রাজনীতিই গুরুত্ব পাবে হিলারির সফরে-টিকফা অনিশ্চিত, নিরাপত্তা চুক্তির সম্ভাবনা নেই by মেহেদী হাসান ও আবুল কাশেম

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে বহুল আলোচিত 'ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট' বা 'টিকফা' চুক্তি স্বাক্ষর হবে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করার কথা দুই দেশ ঘোষণা দিলেও তা চুক্তিতে গড়ানোর সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দেশে চলমান অস্থিরতার মধ্যে হিলারির ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বিরোধীদলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের বাইরে রাজনৈতিক ইস্যুই গুরুত্ব পেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই এখন বড় ইস্যু। হিলারির সঙ্গে আলোচনায় সেই সঙ্গে যোগ হতে পারে আঞ্চলিক রাজনীতির নানা দিক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরাও বলছেন, বর্তমান সরকারের প্রায় সাড়ে তিন বছর হতে চলেছে। এ সময় হিলারির সফরে অস্থির রাজনীতি প্রভাব ফেলার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
টিকফা : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'টিকফা' চুক্তিটি আগামী শনিবার হিলারির সফরের সময় স্বাক্ষর হবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে এ চুক্তির খসড়া তৈরির পর তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে মতামত ও নির্দেশনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে গত ৪ এপ্রিল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, 'খসড়া পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মতামত ও নির্দেশনা চেয়েছি। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ফাইলটি এখনো ফেরত আসেনি। চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি সরকার চূড়ান্ত করবে।' তিনি জানান, সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফাইলে ইতিবাচক মতামত দেওয়া হলে তা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য পাঠানো হবে। এরপর চুক্তি স্বাক্ষরের আগে মন্ত্রিপরিষদ সভায় উপস্থাপন করে অনুমোদন নেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ যুক্তরাষ্ট্রের যখনই কোনো কর্মকর্তা বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রী, সচিব বা সরকারের অন্যদের সঙ্গে দেখা করেন বা ব্যবসায়ী ফোরামে বক্তব্য দেন, তখনই এ চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর জোর দেন। চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা করেন। ওইদিন অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরের খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর চুক্তিটি স্বাক্ষর করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে যে পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে, শুল্ক বাবদ তার কয়েকগুণ বাংলাদেশ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবি বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। এ চুক্তি না হওয়ায় এসব বিষয়ে কোনো আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে না বলে মনে করছে সরকার। টিকফা সই হলে দ্বিপক্ষীয় একটি প্লাটফরম তৈরি হবে। যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেনও এ কথা স্বীকার করে বলেন, এ চুক্তি হলে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারসহ অন্যান্য বিষয়ে দরকষাকষির সুযোগ থাকবে। গত সপ্তাহে এফবিসিসিআইর এক অনুষ্ঠানে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দাবি করেন। ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত তখন বলেন, টিকফা স্বাক্ষরিত হলে এ চুক্তির অধীনেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সম্পর্কিত কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য এক দশক ধরে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। 'ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট' বা 'টিফা' নামে এর শুরু ২০০১ সালে। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন বিষয় থাকার অভিযোগে দেশের অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ টিফা স্বাক্ষরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ফলে নামটি অনেকের মনে নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম দেয়। তাই পরবর্তী সময়ে দুই দফা নাম পরিবর্তন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে। এখন 'টিকফা' নামে এ চুক্তির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। চুক্তির খসড়া তৈরিসহ সবকিছুতেই সরকার কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে।
সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশ পাইরেটেড কোনো পণ্য বাজারজাত করতে পারবে না। শ্রমিকের মানও হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। তা ছাড়া ওষুধ প্রস্তুত ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডাবি্লউটিও'র কাছ থেকে ট্রিপসের আওতায় সে সুবিধা ভোগ করছে, তাও বাতিল হতে পারে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওইসব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ চুক্তির খসড়া উন্মুক্ত করা হয়নি। আর চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে বাংলাদেশের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতির ব্যাপারেও কোনোরকম খোলাসা করা হয়নি। চুক্তির বিষয়গুলো পর্যালোচনা করার জন্য গত ২৮ থেকে ৩০ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান, পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাবি্লউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী। তখন দুর্নীতি, শ্রমমান, মেধাস্বত্ব ও পরিবেশ ইস্যু বাদ দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তি তুলে ধরা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম যখন চুক্তির প্রস্তাব দেয়, তখন এর নাম ছিল 'ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট' বা 'টিফা'। ২০০২ সালে প্রণীত টিফার প্রথম খসড়াটিতে ১৩টি ধারা ও ৯টি প্রস্তাব ছিল। পরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ২০০৫ সালে সংশোধিত আকারে দ্বিতীয় দফায় 'টিফা'র প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ২০০৫ সালে সংশোধিত 'টিফা'য় সাতটি ধারা ও ১৯টি প্রস্তাব বহাল থাকে। আর এ সময় সংশোধিত 'টিফা'য় ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে বিনিয়োগ বাতিলসহ মামলার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টিও শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি টিফা চুক্তির যে খসড়া পাঠিয়েছিল তার ১৫, ১৬ ও ১৭ নং প্রস্তাবে মেধাস্বত্ব অধিকার, আন্তর্জাতিক শ্রমমান এবং পরিবেশগত সুরক্ষা_এ তিনটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন বিষয় থাকার কারণে দেশের অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ টিফা স্বাক্ষরের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া দুর্নীতির ইস্যু নিয়েও সরকারের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হিসেবে খ্যাত ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশের আপত্তি আমলে নিয়ে নতুন করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা-সংক্রান্ত 'টিআইসিএফ' চুক্তি স্বাক্ষরের আগ্রহ প্রকাশ করলে বাংলাদেশও তাতে নীতিগত সম্মতি জানায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চারদলীয় জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ টিফা চুক্তিতে সই করতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। সে সময় চুক্তির ব্যাপারে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক সমঝোতাও হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে_এমন অভিমত তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অ্যাকশন এইড ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে এক চিঠিতে চুক্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছিল। এরপর চুক্তির ব্যাপারে 'ধীরে চলো' নীতি গ্রহণ করে চারদলীয় জোট সরকার। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির খসড়া পাঠানোর পরও এ নিয়ে জোট সরকারের আমলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। শর্ত হিসেবে ওই খসড়ায় যুক্ত হয় ঘুষ ও দুর্নীতিবিরোধী ধারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় চুক্তিটি সম্পাদনের পক্ষে মত দেয়। সে সময় মন্ত্রণালয়ে পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ঘুষ ও দুর্নীতিবিষয়ক শর্তটি কার্যকর করতে রাজি। তাই এতে সই করলে বাংলাদেশের অসম্মান বা আপত্তির কারণ নেই। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়। ২০০৯ সালের ২০ অক্টোবর ইউএসটিআর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সহকারী মাইকেল ডিলোনি তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরও এ বিষয়টি নানা জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের ৩০টি রাষ্ট্রের সঙ্গে টিফা চুক্তি সই করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিরাপত্তা : নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হলেও এ বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে এ কথা জানিয়েছে। উল্লেখ্য, হিলারির সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সম্ভাব্য আলোচ্যসূচিগুলোর মধ্যে 'নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়াদি' স্থান পেয়েছে। এর আগে গত ১৯ মে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তাবিষয়ক প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিরাপত্তা খাতে অনেক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে এগুলোর মধ্যে আরো সমন্বয়ের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, নিরাপত্তা চুক্তির ধারণা অনেক ব্যাপক। এ ধরনের চুক্তি হলে এর পক্ষগুলো অভিন্নভাবে ঝুঁকি মোকাবিলা করে। বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেই তিনি জানেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নিরাপত্তা চুক্তি হলে তা এ অঞ্চলের রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মৈত্রী ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। মিয়ানমারে গণতন্ত্রীকরণের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক সমঝোতা রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও এমনটি হলে পাকিস্তান এ অঞ্চলে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
তবে অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র হিসেবে পেলে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এর কারণ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অগ্রগতির উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওই দেশগুলো নিরাপত্তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়তে হয়নি। তারা অর্থনীতির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পেরেছে।
বাংলাদেশের জন্য সত্যিই কোনো নিরাপত্তাঝুঁকি আছে কি না, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, গতানুগতিক নিরাপত্তাঝুঁকি হিসেবে যা মনে করা হয় যেমন অন্য কোনো দেশের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। তবে গতানুগতিক নয় এমন নিরাপত্তাঝুঁকি বাংলাদেশের আছে। তিনি খাদ্যনিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মানবপাচার, মাদকপাচার, আন্তদেশীয় অপরাধ, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অনেক ঝুঁকি বাংলাদেশের আছে, যা মোকাবিলায় দুই দেশের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তা চুক্তি বা এর আদলে যা কিছুই হবে তাতে ভারতের সম্মতি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
রাজনীতি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের মেয়াদের শুরুর দিকে আসা আর সাড়ে তিন বছর পর আসা এক কথা নয়। সাড়ে তিন বছর পরে যে সফর হয় তাতে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের চেয়ে রাজনৈতিক বিষয় বেশি গুরুত্ব পায়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, হিলারির মুখ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হওয়ার আশাবাদ শোনা গেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু হবে না। রাষ্ট্রদূত মজিনা প্রায়ই বলছেন, দুই দলকে সংলাপে বসে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ ঠিক করতে।
সূত্রগুলো আরো জানায়, সরকার সংগতভাবে তার মেয়াদে অর্জনগুলোকে হিলারির সামনে তুলে ধরবে।
গণতন্ত্র, সন্ত্রাস দমন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, বাণিজ্য প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতিও তুলে ধরা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির আরো সুযোগও চাইতে পারে।
অন্যদিকে বিরোধী দল চাইবে, মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, নির্যাতন-নিপীড়নের বিষয়গুলো তুলে ধরতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির বিষয়টিও উঠে আসতে পারে তাদের বক্তব্যে। তবে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় এ বিষয়টি তোলা হলে যুক্তরাষ্ট্রকে জোর দিয়ে বলতে পারবে, অন্য কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। দলীয় সরকারের অধীনেই সব দেশে নির্বাচন হয়।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখে এজেন্ডা তৈরির কাজ চলছে। দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যু আলোচনায় স্থান পেতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি এ এম রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে আবারও অনুরোধ জানাতে পারে। অন্যদিকে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা খাতে বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে।
সূত্র আরো জানায়, আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতির ইস্যুগুলোও হিলারির সফরে আলোচিত হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত ইতিবাচক সম্পর্ক, উপআঞ্চলিক সহযোগিতা, বিশাল সাগর এলাকা জয় এ দেশের গুরুত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার সঙ্গে পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাও জড়িত। বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক আরো জোরদারের চেষ্টা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নেতা। উদার মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবেও বিশ্বে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা আছে। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও বিশ্বশান্তি উদ্যোগ ও রাজনীতিতে এ দেশের সমর্থন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রয়োজন বাংলাদেশের। তাই এ বিষয়গুলো হিলারির আসন্ন সফরে গুরুত্ব পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

No comments

Powered by Blogger.