দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়-নাগরিকের মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া যায় না

একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব থাকে না বলে জনগণের ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভ যুক্তিসঙ্গতভাবে প্রশমিত করার ক্ষেত্রে তাদের সামর্থ্যও লোপ পায়। লোকপাল বিলে দুর্নীতিবিরোধী কতিপয় বিধি সংযোজনের মাধ্যমে একে আরও শক্তিশালী করার সমর্থনে অনশন শুরু করার পূর্বমুহূর্তে আন্না হাজারেকে অন্যায়ভাবে আটক করা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের

অনেককে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে ইউপিএ সরকার তাদের আসল নোংরা, দমনমূলক চেহারা উন্মোচিত করল। গণতন্ত্রে কোনো প্রতিনিধিত্বশীল সরকারই নাগরিকদের ভিন্নমত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করতে পারে না। অযৌক্তি, অন্যায্য ও সন্দেজনকভাবে ডিজাইন করা পরিস্থিতির ব্যাপারে জোর দেওয়া হলেও সবাই জানেন, এটা প্রতিবাদকারীদের গণতান্ত্রিক অধিকার অগ্রাহ্য করার মতো ছিল না। পরিস্থিতিকে সৎভাবে মোকাবেলা না করে ইউপিএ সরকার একটার পর একটা উত্থিত দুর্নীতির অভিযোগকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেছে। পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে তারা দোষারোপ ও নোংরা চাতুরীর আশ্রয় নেয় এবং জবাবদিহিতা ও সংশোধনমূলক প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে সোচ্চার মানুষদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সময়ে সময়ে সরকারের আতঙ্কগ্রস্ত ভাব, ভুল হিসাব কষা ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সরকারের বাইরের সবার কাছেই রাজনৈতিকভাবে নির্বুদ্ধিতা মনে হয়েছে। কার্যকর লোকপাল বিল প্রণয়নের ব্যাপারে টিম আন্না ও নাগরিক সমাজের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সমঝোতায় উপনীত হওয়ার কয়েকটি সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও মনমোহন সরকার নিজেদের মতো করে বিল উত্থাপনের তামাশায় লিপ্ত হয়। এ ব্যাপারে জাতীয় মনোভাবকে তারা যে বুঝতে ভুল করেছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আন্না হাজারে এ বিষয়কে হয়তো অবয়ব দিয়েছেন। কিন্তু এই দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রাম এখন সারাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে এমন এক অবস্থায় পেঁৗছেছে যে, এখানে তা আর এক ব্যক্তি বা তার টিমের ওপর নির্ভর করে নেই। লাখ লাখ সাধারণ মানুষই হলো এখন এই আন্দোলনের প্রকৃত শক্তি এবং এই শক্তিই ইউপিএ সরকারকে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ ইউপিএ সরকারকে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অস্বচ্ছ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও লোভতাড়িত বলে মনে করে। দলীয় রাজনীতির ঊধর্ে্ব থাকা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম দুর্নীতিকেই ভারতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এবং এটা ক্যান্সারের মতো গোটা জাতির নৈতিকতাকে গ্রাস করছে বলে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থার কারণেই টিম আন্না এতবড় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছেন। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অবসানের জন্য শক্তিশালী পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার একটি বিরল সুযোগ রয়েছে বলে সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটা ধারণা গেঁথে রয়েছে এবং মিডিয়া কাভারেজ এ ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে যদি ইউপিএ পাত্তা না দেয়, গণতন্ত্রের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতি সম্মান না দেখায় এবং একটি প্রণোদনা সৃষ্টিকারী লোকপাল বিল আনয়নের পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তাদের এ জন্য অনেক রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে। সম্ভবত আগামী সাধারণ নির্বাচনের অনেক আগেই।
লেখা দুটিই ভাষান্তর করেছেন সুভাষ সাহা

No comments

Powered by Blogger.