শিশুদের প্রতি চরম অবহেলা-বাজেট-পরবর্তী বিতর্ক

যেকোনো ঘোষণার পরই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সেটা স্বাধীনতার ঘোষণা হোক, জাতীয় ক্রিকেট দল ঘোষণা হোক আর বাজেট ঘোষণাই হোক—বিতর্ক চলবেই। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পরও বিতর্ক চলছে। চলবে না কেন? সাধারণত বাজেটের পর শোনা যায়, এটি গরিবমারা বাজেট। কিন্তু এবার হয়েছে শিশুমারা বাজেট।

বাজেটে পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া আছে, চকলেটের দাম বাড়বে, যা খুবই হতাশাজনক। এমনিতেই অভিভাবকেরা শিশু-কিশোরদের চকলেট কিনে দিতে চান না। চকলেট খাওয়া ঠিক নয়, দাঁতে পোকা হয়—এসব অজুহাত দিয়ে ছেলেমেয়েদের দাবিয়ে রাখতে চান। কিন্তু তাঁদের এই অজুহাত যখন আর টিকে থাকতে পারছিল না, তখনই কর্তৃপক্ষ চকলেটের দাম বাড়িয়ে দিল। কোনো মানে হয়? অর্থমন্ত্রীর ঘরে কি শিশু-কিশোর নেই? তারা কি চকলেট খায় না? ভাত, সবজি, মুরগির সুপ, গরম দুধ—এসব শিশুরা খেতে চায় না। তারা খেতে চায় চকলেট। সেই চকলেটের দাম বাড়িয়ে সরকার শিশুদের প্রতি চরম অবহেলার পরিচয় দিয়েছে। শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন কর্মসূচি চলতে থাকলেও তাঁরা শিশুদের ‘হ্যাঁ’ বলেননি। চকলেটের দাম বাড়ানোকে ‘হ্যাঁ’ বলেছেন। অথচ চকলেটের দাম বাড়ানোর প্রতিক্রিয়া যে কী হবে তা কেউই ভেবে দেখেনি। এতে বিপদে পড়বেন দাঁতের চিকিৎসকেরাও। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই চকলেট খেতে পারবে না। ফলে কারও দাঁতে সমস্যাও হবে না। আর দাঁতে সমস্যা না হলে ডেন্টিস্টের কাছেও যেতে হবে না। এতে ডেন্টিস্টদের বাজেটে ঘাটতি দেখা দেবে। শুধু চকলেট নয়, এনার্জি ড্রিংকের দামও বেড়েছে। চরম গরম, যানজট—এসবের কারণে এমনিতেই মানুষের এনার্জি থাকে না। তা ছাড়া জাতি হিসেবেই আমাদের এনার্জি কম। পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়। সেই অবস্থায় এনার্জি ড্রিংকের দাম বাড়া যে কতটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, তা-ও কেউ ভাবছে না! খুবই দুঃখের ব্যাপার। তবে চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে বড়রা বসে থাকলেও বসে নেই শিশুরা। অনেক শিশু মনে করছে, এ ঘটনাটি একটি চকলেটবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র। কেউ কেউ ভাবছে, এর পেছনে জাতীয় অভিভাবক পরিষদের বিশাল ভূমিকা আছে। অথচ বাসায় চকলেট থাকলে অভিভাবকেরা তাতে ভাগ বসান! কিন্তু এই শিশুমারা বাজেট নিয়ে অভিভাবকেরা কোনো প্রতিবাদই করছেন না। শিশুরা অবশ্য তীব্র নিন্দা করে এ বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্য কেউ হলে এই ঘটনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে হরতাল ডেকে বসত। তবে শিশুরা অবিবেচক নয়, তারা হরতাল ডাকে না।

No comments

Powered by Blogger.