সামনে অস্থির রাজনীতি-সংঘাত নয়, রাজপথে থাকতে চায় বিএনপি by তানভীর সোহেল

এখনই সংঘাতে যেতে চায় না বিএনপি। তবে রাজপথ দখলে রাখতে নির্দিষ্ট বিরতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকবে দলটি।  গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার পরও এ নিয়ে কঠোর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছে না বিএনপি। হরতাল না দেওয়ায় বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা নিজ দল ও জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সমালোচনার মুখে পড়েন।


বিএনপির একজন নেতা বলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গত বছর ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ঘিরে দলের একটি অংশের সহিংস আচরণ তাদের রাজনীতিতে কালিমা লাগিয়েছে। ওই ঘটনার পর বিএনপির সাম্প্রতিক শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই দিন রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বেশির ভাগ সদস্যই বলেছেন, সাধারণ মানুষ বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। তা ছাড়া ঘটনার পর সরকারও বিএনপিকে দমনের সুযোগ পেয়ে যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকার বিএনপিকে সংঘাতের রাজনীতিতে জড়াতে চায়। এর কারণ হলো ব্যর্থতা আড়াল করা। দেশের মানুষ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে বিএনপি যদি সহিংস রাজনীতি করে তাহলে জনগণের ক্ষতি ও সমস্যাই শুধু বাড়বে। সরকার চাইছে খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিএনপির ওপর দায় চাপাতে। কিন্তু বিএনপি এ ব্যাপারে খুব সতর্ক।
বিএনপির একজন নেতা জানান, গত ২৯ জানুয়ারি বিএনপির গণমিছিলের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ও ক্ষমতাসীন দলের পাল্টা কর্মসূচির প্রতিবাদে ওই দিন সারা দেশে হরতাল দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির মধ্যমসারির নেতারা নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে চারজনের মৃত্যুর পর চাপ আরও বাড়ে। এ নিয়ে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনাও হয়। কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে না যাওয়ার পক্ষে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেন।
বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের আচরণের পর হরতাল না দেওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সমলোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কঠোর কর্মসূচি দিতে চাপ ছিল। কিন্তু চেয়ারপারসন ও নীতিনির্ধারকেরা নেতা-কর্মীদের বোঝাতে সক্ষম হন যে, সরকারের এই আচরণ ইচ্ছাকৃত। বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপাতে দলটিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। বিএনপির সিদ্ধান্ত হলো, সংঘাত-সহিংসতায় না গিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা।
পরীক্ষা নির্বিঘ্ন রাখবে বিএনপি: এসএসসি পরীক্ষা থাকায় ফেব্রুয়ারিতে গণসংযোগ, বিক্ষোভ, সমাবেশ, প্রশিক্ষণের মতো কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। তবে আগামী ১২ মার্চের মহাসমাবেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে। এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় সে সময়ও কর্মসূচি না রাখার সিদ্ধান্ত আছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন। সরকারকে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.