দূষণ ও দখল রোধে চাই সজাগ কর্তৃপক্ষ-কাঠের বিড়াল ইঁদুর ধরে না

ওপরে বসে আছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, নিচে পরিবেশ অধিদপ্তর আর তার নিচে আছে থানা-পুলিশ। এর ওপরে আছেন আদালত, যেখান থেকে প্রায়ই দখল উচ্ছেদ ও দূষণ বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ হচ্ছে কি? তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও স্থায়ী ফল পাওয়া যায় না।

বিভিন্ন এলাকায় নদী-জলাশয় দূষণ ও দখল অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলছে। এখন এসব রোধে একটি স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় কমিটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ এসেছে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাঠের বিড়াল ইঁদুর ধরে না। নতুন কর্তৃপক্ষ হবে, তাকে যথেষ্টভাবে ক্ষমতায়িত করা হবে, সে তো ভালো কথা। এত কর্তৃপক্ষে যখন কাজ হয় না, তখন আরেকটি কর্তৃপক্ষ এসে কী করবে, তা ভেবে দেখা দরকার। কর্তৃপক্ষের আধিক্যে যেন পরিবেশ ভারাক্রান্ত না হয়ে ওঠে, সেটা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় রাজধানীর চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, বংশী—এসব নদ-নদীর দূষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর প্রতিকারের লক্ষ্যে একটি খসড়া পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীদূষণের জন্য সরকারের কয়েকটি কর্তৃপক্ষ অনেকাংশে দায়ী। যেমন—রাজধানীর বর্জ্যের প্রায় অর্ধেক এসব নদীতে ফেলা হয়। কে ফেলে? এ ক্ষেত্রে ওয়াসার দায় বেশি। সিটি করপোরেশনও কম দায়ী নয়।
প্রায় ১০০ বছর আগে রাজধানীর ওয়ারীতে আধুনিক আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার সময় সেখানে পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। অথচ মাত্র ৫০-৬০ বছর আগে গড়ে তোলা গুলশান-বনানী এলাকায় সে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই এলাকার পয়োবর্জ্য ফেলার জন্য বেছে নেওয়া হয় চারপাশের নদী। তখন থেকেই এসব এলাকার চারপাশের জলাধার দূষিত হতে থাকে। একটি মহানগর এমন পরিকল্পনাহীনভাবে যে গড়ে তোলা হতে পারে, তা অবিশ্বাস্য।
সম্প্রতি পয়োনিষ্কাশনের আধুনিক ব্যবস্থা চালু করার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্যানসারের মতো দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক দেরিতে হলেও সংসদীয় স্থায়ী কমিটি উদ্যোগ নিয়েছে। এখন স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ যদি আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে, কাজ হবে নিশ্চয়ই। ঢাকার চারপাশের মানুষ দূষণমুক্ত পরিবেশে এক সোনালি সকালের অপেক্ষায় থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.