কালাকানুন’ ধরনের আইন গ্রহণযোগ্য নয়-এনজিও আইনের খসড়া

সরকার এনজিও আইনের নতুন একটি খসড়া করেছে। এই খসড়ার কিছু ধারায় যেসব বিধান রাখা হয়েছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে ও বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। খসড়াটি এনজিও আইনসংক্রান্ত হলেও দেখা যাচ্ছে ব্যক্তিসংক্রান্ত বিষয়ও রয়েছে। এনজিও কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি এই আইনের খসড়ার ব্যাপারে যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলো উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১১-এর খসড়ার বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বা সংস্থা কোনো বিদেশি সরকার, সংস্থা কিংবা নাগরিকের কাছ থেকে অনুদান, মঞ্জুরি, নগদ অর্থ কিংবা কোনো ধরনের সাহায্য নিতে পারবে না। আর অনুমতি ছাড়া কোনো নাগরিক বা সংস্থা বৈদেশিক চাঁদাও নিতে পারবে না। বেসরকারি সাহায্য সংস্থা বা এনজিও হিসেবে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। সরকারের নিয়মকানুন মেনে তারা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। তাদের অর্থের উৎস ও খরচের হিসাবও তারা সরকারকে দিয়ে থাকে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে সাহায্য বা অনুদান গ্রহণে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়াবে বৈ কমাবে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাড়লে দুর্নীতির পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে।
এনজিও পর্যায়ে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ ছাড়াও ব্যক্তিপর্যায়েও নানাভাবে বৈদেশিক সাহায্য বাংলাদেশে আসে। এখন ব্যক্তিপর্যায়ে সাহায্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হলে সেটাও যে নাগরিক ভোগান্তি বাড়াবে, তা নিশ্চিত। ধরা যাক, বাংলাদেশের একজন নাগরিক এখন ভিন্ন কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তিনি তাঁর বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য করতে চাইলে কীভাবে করবেন? এ জন্য কি সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে? কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে বা খরচে কেউ বিদেশে যেতে চাইলেও অনুমোদন নিতে হবে? এটাও তো একধরনের অনুদান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আশঙ্কা করেছেন, এ ধরনের বিধান থাকলে ব্যক্তিপর্যায়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ, ব্যবসায়িক উদ্যোগ, বৃত্তি, বিদেশভ্রমণ—এসব নিয়েও সমস্যা হবে। এ ধরনের বিধান সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মনে করেন। আমরা এই আশঙ্কা ও উদ্বেগকে যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে সঙ্গে নিতে চাই।
খসড়াটির বিভিন্ন ধারা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া জরুরি মনে করছি। খসড়া পর্যায়ে যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো মূল্যায়ন ও প্রয়োজনে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। কোনো কঠোর বা ‘কালাকানুন’ ধরনের আইনের জন্য স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হোক বা নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হোক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.