বার ট্রাইব্যুনালে দ্রুত বিচার হোক-জামিন জালিয়াতি

আদালতে জামিন জালিয়াতির ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে এবং এতে প্রমাণিত হয় যে বার ও বেঞ্চের নজরদারি-ব্যবস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরেছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনায় আমরা বার কাউন্সিলকে যথেষ্ট সক্রিয় বা উদ্বিগ্ন হতে দেখিনি। অথচ আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণ বন্ধ তথা শৃঙ্খলাবিধানের সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব তাঁদেরই। এমনকি বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোরও এ বিষয়ে বিশেষ দায় রয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশ বা পুলিশ বিভাগের অনেক ভালো কাজ দেশের প্রচলিত বিচারব্যবস্থার কারণে অনেক ক্ষেত্রে যে বাধাগ্রস্ত হয়, সে কথা অস্বীকার করা যায় না। গ্রেপ্তারকৃত দুই আইনজীবীর একজন নিম্ন ও অন্যজন উচ্চ আদালতের। আদালতের কাগজপত্র জাল করার দায়ে তাঁদের অপরাধ ফৌজদারি আইনে দণ্ডনীয় হলেও শাস্তি সময়সাপেক্ষ। এখন বার কাউন্সিলের উচিত হবে জামিন জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। আইনজীবীদের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। বার কাউন্সিল ও সংশ্লিষ্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের উচিত হবে বিচার নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের যথাক্রমে সনদ ও সদস্যপদ স্থগিত রাখা। বার কাউন্সিল চাইলেই তাদের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে সংক্ষিপ্ততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
জামিন জালিয়াতি রোধে পুলিশ নয়, বার ও বেঞ্চই বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আদালতের আদেশে অনেক সময় আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের বিষয় বার কাউন্সিলে পাঠানো হলেও তার প্রতিকার হয়নি; দীর্ঘসূত্রতার বেড়াজালে বন্দী থেকেছে। জামিন জালিয়াতি বা জামিনে যত ধরনের অনিয়ম ঘটে, তার একটি বড় কারণ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের প্রতি আদালতের উদার মনোভাব। বিধিমতে প্রতিটি জামিনের দরখাস্তের সঙ্গে ওকালতনামা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কনিষ্ঠ আইনজীবীরাই তাতে সই করেন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জামিনের দরখাস্ত হাতে প্রায়ই আদালতকক্ষে হাজির হন। আদালত মূলত তাঁর নিবেদন শুনেই জামিন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করেন। কিন্তু আদালতে, বিশেষ করে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রায়ই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর নামের উল্লেখ থাকে না। আমাদের সুপারিশ হলো, প্রতিটি মামলার বিচারিক আদেশের প্রতিটি পর্বে জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠের নাম তাঁদের সদস্য ক্রমিকসহ লিপিবদ্ধ করাকে বাধ্যতামূলক করা। ওকালতনামায় সইদানকারী এবং জামিন প্রার্থী, বিশেষ করে আগাম জামিন প্রার্থীর পরিচয় বিচারক যাচাই করবেন এবং সে বিষয়টির উল্লেখ অতি অবশ্যই আদেশে থাকতে হবে। অনেক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আছেন, যাঁরা দু-তিন দশকেও কোনো ওকালতনামায় সই না করেই ওকালতি চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলব, এমনটি আর চলতে পারে না। এ বিষয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির আশু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করি। কালো গাউন দেখেই সব সময় আইনজীবী চেনা যায় না। আদালতকক্ষে আইনজীবীরা যাতে ফটো আইডি ব্যবহারে উৎসাহিত হন, সে বিষয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনকেই উদ্যোগী হতে হবে। সর্বোপরি ক্রমবর্ধমান জামিন জালিয়াতির ঘটনা বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও বার কাউন্সিলকে (পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল) অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.