আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীরা যেন পার না পায়-ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফা মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও দ্বিতীয় দফায় প্রতিদিনই সহিংসতা ও অঘটনের খবর আসছে। ধারাবাহিক ও টেকসই সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং তৃণমূল পর্যায়ে সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় জনপ্রতিনিধিত্বশীল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে

প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, হানাহানি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ি যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কেবল গত রোববারই নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন তিনজন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় রোববার রাতে একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও পাঁচজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দুজন আর আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। হবিগঞ্জের বানিয়াচং, কুমিল্লার লাকসাম ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন অন্তত ৮০ জন। দৃশ্যমান এসব ঘটনার পাশাপাশি ভয়ভীতি প্রদর্শন কিংবা কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে বাধ্য করার মতো খবর পাওয়া যাচ্ছে।
নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান। উৎসবমুখর পরিবেশে তা অনুষ্ঠিত হবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু অর্থ ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্যে সেই পরিবেশই কেবল নষ্ট হচ্ছে না, জানমালের ক্ষতি হচ্ছে, বাড়িয়ে তুলছে সামাজিক অস্থিরতা। এসব অনাচার-অঘটন কঠোর হাতে দমন করতে না পারলে তৃণমূলে সৎ, যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্ব বাছাই কঠিন হবে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হানাহানির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও উপেক্ষণীয় নয়। নির্বাচন কমিশন অরাজনৈতিকভাবে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর নির্বাচন করতে চাইলেও রাজনৈতিক দলগুলোর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরিবেশ যাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে, সে ব্যাপারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও ভূমিকা নিতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সব প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারের কাছে অনুরোধ, তাঁরা নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলবেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। যারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.