ঝিলমিল প্রকল্প-রাজউক নীতিমালা অনৈতিক ও বৈষম্যমূলক by তোফায়েল আহমেদ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঝিলমিল নামের একটি আবাসিক প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছ থেকে আড়াই, তিন ও পাঁচ কাঠা আয়তনের আবাসিক প্লট বরাদ্দের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করেছে। যদিও উন্মুক্তভাবে দরখাস্ত গ্রহণ করে লটারির মাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে

নীতিমালা তা বলে না। নীতিমালাটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে সুকৌশলে সমাজের প্রভাবশালী ও বিত্তবান অংশের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থায় এ প্লটগুলো বিতরণ করা যায়। ব্যবস্থাটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সমতা, সাম্য ও সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নীতির পরিপন্থী, অনৈতিক ও বৈষম্যের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, যা কোনোভাবেই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না।
রাজউক ঝিলমিল প্রকল্পের যে প্রসপেক্টাস ও আবেদনপত্র এক হাজার টাকার বিনিময়ে উন্মুক্ত করেছে, তাতে জমি বরাদ্দের নীতিমালা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করেনি। প্রসপেক্টাসের শর্তগুলো যতটুকু প্রকাশ করেছে তাতেও এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া আছে, যার মধ্যে বিশেষ কিছু ব্যক্তি ও পরিবারকে লাভবান করার যেমন সূক্ষ্ম কারসাজি রয়েছে, অপরদিকে রয়েছে রাজউকের একতরফা স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের সুযোগ। প্রসপেক্টাসের শর্ত ২ (খ)-এর অধীনে যাঁরা স্বামী/স্ত্রী হিসেবে আগে জমি, প্লট বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন, স্বাধীন চাকরির সুবাদে পুনরায় একই পরিবারের কৌশলে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া ১৪-এর (খ, গ, ঘ, ঙ) বর্ণিত শর্তগুলো রাজউককে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে, যা ক্রেতার স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
রাজউক নীতিমালার অনৈতিক, অসাংবিধানিক, ন্যায়নীতির পরিপন্থী যে অংশটি সরকার, মানবাধিকার সংগঠন, সর্বোচ্চ আদালত খতিয়ে দেখতে পারেন তা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ করে অধিগ্রহণ করা ভূমি. যা উন্নয়নের পর সমাজের সুবিধাভোগী একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংরক্ষিত পদ্ধতিতে বিতরণ ও বরাদ্দ করার একটি অস্বচ্ছ ও অস্পষ্ট নীতিমালার বাস্তবায়ন।
কিছু জাতীয় দৈনিকে বরাদ্দ নীতিমালার কিছু বিশেষ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যগুলো আবেদনকারীদের জ্ঞাতার্থে প্রসপেক্টাসে এবং প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি, যা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এমনকি এমন তথ্য প্রসপেক্টাসে সর্বসাধারণের জন্য সন্নিবেশিত হলেও এ জাতীয় নীতি আইনসিদ্ধ হতে পারে না। ডেইলি স্টার-এ ১৮টি ক্যাটাগরিতে কী হারে ও সংখ্যায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে, তার একটি সারণি প্রকাশিত হয়েছে। সারণিটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ১৬ কোটি মানুষের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে উন্নয়নকৃত এ আবাসিক প্লটগুলো মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানে সব নাগরিকের সমানভাবে লটারিতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। বিভিন্ন পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য সমধর্মী হলেও পুরোপুরি এক নয়। তাতে নীতির স্বচ্ছতা আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
প্রথমত, জাতীয় সংবাদপত্রে এ তথ্যগুলো পরিবেশনের পর অদ্যাবধি রাজউক বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেখা যায়নি। প্রতিটি ক্যাটাগরির বিপরীতে প্লট সংরক্ষণের যে শতকরা হার দেখানো হয়েছে তাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনটি সঠিক তা বোঝা যাচ্ছে না। তারপর মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সাংসদ ও বিচারপতিদের জন্য কোন যুক্তিতে এবং কোন আইনে প্লট সংরক্ষণ করা হলো, তার ব্যাখ্যা নেই। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্যই বা আড়াই কাঠার কয়টি প্লট তৈরি করা হবে, তারও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য কোনো হিসাব নেই।
দ্বিতীয়ত, রাজউক একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করা জমি বাজারমূল্যের অনেক নিম্ন মূল্যে উন্মুক্ত আবেদন গ্রহণ করে লটারির মাধ্যমেই যখন বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেখানে দেশের সব নাগরিকের সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার খর্ব করে বিশেষ বিশেষ পেশার জন্য কোটা রাখা সংবিধানের নাগরিকের সমান অধিকারের লঙ্ঘন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সাংসদ ও বিচারপতিরা আবেদন করলেই প্লট পেয়ে যাবেন, আর সারা দেশের বাকি নাগরিক লটারির মাধ্যমে প্লট পাবেন—এ বৈষম্য সংবিধান কীভাবে সমর্থন করতে পারে? বিচারপতিরাই বা এ নীতিমালা কোন নৈতিকতা এবং আইনের ভিত্তিতে গ্রহণ করবেন, তা মোটেই বোধগম্য নয়। এটি কোনো নীতিমালা হতে পারে না, একটি বেআইনি নির্বাহী সিদ্ধান্ত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (১) ও (২), ২৭ এবং ৪২(১)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দেশের সব নাগরিকের ভাগ্য নির্ধারণ হবে লটারিতে; আর একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা ‘নিঃস্বার্থ দেশ সেবা, ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে কোনোরূপ অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হওয়া এবং সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান এর’ শপথ গ্রহণ করেছে, তাঁরা কীভাবে সংবিধানের এ গুরুতর লঙ্ঘন মেনে নেবে, তা জাতির কাছে বড় প্রশ্ন।
তৃতীয়ত, দেশের সব নাগরিকের জন্য আবেদন করার এবং লটারিতে অংশগ্রহণের সুযোগটি উন্মুক্ত রেখে দরখাস্তের ফরমের এক হাজার টাকা এবং জামানতের অর্থ গ্রহণ করা হলেও, প্রকৃত বরাদ্দ বিশেষ কোটা-নীতির মাধ্যমে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। লটারিটা দেশের কয়েক লাখ পেশাজীবী ও চাকরিজীবীর মধ্যে সীমিত করে রাখা হয়েছে। এটি একটি নির্বাহী বিভাগীয় প্রতারণা। প্রসপেক্টাসের ভাষায় প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের নাগরিক দেশে-বিদেশে যেখানে থাকুন, এক হাজার টাকা ফরম ক্রয়ের এবং জামানতের টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু পত্রিকার ভাষ্যমতে, ২৮ শতাংশ প্লট সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এমনকি রাজউক ও আবাসনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্যও ১.৫০ ও ০.৫০ শতাংশ রেখে দেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় সরকারের সঙ্গে কি এসব চাকরিজীবীর এ রকম কোনো চুক্তি ছিল যে, সরকার জমি অধিগ্রহণ করে বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে তাদের জন্য আবাসিক প্লট তৈরি করে দেবে? ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী কোন আইনে রাজউকের জমির ২৮ শতাংশ সংরক্ষিত কোটায় বরাদ্দ পাবেন, তা সরকারকে ব্যাখ্যা করতে হবে। নয়তো এ জাতীয় কোটাপ্রথা বেআইনি ঘোষণা করতে হবে।
চতুর্থত, পেশাভিত্তিক প্লট বিতরণ নীতিমালা করা হলে সেখানেও বিশেষ বিশেষ পেশাকে অধিক সুযোগ দেওয়ার ফর্মুলাটা কীভাবে তৈরি হলো? দেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর আনুপাতিক হার কত? সরকারি চাকরির জন্য ২৮ শতাংশ হলে বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৮ শতাংশ কিসের ভিত্তিতে নেওয়া হলো? যদি পেশার ভিত্তিতেই সরকারি জমি বা প্লট বিতরণ করা হবে, তাহলে ১৬ কোটি মানুষের প্রধান প্রধান পেশা এবং প্রতিটি পেশার মানুষের সংখ্যা নির্ণয় করে আনুপাতিক হারে প্লটের কোটা নির্ধারণ করা অন্যতম যুক্তি হতে পারে। সেখানে কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসা, আত্মকর্মসংস্থান, জেলে, তাঁতিসহ সব পেশার মানুষের জন্য তা উন্মুক্ত হতে হবে। এখানে নির্দিষ্ট ১৮টি ক্যাটাগরি করার কোনো অবকাশ থাকে না। শুধু মন্ত্রী, সাংসদ, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও কতিপয় পেশাজীবীর মধ্যে এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি হতে পারে না।
পঞ্চমত, রাজউকের এ বরাদ্দ নীতিমালা একধরনের ঘুষপ্রথা ও তোষণনীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে। বিচারপতি, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে বেআইনিভাবে একদিকে বিচারিক প্রক্রিয়া অপরদিকে গণমাধ্যমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ষষ্ঠত, রাজউক তাদের প্রসপেক্টাসে কোটানীতির কথা প্রকাশ না করে তথ্য অধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করেছে। তথ্য গোপনের মাধ্যমে একটি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। জাতীয় তথ্য অধিকার কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একক ও যৌথভাবে রাজউকের এ নীতিমালা বিশ্লেষণ করে সুচিন্তিত মতামত জাতি ও সরকারকে অবহিত করতে পারে।
অতীতে বিভিন্ন প্রকল্পে এসব কোটাপদ্ধতি প্রয়োগ করে প্লট ও ফ্ল্যাট বিতরণ করা হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ প্রভাবশালী গোষ্ঠীর করায়ত্ত হয়েছে। অতীতের কোনো বেআইনি কাজ হয়ে থাকলে ভবিষ্যতেও চলবে, তার যুক্তি নেই। তা ছাড়া এর আগে পূর্বাচল ও উত্তরা প্রকল্পে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে কিছু মন্ত্রী ও সাংসদ প্লট নিয়েছিলেন বলে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সে জমি কি রাজউক ফেরত নিয়েছে?
রাজউকের প্লট ও ফ্ল্যাট ঢাকা শহরের আবাসিক সমস্যা সমাধানের চেয়ে জমির কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। ঢাকা শহরে এক কাঠা জমির দাম এলাকাভেদে কোটি টাকার ওপরে গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষত, সরকারিভাবে বরাদ্দ করা জমির ইজারা বা বরাদ্দমূল্য ও বাজারমূল্যের প্রভেদ ২০ থেকে ৫০ গুণ। তাও প্রায় এক দশকের মধ্যে। এসব জমিতে আসলে প্রকৃত অর্থে কোনো গৃহহীন মানুষ গৃহ তৈরি করে না। এসব জমি ৫-১০ বছরের মাথায় একাধিকবার হাতবদল হয় এবং বহু দালাল-ফড়িয়ার ব্যবসা হয়। শেষ পর্যন্ত যা ঘটে তা হচ্ছে জমির কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি। কিছু সুবিধাভোগী মানুষ এই অভাবনীয় মূল্যবৃদ্ধির মুনাফা ভোগ করে। একাধিক বাড়ি ও অনেক জমির মালিক বড়লোকদের হাতেই এসব জমি কেন্দ্রীভূত হয়। পূর্বাচল প্রকল্পে ১০ বছর আগে ২০-২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে যাঁরা জমি পেয়েছেন, তাঁরা এখন সেই সাড়ে সাত ও ১০ কাঠার জমি দুই থেকে আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করছেন। অবশ্য রাজউক এখনো কোনো প্লটই হস্তান্তর করেনি। রাজউকের এসব প্লট ক্রয় এখন লটারির টিকিট ক্রয়ের স্থান নিয়েছে। দেশে জমির অতিমূল্যায়িত বাজার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজউক নিজেও আবাসিক সমস্যা সমাধানের মোড়কে অনৈতিক রাজস্ব আয়ের সুযোগ করে নিচ্ছে এবং একশ্রেণীর সুবিধাভোগীর জন্য অতিরিক্ত মুনাফা লাভের মওকা তৈরি করছে। বিষয়টি অনৈতিক এবং সাংবিধানিক সমতা, নাগরিকদের সমান অধিকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বরাদ্দ সংরক্ষণের চিত্র

১। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সাংসদ ও বিচারপতিরা যাঁরাই দরখাস্ত করবেন, তাঁরাই প্লট পাবেন।
২। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি প্রত্যেকে আড়াই কাঠার প্লট পাবেন
৩। মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৩.০০%
৪। সাংবাদিক (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস) ২.০০%
৫। সরকারি চাকরিজীবী ২৮.০০%
৬। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার চাকরিজীবী ১২.০০%
৭। সশস্ত্র বাহিনী ২.০০%
৮। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ৮.০০%
৯। বেসরকারি চাকরি ৮.০০%
১০। শিল্পী, সাহিত্যিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ২.০০%
১১। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী ১০.০০%
১২। মন্ত্রণালয় ০.৫০%
১৩। রাজউক ১.৫০%
১৪। কৃষিবিদ ২.০০%
১৫। চিকিৎসক ২.০০%
১৬। প্রকৌশলী ২.০০%
১৭। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ১.০০%
১৮। অন্যান্য ২.০০%
১৯। সংরক্ষিত ১০.০০%
................................................
৯৮.০০%
উৎস: ডেইলি স্টার, ৩১.০৪.২০১১

ড. তোফায়েল আহমেদ: শিক্ষক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক।
ahmedt_dr@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.