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

রাজধানী ঢাকায় একজন সাংবাদিক ও তাঁর স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করার পর অপরাধীরা নিরাপদে চলে গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজন মানুষকে আবাসিক ফ্ল্যাটে সবার অজান্তে খুন করা সহজ কথা নয়। পেশাদার খুনি ছাড়া এটা সম্ভব নয়।


তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এত থানা, এত পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষকে এত সহজে খুন করা সম্ভব হচ্ছে? বাসার মধ্যেও যদি নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেছনে সরকারের কোষাগার থেকে বিপুল ব্যয় করে লাভ কী?
যদি এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতো, তাহলে হয়তো প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই খুন, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। গত বুধবার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে দুর্বৃত্তরা যৌতুকের দাবিতে এসিড ছুড়ে একজন গৃহবধূর শরীর ঝলসে দিয়েছে। শুক্রবার গুলশান লেক থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাতজন তরুণ-তরুণীকে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বটে, কিন্তু তিক্ত বাস্তবতা হলো, এই ব্যস্ত নগরেও অনায়াসে যুবককে মেরে ফেলা যায়।
থানা পুলিশের পক্ষে জনে জনে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়—সেটা সবাই বোঝেন। সেটা কেউ আশাও করেন না। কিন্তু নাগরিকেরা অন্তত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদা সতর্ক অবস্থান আশা করে। এ ক্ষেত্রে যে বেশ ঘাটতি রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা-তৎপরতা জালের মতো বিস্তৃত রাখতে হবে। এ রকম নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা খুবই সম্ভব। অপরাধীরা যদি বুঝতে পারে যে পুলিশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে, তাহলে অপরাধমূলক তৎপরতা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
২২ জানুয়ারি কুড়িল বিশ্বরোডে পোশাকশিল্পের একজন শ্রমিক খুন হয়েছেন, এর আগে গাবতলী বাস টার্মিনালে এক ব্যক্তির বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, দিলকুশায় জমি দখল নিয়ে খুন হয়েছেন যুবদলের এক নেতা। আগারগাঁওয়ে দিনদুপুরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা খুন, রাজধানীতে সরকারদলীয় দুজন নারী সাংসদের বাসায় ডাকাতি, কয়েক দিন আগে সরকারদলীয় একজন সাংসদের পিস্তলের গুলিতে নিজেদের দলেরই আরেকজন নেতা খুনসহ আরও কিছু ঘটনা নাগরিকদের বিচলিত করে।
সন্ত্রাসীরা মারা গেলে মানবাধিকার সংগঠন তাদের পক্ষ নেয় বলে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন, তা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকার ব্যাপারে সরকারের ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ। এখানে কারও পক্ষ নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। আসল ব্যাপার হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নীতিনিষ্ঠ হতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার। তথাকথিত ক্রসফায়ার যুগ যুগ ধরে চালানো হচ্ছে, কিন্তু তাতে কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে? হয়রানিমূলক মামলার নামে খুন-ডাকাতির মামলার আসামিদের ছেড়ে দিয়ে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।
অপরাধমূলক প্রতিটি ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, দ্রুত তদন্ত ও বিচার এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষের অন্যতম চাহিদা হলো জীবনের নিরাপত্তা। এ ব্যাপারে কোনো রকম শৈথিল্য চলতে পারে না। এখানে কোনো অজুহাতের সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.