নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কি অবশ, না উদাসীন?-টিলার চূড়ায় পুকুর কাটার কেরামতি

সাধুর চেয়ে চোরের বুদ্ধিই বেশি। প্রমাণ, গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর ‘টিলার চূড়ায় “পুকুর”’ শিরোনামের সংবাদ। টিলার মাটি দিয়ে পুকুর ভরাট করা ভূমিব্যবসায়ীদের প্রতারণার এক আদর্শ নমুনা সিলেটের খাদিমপাড়ার মলাইটিলা। প্রথমে টিলার নিচের মাটি কাটার চেষ্টা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর বাধা দেয় ও মামলা করে।

এই অবস্থায় ‘ভূমিরূপ-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট’ করার আসামিরা বাঁকা পথে অগ্রসর হন। তাঁরা টিলার ওপরে এমনভাবে ১০ ফুট গভীর পুকুর কাটেন, যাতে বৃষ্টির পানি জমে টিলার ভেতরটা ক্ষয়ে যায়। সেই ক্ষয়িত মাটি তাঁরা অন্য কাজে লাগান আর টিলাটি ভেতর থেকে দুর্বল হতে থাকে। এমনটা চলতে থাকলে টিলাটি ভয়াবহভাবে ধসে যাবে। সেই ধসকে ‘প্রাকৃতিক কর্ম’ বলে দেখিয়ে জায়গাটি প্লট হিসেবে বিক্রিও করা যাবে। বুদ্ধিটা পাকা, তাতে সন্দেহ নেই। এ রকম পাকা বুদ্ধি আর ঘুষ-দুর্নীতির জোরে সারা দেশেই বন-জলা-খাল-বিল-সৈকত ধ্বংস চলছে তো চলছেই।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়ও কম নয়। একদিকে তাঁরা যেমন ভূমিদস্যু ও পরিবেশবিরোধীদের অপকর্ম ঠেকানোয় উদাসীন, অন্যদিকে তাঁদের অপকৌশলের কাছে পরাজিতও বটে। টিলার চূড়ায় পুকুর কাটার খবর তাঁরা রাখেননি। এই অবস্থায় সরকারের নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও কৌশলী ও প্রখর না হলে চলবে কী করে?
সারা দেশেই দেখা যাচ্ছে ভূমি-বন-পাহাড়-সৈকতে অভূতপূর্ব ও বিপুল দস্যুগিরি। বিপরীতে সরকারি কর্তৃপক্ষের বিপুল উদাসীনতা, সুবিধাবাদিতা ও আপসকামিতা। অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও ঘুষের অস্ত্রেও আইনি ক্ষমতা ‘বশ’ হয়। সুতরাং কেবল আইন লঙ্ঘনকারীদের দুষলেই চলবে না, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে আইনের প্রয়োগকারীদেরও। নইলে রূপকথার গল্পের মতো ভূমিদৈত্যের জাদুবলে টিলার চূড়ায় পুকুর হবে, বনে হঠাৎ তৈরি হবে আবাসন প্রকল্প আর সমুদ্রসৈকত ঢেকে রাতারাতি দাঁড়িয়ে যাবে বহুতল ভবন। দেশময় অপ্রতিরোধ্য দখল এবং ‘ভূমিরূপ-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের’ মচ্ছবের জন্য তাই দায়ী থাকতে হবে সরকারকেই। আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হলে প্রকৃতি ও মানুষ—কিছুই রক্ষা পাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ ভূমি প্রশাসনের এখন উচিত তৎপর হওয়া এবং পরিবেশ ধ্বংস ও আইনের সঙ্গে চাতুরীর হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করা।

No comments

Powered by Blogger.