সরল গরল-দুই নেত্রীর ‘তত্ত্বাবধায়ক বাতিল’ ভাবনা by মিজানুর রহমান খান

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান কতটা কাছাকাছি বা দূরে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ আপাতত অগ্রাধিকার পাওয়ার নয়। কারণ, এক অর্থে এখানে রাজনীতিই মুখ্য নয়। আইনগত ও সাংবিধানিক বিষয় জড়িত। দেশের রাজনৈতিক সংকটে এটা এক অভিনব অবস্থা।

ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষ এমন একটি বিষয়ে পরস্পরের কাছে অবস্থান ‘স্পষ্ট’ করতে বলছে, যা দারুণভাবে অস্পষ্ট।
আর এ জন্য পার্লামেন্ট নয়, আপিল বিভাগ দায়ী। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য করা চলে না। উপরন্তু আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশে যে ‘অসামঞ্জস্য’ রয়েছে, সে দিকেও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তাই আপিল বিভাগকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে হবে। আর রাজনীতিকদের হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে যা করার করতে হবে। কিন্তু শুধু এটুকু বক্তব্য যথেষ্ট নয়। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অন্যতম স্পর্শকাতর প্রশ্ন হলো, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী কী করবেন। প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন। সুতরাং পদ্ধতি নয়, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থায়ও কিন্তু ব্যক্তির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত ব্যক্তির সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গড়তে কি সত্যিই চান? তাহলে তাঁকে বাহাত্তরের সংবিধান মানতেই হবে। কিন্তু তিনি তা মানছেন না। বর্তমানে এক-দশমাংশ অনির্বাচিত ব্যক্তির মন্ত্রিসভায় থাকার বিধানটি মূলত সামরিক শাসনের ফসল। অনির্বাচিত ব্যক্তিরা (শফিক আহমেদ, দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ) এখন মন্ত্রিত্ব করছেন। এটা যদি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত না করে তাহলে ৯০ দিনের জন্য অনির্বাচিত ব্যক্তির মন্ত্রিত্ব মানা যাবে না কেন?
বাহাত্তরের সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদটি জ্যান্ত করা হোক। চতুর্থ সংশোধনীতেই কিন্তু এ বিধান লোপ পায়। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, তাঁরা আজও মনে করেন বাকশাল ঠিক ছিল। চতুর্থ সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভাই অনির্বাচিতদের দিয়ে গঠন করার বিধান প্রথম যুক্ত করা হয়। ত্রয়োদশ সংশোধনীই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের অন্দরমহলে প্রথম ঢুকিয়েছে, তা নয়। পঞ্চম সংশোধনীতে বাহাত্তরের বিধানমতে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী করার নিয়ম পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। তবে শর্ত ছিল, অনির্বাচিতরা মন্ত্রিসভার এক-পঞ্চমাংশের বেশি হবেন না। বর্তমানে মন্ত্রিসভায় ‘অনধিক এক-দশমাংস’ অনির্বাচিত থাকতে পারেন। সেদিক থেকে বর্তমান টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীরা জেনারেল জিয়ার পঞ্চম সংশোধনীর ডিজাইনের বেনিফিশিয়ারি।
সুতরাং নির্বাচিত ও অনির্বাচিত প্রসঙ্গ বাংলাদেশে নতুন নয়। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী রাজনীতিতে এর চমক আগেও দেখেছি। সুপ্রিম কোর্টের অন্তত দুটি মাইলফলক মামলা আছে, যেখানে নির্বাচিত-অনির্বাচিত তর্ক পাত্তা পায়নি। আবদুর রহমান বিশ্বাস পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আবদুস সামাদ আজাদ রিটে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি জয় পাননি। কুদরত-ই-ইলাহি পনির মামলায় উপজেলাব্যবস্থা বিলোপের বৈধতা পরীক্ষিত হয়। আপিল বিভাগ সর্বসম্মতভাবে যে রায় দেন, তা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান অবস্থানকে পুরোপুরি সমর্থন করে না। সেই একই অনির্বাচিত তর্ক তুলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। হাইকোর্ট তা নাকচ করেছিলেন।
বাহাত্তরের মূল সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদটি ফিরে এলে যেকোনো সময় যেকোনো সংখ্যক অনির্বাচিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া যাবে। তার মানে, এটা কিন্তু অগণতান্ত্রিক নয়। অবশ্যই এই অনির্বাচিত আর আমাদের উদ্ভট তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থায় ঠাঁই পাওয়া অনির্বাচিতরা এক নন। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ভাবনাকে বাহাত্তরের কাঠামোতে খাপ খাওয়াতে হবে। ওই অনুচ্ছেদের আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের ছয় মাসের মধ্যে কোনো আসন থেকে নির্বাচিত হতে হবে। এই বিধান সংসদীয় গণতন্ত্রে সর্বজনীন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখুন। তিনি বিধানসভার সদস্য নন। অনির্বাচিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। শপথের দিন থেকে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে এমএলএ নির্বাচিত হতে হবে। অন্যথায় তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারাবেন। আমাদের বাহাত্তরের সংবিধানের ৫৫(৪) অনুচ্ছেদটি ভারতীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থায় আছে বলেই অনির্বাচিত মমতার মুখ্যমন্ত্রী হতে বাধা হয়নি।
এখন নির্বাচিত ব্যক্তিতে যদি আমাদের নতুন করে ভক্তি আসে, ক্ষতি নেই। তবে ক্ষমতাসীন দলকে সর্বাগ্রে তার নীতিগত অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। অনির্বাচিত ব্যক্তিদের আমরা পাঁচ বছর মন্ত্রী মানব। আর নির্বাচিত ধুয়া তুলে অনির্বাচিতদের ৯০ দিন বা একটা নির্বাচন করার সুযোগও দেব না। এই দুই অবস্থান দ্বন্দ্বপূর্ণ। ত্রয়োদশ সংশোধনীতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লিখিত দুটি মামলায় দেওয়া আপিল বিভাগের আগের দুটি রায় এবং সংবিধানে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বহাল থাকার অনুচ্ছেদটি কীভাবে কতটা আলোচনায় আসে বা আদৌ আসে কি না, সেটা দেখতে আমরা অপেক্ষায় রইলাম।
নির্বাচিতদের জন্য হঠাৎ দরদ উথলে ওঠা সরকার দয়া করে একটি লিটমাস টেস্ট সেরে নিন। ঘোষণা দিতে হবে যে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী যদি থাকতে চান, তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন না। যদি তিনি নির্বাচন করতেই চান, তাহলে তাঁর দলের অন্য কোনো সাংসদকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। ওই সাংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলে তা রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে সুফল দিতে পারে।
আসলে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও দলের প্রধান—এই তিনজন কোনো অবস্থাতেই এক ব্যক্তি হতে পারবেন না। তিন আলাদা মানুষ হতে হবে। আওয়ামী লীগকে তার ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও মন্ত্রিত্ব একসঙ্গে আগলানোর রেওয়াজ আগে ছিল না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম যখন মন্ত্রী হলেন, তখন তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে অপশন দেওয়া হলো। দলের পদ, না হয় মন্ত্রিত্ব—একটি রাখতে হবে। তিনি মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলেন। একই সঙ্গে তিনি কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ আঁকড়ে ছিলেন না। স্পষ্টতই, কোনো চাপ ছাড়াই তিনি গণতান্ত্রিক রেওয়াজ মেনে চলছিলেন। এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন রূপায়ণে ঝাঁপিয়ে পড়লে ক্ষতি কী।
দুই.
সুখের বিষয়, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া আদালতের রায় প্রশ্নে লক্ষণীয়ভাবে অবস্থান বদল করেছেন। ৪ জুন ও ১৬ জুন সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তাঁর দুটি লিখিত বিবৃতির গুণগত পার্থক্য অনেক। তবে ‘এই রায় সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়’ কথাটি যে অর্থে তিনি বলেছেন, তা ঠিক নয়। সংসদ চাইলে নতুন করে সংবিধান সংশোধন করতে পারে। তেমন দরকার হলে আদালতের রায়কে অসারও করতে পারে। যাক, খামোখা দুটি হরতাল পালনের পর তাঁকে এখন কিছুটা নমনীয় মনে হচ্ছে। তাঁর কথায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বর্তমান আঙ্গিক ঠিক রাখতে হবে। এরপর তাঁরা আলোচনায় বসবেন।
এটা সন্দেহাতীত যে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পাওয়া। নাগরিক সমাজ থেকে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে চাপ দিতে কিংবা তাদের নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতেও আদালতের রায় দরকার। এমনকি রায়ের বিষয়ে রিভিউ করারও দরকার পড়তে পারে। আমরা শুনেছি, ত্রয়োদশ সংশোধনীর শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিরা আইনগত ও সাংবিধানিক দিকগুলোর বিষয়ে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক তুলে ধরেননি বলে বিচারকদের কারও কারও কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
আমাদের চোখ এখন দুই নেত্রীর দিকে নয়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের দিকে। কারণ তিনিই আলোচ্য পূর্ণাঙ্গ রায়ের অথর জাজ হবেন বলে ধারণা। আর তিনিই বলেছেন, ছয় মাস লাগবে।
রায়ের অপব্যাখ্যা করার জন্য এই কলামে দুই সপ্তাহ আগে সরকার ও বিরোধীদলীয় নেতাকে দায়ী করা হয়েছিল। বিরোধী দলের নেতা এখন দৃশ্যত আপিল বিভাগের রায়মুখী হয়েছেন। ডেইলি স্টার পত্রিকায় ১৭ জুন প্রথম পাতায় বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাপা হয়। যার শিরোনাম ছিল ‘প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন’। তার নিচেই পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় আইনজ্ঞের মতামত ছাপা হয়। যার শিরোনাম ‘রায়ের মুহূর্ত থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ’। নিচে উপশিরোনামে শীর্ষ আইনবিদেরা প্রসপেকটিভলি বা ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শীর্ষ আইনবিদদের বরাতে ডেইলি স্টার-এর শিরোনাম থেকে অনেকের মনে ধারণা হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে মর্মে যে অভিমত দিয়েছেন, সেটিই সঠিক।
ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনটি শুধু প্রসপেকটিভ কথাটির সংজ্ঞানির্ভর। তারা ঠিকই ধরেছে এবং বেগম খালেদা জিয়াও ওই শব্দের ওপর দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘রায়ে ঘোষিত অবৈধতা এখন থেকে নয়, বরং আরও দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক বহাল থাকার পর তা কার্যকর হবে।’ অবৈধতা ও তা কার্যকর অবৈধতার মধ্যে পার্থক্য আছে। অবৈধ ওই তারিখ থেকেই, তবে তা কবে থেকে ও কীভাবে কার্যকারিতা পাবে, তা রায়ে স্পষ্ট নয়। তবে এটা খুবই স্পষ্ট, ত্রয়োদশ সংশোধনী তিন তালাক পায়নি। তিন শর্তে টিকে আছে। সংসদ নেতা ও বিরোধী দলের নেতার রায় ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটি আপাতত অধিকতর গ্রহণযোগ্য? উত্তর হবে, বিরোধী দলের নেতার। যদিও তা নিরঙ্কুশ অর্থে নয়। সংসদ নেতা বলেন, বাতিল হয়ে গেছে আর কোনো সুযোগ নেই। এর প্রথম অংশ ঠিক, দ্বিতীয় অংশ ঠিক নয়।
ডেইলি স্টার-এর প্রতিবেদনে বিচারপতি মোস্তাফা কামাল, মাহমুদুল ইসলাম, এম জহির, শাহ্দীন মালিক ও মাহবুবে আলম মতামত দিয়েছেন। তাঁদের মতগুলো সন্দেহাতীত কোনো ধারণা দেয়নি। বিচারপতি মোস্তাফা কামালের মতে, ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটির অর্থ রায় ঘোষণার দিন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে। তবে আগামী দুটি নির্বাচন বিদ্যমান ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনেই করা যাবে। সংবিধান সংশোধনের কোনো দরকার নেই। তাঁর বক্তব্যে বিরোধী দলের নেতার অবস্থানই সমর্থিত হয়েছে।
অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় দুই মেয়াদে বৈধ নির্বাচন কি করে হবে? এটা কি স্ববিরোধী? জবাবে সাবেক প্রধান বিচারপতি আমাকে বলেন, না, এটা হলো পার্মিসেবল জুরিসডিকশন (অনুমতিযোগ্য এখতিয়ার)।
বিচারপতি মোস্তাফা কামাল, মাহমুদুল ইসলাম, এম জহির, শাহ্দীন মালিক ও মাহবুবে আলম আমাদের একটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন যে ‘রায় ঘোষণার দিন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে।’ কিন্তু শুধু এটুকু বলে থামলে বা বুঝলে চলবে না। বাতিল কথাটি ওই তারিখেই প্রকৃতঅর্থে কার্যকর হয়ে গেছে বলে যাঁরাই প্রবল যুক্তি দিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা বিনয়ের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করি।
বিশেষজ্ঞ মতের ফারাক দেখুন। শাহ্দীন মালিক মনে করেন, সুপ্রিম কোর্ট কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে তাঁর রায়ে ভবিষ্যৎসাপেক্ষ কথাটি ব্যবহার করেছেন। যেহেতু বাতিল হয়ে গেছে, তাই আগামী দুটি নির্বাচন করতে হলে সংবিধান সংশোধন লাগবে। আমরা এ যুক্তি মানতে অপারগ। মাহমুদুল ইসলামের ‘রায় ঘোষণার দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে গেছে’ কথাকেও বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যাবে না। অ্যাটর্নি জেনারেলও কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায়। তিনি বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় না পাওয়া পর্যন্ত এটা বলা যায় না যে আগামী দুটি নির্বাচন কীভাবে হবে।
আমরা আদালতের কাছে অনতিবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ রায় এবং সরকার ও বিরোধী দলের কাছে সহি পূর্ণাঙ্গ তত্ত্বাবধায়ক বিলের খসড়া আশা করি। তবে আমরা নিশ্চয় মনে রাখব সংসদের সার্বভৌমত্ব। জাতীয় প্রয়োজনে আজই সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন দিতে হলে আদালতের অনুমতি নিশ্চয় লাগবে না। আর তখন কিন্তু বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। এ ভাবনা স্বাভাবিক নয় যে সংসদ তখন পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্য অপেক্ষায় থাকবে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.