কালের পুরাণ-জিয়া ও এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপসরফা! by সোহরাব হাসান

গত সপ্তাহে এক কৌতূহলী পাঠক নিজেকে আইনের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে সংবিধানের প্রথম তিনটি সংশোধনীতে কী আছে, জানতে চেয়ে ই-মেইল করেছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানে এ পর্যন্ত ১৪টি সংশোধনী হয়েছে। এর মধ্যে চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে।

বাকি সংশোধনীগুলো আলোচিত না হওয়ায় সাধারণ নাগরিকেরা সে সম্পর্কে কিছু জানেন না। তা ছাড়া সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি এমনই জটিল ভাষায় করা হয়, যা সাধারণের পক্ষে বোঝা কঠিন। ‘অমুক’ শব্দের স্থলে ‘অমুক শব্দ’ প্রতিস্থাপিত হবে বললে আমার মতো বে-আইনের ছাত্র কিছুই বুঝতে পারবে না।
১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই আনা প্রথম সংশোধনীতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারসংক্রান্ত আইনের রক্ষাকবচ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধানসংবলিত কোনো আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।’ বিশেষ কমিটি এবার এখানে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে। এর ফলে প্রতিরক্ষা বাহিনী ও সহায়ক বাহিনীবহির্ভূত যেকোনো ব্যক্তিবিশেষেরও বিচার করা সম্ভব হবে।
সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। মূল সংবিধানে নিবর্তনমূলক আইন কিংবা জরুরি অবস্থা জারির বিধান ছিল না। এই সংশোধনীবলে নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কিংবা রাষ্ট্র কাউকে বিপজ্জনক মনে করলে গ্রেপ্তার করতে পারেন। এই আইনবলে সব সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনক প্রতীয়মান হয় যে এমন জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যেকোনো অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের প্রয়োজন হইবে।’
সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এককভাবেই জরুরি অবস্থা জারি করেন। কেননা তখন সংসদ কার্যকর ছিল না এবং তিনি নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন। একজন ব্যক্তি যদি সংবিধানবলে গোটা রাষ্ট্রের মালিক হন, তাহলে সেই রাষ্ট্র কতটা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের আমলে তার প্রমাণ আমরা বহুবার পেয়েছি।
সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী আনা হয় ১৯৭৪ সালের ২৮ নভেম্বর। এটি ছিল ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও প্রজাতন্ত্রী ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি কার্যকর করিবার উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের কতিপয় বিধানের অধিকতর সংশোধনকল্পে আইন’।
এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সীমানা নির্ধারণ, ছিটমহল বিনিময় করার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ছিটমহল বিনিময় হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ছিটমহলের আনুমানিক ২ দশমিক ৬৪ বর্গমাইলের ওপর দখল পায়। এর বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহলের দখল বুঝে পায়। কিন্তু দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার সঙ্গে পাটগ্রামের পানবাড়ী মৌজার সঙ্গে যুক্ত করে দিতে তিনবিঘা করিডরের কাছে ১৭৮–৮৫ মিটার জায়গা স্থায়ী ইজারা এখন হয়নি। বাংলাদেশের লোকজন শুধু দিনের বেলা চলাচল করতে পারেন। আশা করা যাচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন ঢাকা সফরের সময় এর স্থায়ী সমাধান হবে।
যে কারণে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল হয়েছে, সেই একই কারণে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীও বাতিল হয়ে যায়। সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্র এবং গণতন্ত্র। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে হবে। মূল সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে ছিল ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ চতুর্থ সংশোধনীতে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। দ্বাদশ সংশোধনীতে অবশ্য তা ফিরে আসে।
পঞ্চম সংশোধনীতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিলের মধ্যে প্রণীত সব ফরমান-আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান যেমন জায়েজ করা হয়েছিল, তেমনি সপ্তম সংশোধনীতে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সব সামরিক আইন আদেশ, নির্দেশ অধ্যাদেশ হালাল করা হয়েছিল।
দুই ক্ষেত্রেই এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। উচ্চ আদালত দুই সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জিয়া-এরশাদকে ছাড়ার তো প্রশ্নই আসে না। পাকিস্তানের সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, দেশে ফিরতে পারছেন না। আমাদের সামরিক শাসকদের একজন প্রয়াত, আরেকজন গণতান্ত্রিক শক্তির আশকারা পেয়ে লম্ফঝম্ফ করছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন নিয়ে শুরু থেকেই তেলেসমাতি চলে আসছে। যখন যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাঁরা তাঁদের মতো করে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেন এবং সংবিধান সংশোধন করেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়া ও এরশাদের শাসনকে অবৈধ ঘোষণার পর তাঁদের নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। বাংলাদেশে প্রথম পর্বে গণতন্ত্র খুন হয় ১৯৭৫ সালে। তারপর দীর্ঘ ১৬ বছর সামরিক শাসন জেঁকে বসেছিল।

দুই.
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেশবাসীর কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন, বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনবেন এবং একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবেন। মানুষ যে তাঁর কথায় আস্থা ব্যক্ত করেছিল, ভোটের ফলই তার প্রমাণ।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে এবং প্রথম দিকে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও এখন সেটি ঝেড়ে ফেলতে পেরেছে; বিশেষ করে, চিহ্নিত কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ পুরোদমে চলছে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে চার হাজার চুয়াত্তর পৃষ্ঠার বিশাল সাক্ষ্যপ্রমাণ ও দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী দল। অন্যান্য অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ সুষ্ঠুভাবে এগোলে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজে কোনো বাধা থাকবে না। তবে বাংলাদেশে যেকোনো বিচারকাজ শেষ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শেষ করতে ১৩ বছর লেগেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজও যে দু-এক বছরে শেষ করা সম্ভব নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের পর উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকবে। তাই এ বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ শেষ করার জন্য হলেও আওয়ামী লীগের আরেকবার ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন।
কিন্তু আড়াই বছরের মাথায় এসে সরকার যেন সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে। ফরজ কাজ বাদ দিয়ে ওয়াজিব নিয়ে টানাটানি করছে। কথায় আপসহীন থাকলেও নীতিতে প্রতি পদে আপস করে চলছে। মানুষ যদি সাদা চোখে দেখে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্যটি ক্ষীণ হয়ে আসছে, তাহলে কেন তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে? আওয়ামী লীগ যে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ওয়াদা করেছিল, সে কাজটি সহজ করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো-পরিপন্থী আইন করার ক্ষমতা এমনকি জাতীয় সংসদেরও নেই।
আমাদের সংবিধানের মৌল নীতি হলো, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শনও তা-ই। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবি করেছিলেন, ১৪ দলের সঙ্গে তাদের আদর্শগত ঐক্য আছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে তাদের ঐক্য কৌশলগত। একে ঐক্য না বলে নির্বাচনী সমঝোতাও বলা যায়। এখন দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ ১৪ দল থেকে সরে আসছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ এখন কোন দিকে যাবে? সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ কমিটি ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদে যে সুপারিশ পেশ করেছে, তা দেশের সেক্যুলার, প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতন্ত্রকামী মানুষকে হতাশ করেছে। কমিটির প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনার ওপর সন্নিবেশিত হবে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে/ পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে।
তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে, রাষ্ট্রধর্ম—প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম অধিকার নিশ্চিত করিবেন।’ ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম কথার অর্থ হলো অন্যান্য ধর্ম রাষ্ট্রের নয়, অন্য কারও।
এই দুটি সংশোধনীর সঙ্গে বিশেষ কমিটি মরহুম জিয়াউর রহমান এবং জিন্দান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামটিও যুক্ত করে দিতে পারত।
যে নীতির সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও অস্তিত্ব জড়িত, সেই নীতি কেন বিসর্জন দিয়ে তাদের ভাষায় ‘পাকিস্তানি চর’ জিয়া ও এরশাদের নীতি গ্রহণ করল? আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্যই হলো, একটি সামরিক ছত্রচ্ছায়ায় গঠিত, অন্যটি জনগণের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসেছে। একটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, অন্যটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আড়ালে ধর্মীয় রাজনীতিকে মদদ দেয়।
কেউ হয়তো রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা বলবেন? বাস্তবতা তো মানুষ তৈরি করে। পাকিস্তান আমলে এ দেশে সমাজতন্ত্র কথাটি প্রকাশ্যে বলা যেত না। কমিউনিস্ট নেতারা আত্মগোপনে থাকতেন। এখন নিশ্চয়ই তার প্রয়োজন নেই। আমরা স্বাধীনতার ৪০ বছর উদ্যাপন করছি। এই ৪০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক অগ্রসর হয়েছে, সামাজিক ক্ষেত্রেও অনেক উন্নতি ঘটেছে। তার পরও সামরিক শাসকদের পশ্চাৎপদ চিন্তা ও ধ্যান-ধারণা সংবিধানে আঁকড়ে রাখার যুক্তি নেই, প্রয়োজনও দেখি না।
২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে, এ দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উন্মাদনা পছন্দ করে না। রাষ্ট্রকে ধর্মের সঙ্গে মেলাতে চায় না। রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে কোনোভাবেই রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ খাপ খায় না। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার।
১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণা কায়েম কিংবা রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মকে বৃত্তাবদ্ধ করতে নয়। রাজনীতিতে ধর্ম যুক্ত করলে কী মহা সর্বনাশ ঘটে, তার প্রমাণ আজকের পাকিস্তান। বাংলাদেশে সেই অবস্থা কখনো তৈরি হবে বলে মনে করি না।
আজকের তরুণেরা ধর্মকে রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করতে চায় না, আধুনিক প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে চায়। তারা স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে যুক্ত করতে চায়। তারা শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগাতে চায়।
যে দলটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, যে দলটি চার মূলনীতির ভিত্তিতে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছে, সেই দলটি আজ কেন সামরিক স্বৈরশাসকের নীতি ও অপকৌশল সংবিধানে যুক্ত করবে? সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে যদি তারা নীতি ও আদর্শে অনড় থাকতে পারে, আজ কেন পারবে না? কিসের ভয়? গুটি কয়েক মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ ও সুবিধাবাদীকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
যে ভোটাররা ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, তাঁরা সামরিক শাসক জিয়া ও এরশাদ-প্রবর্তিত নীতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য দেখতে চান না, সংবিধান সংশোধনের নামে কোনো গোঁজামিল চান না। চান দলটির চার মূলনীতিই সংবিধানে সমুন্নত রাখুক।
আওয়ামী লীগ তাঁদের প্রতি ভরসা রাখবে, না সামরিক শাসকের অপচ্ছায়ার প্রতি?

 সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net

No comments

Powered by Blogger.