কালান্তরের কড়চা-আমার বন্ধু ড. জেকিল-চরিত্রে আর ফিরে যেতে পারলেন না by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

আমার বন্ধু শফিক রেহমান দীর্ঘকাল নিখোঁজ ছিলেন। বালাই ষাট! তিনি ইহলৌকিক জীবন থেকে নিখোঁজ হননি। তিনি বিএনপি-জামায়াতের ব্যান্ড-ওয়াগন থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কেন হয়েছিলেন তা আমার জানা নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা-নিজামী-তারেক রাজত্বের পতনের পর শফিক রেহমান আর 'প্রিয় দেশনেত্রী'র আশপাশে বা তাঁর নিজস্ব


সংবাদপত্রের কলামে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর এত শখের 'যায়যায়দিন' পত্রিকাটিও তাঁর হস্তচ্যুত হয়। এমনকি তাঁর পত্রিকার সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ না করে তিনি গোপনে বিলাতে পলায়নের চেষ্টা করাকলে ঢাকা বিমানবন্দরে ওই সাংবাদিকদের দ্বারা ঘেরাও হন এবং তাঁরা তাঁকে লন্ডনগামী প্লেনে উঠতে না দিয়ে তাঁর বিদেশযাত্রা ভণ্ডুল করে দেন।
তারপর দীর্ঘকাল তিনি নিখোঁজ। অর্থাৎ তাঁকে ঢাকা শহরের কোনো প্রকাশ্য স্থানে দেখা যায়নি। লেখালেখিও প্রায় বন্ধ ছিল। টিভির টকশোতেও তাঁর হাজিরা ও রাজনৈতিক কথাবার্তা তেমন শোনা যেত না। আমার মনে হয়েছিল, শফিক রেহমান সম্ভবত হারানো চৈতন্য ফিরে পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় এক মনীষীর ছেলে। কৈশোর থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রত্যেকটিতে যে যুক্ত ছিলেন এবং এরশাদের স্বৈরশাহীর আমলে নির্ভীক লড়াকু সাংবাদিক হিসেবে তাঁর যে পরিচয়, সম্ভবত সেসব কথা তাঁর মনে পড়েছে এবং রূপকথার মায়াবিনী রাক্ষসীর কুহকে বন্দি রাজপুত্রের হুঁশ ফিরে আসার মতো আমার বন্ধু শফিক রেহমানেরও হুঁশ এবং সম্বিত_দুটিই ফিরে এসেছে। তিনি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিতে না পারেন। কিন্তু কোনো কারণেই তিনি স্বাধীনতার শত্রু ও একাত্তরের ঘাতক দালালদের পক্ষে যাবেন না এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।
না, আমরা যাঁরা তাঁর দীর্ঘকালের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী, তাঁদের আশা পূর্ণ হয়নি। ড. জেকিল যেমন নিজের তৈরি রাসায়নিক পান করে বারবার মি. হাইড হতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আগের চরিত্রে ফিরে আসতে পারেননি, তেমনি এরশাদ আমলের ড. জেকিলও খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্ট-রাজনীতির চুম্বকের টানে আকৃষ্ট হয়ে সেই যে মি. হাইড হলেন, তা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারছেন না। দীর্ঘকাল তাঁর খোঁজখবর না পেয়ে ভেবেছিলাম, তিনি ড. জেকিল চরিত্রে মিইয়ে গেছেন। কিন্তু বিএনপি নেত্রীর সাম্প্রতিক ব্রিটেন ও আমেরিকা সফরের সময় জানতে পারলাম, না, আমার ধারণা ভুল। তিনি মি. হাইড চরিত্রেই স্থায়ী হয়ে গেছেন।
বাল্যবন্ধু হিসেবে শফিক রেহমানের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। ঢাকা ও লন্ডনেও তা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বায়ান্নর একুশ ও বাইশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনের মিছিলে (যে দুটি মিছিলেই গুলি হয়েছিল) শফিক ও আমি একসঙ্গে ছিলাম। কার্জন হলের মোড়ে আমি সামান্য আহত হলে শফিক আমাকে আগলে রেখেছেন। একুশ তারিখে পুলিশের গুলিতে শহীদ রফিকের লাশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরের বারান্দায় থাকার সময় শফিক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের (বর্তমান নজরুল গবেষক ও বিশেষজ্ঞ) সঙ্গে সেই শহীদের লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। শফিক তখন থাকতেন পুরান ঢাকায় বেগমবাজারে তাঁর বাবা অধ্যক্ষ সাইয়েদুর রহমান সাহেবের (বঙ্গবন্ধুরও শিক্ষক) বাসায়। ভাষা আন্দোলনের সেই দুর্যোগময় সময় প্রথম দুই দিন শফিকের বাসায়ই আশ্রয় নিয়েছি। একুশের গানের কয়েকটি লাইনও লিখেছি তাঁর বাসায় বসেই।
শফিক রেহমান তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শেষে বিয়ে করেছেন। ঢাকায় দৈনিক ইত্তেফাকে কিছুকাল সাংবাদিকতা (স্পোর্টস রিপোর্টার) করার পর লন্ডনে চলে এসেছেন। আমি এসেছি অনেক পরে। এসেই প্রথম শফিকের খোঁজ করেছি। নির্বান্ধব বিশাল নগরী লন্ডনে শফিক ও তাঁর স্ত্রী তালেয়াই প্রথম দিকে ছিলেন আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধব। তাঁদের সঙ্গে বিবিসির বাংলা বিভাগে কাজ করেছি। শফিকের গাড়িতে ঘুরে বেরিয়ে লন্ডন শহরের পথঘাট চিনেছি।
শফিক রেহমানের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। তার সবটা এখানে লেখা যাবে না এবং দরকারও নেই। তাই প্রাসঙ্গিক কথায় ফিরে যাই। শফিক কখনো আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ করেননি। তাঁর ওঠাবসা বেশি ছিল বামপন্থী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীর সঙ্গে। তাঁর বাবাও ছিলেন ন্যাপ-মোজাফফরের সঙ্গে যুক্ত। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শফিক ছিলেন খুবই শ্রদ্ধাশীল। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত না হলেও সাম্প্রদায়িক ও সামরিক শাসনের ঘোরবিরোধী ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তখন আমি লন্ডনে। শফিকও ছিলেন লন্ডনে। ১৫ তারিখ খুব ভোরে (ঢাকায় তখন দুপুর) শফিকই আমাদের আরেক বন্ধু জিয়াউল হককে (পরে তিনি গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন) সঙ্গে নিয়ে আমার বাসায় এসে এই মর্মান্তিক খবরটা দেন। আমরা তখনই বাংলাদেশ দূতাবাসে ছুটে যাই। সেখানে তখন আরেক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, সে কাহিনী এখানে নিষ্প্রয়োজন।
শফিকই আমাকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আসলে মিলিটারি ক্যু। ফারুক-রশীদ-ডালিম এরা হায়ার্ড এসপিন। খোন্দকার মোশতাকের সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমান অবশ্যই আছেন। তিনি চতুর খেলোয়াড়। এখন নেপথ্যে আছেন। যথাসময়ে মঞ্চে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে। শফিকই আমাকে অনুুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, 'গাফ্ফার, তুমি তো বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ, এখন এ দেশে আছ। কিছু করার সুযোগও আছে। তুমি কিছু করো।' বলেছি, 'আমি একা কী করব?' শফিক বলেছেন, 'আমরা তো আছি। সাহায্য-সহযোগিতা দেব।'
এরপর যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি গউস খানের (এ বছর মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন) নেতৃত্ব ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন পরিচালনার জন্য (সিপিবি, ন্যাপ-মোজাফ্ফরসহ) সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং আমিও সাপ্তাহিক বাংলার ডাক নামে এই আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে একটি কাগজ বের করতে শুরু করি। কিন্তু কাগজ বের করলেই তো হবে না; ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ চাই, ঢাকার খবর চাই। শফিক আন্দোলনের সঙ্গে প্রকাশ্যে যুক্ত হলেন না; কিন্তু ঢাকায় সব খবরাখবর তিনিই আমাকে দিতেন, তাঁর কাছে ঢাকা থেকে দৈনিক ইত্তেফাক (সম্ভবত দৈনিক সংবাদও) আসত। এই কাগজগুলো নিয়মিতভ শফিক আমার বাসায় পেঁৗছে দিতেন। বাংলার ডাক প্রকাশে এই কাগজগুলো আমার খুব কাজে আসত। তা ছাড়া বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাঁর সব অপতৎপরতার খবর শফিকই আমাকে পেঁৗছে দিতেন।
জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের রেস্ট হাউসে তাঁরই সেনা সদস্যদের হাতে নিহত হওয়ার পর জে. এরশাদ ধীরে ধীরে তাঁর পূর্বসূরির কায়দায় ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসেন। এ সময় শফিক আমাকে একদিন জানান, তিনি দেশে ফিরে গিয়ে লন্ডনের সাপ্তাহিক 'প্রাইভেট আই' পত্রিকাটির অনুকরণে একটি সাপ্তাহিক কাগজ প্রকাশ করবেন। তাতে কবিতা, গল্প কিছুই থাকবে না। থাকবে কড়া শ্লেষাত্মক রাজনৈতিক আলোচনা। আমি তাঁকে বলেছি, জিয়াউর রহমান নেই। কিন্তু তাঁরই মতো আরেক স্বৈরাচারী সেনাপ্রধান এখন ক্ষমতায়। তোমাকে কড়া শ্লেষাত্মক রাজনৈতিক পত্রিকা প্রকাশ করতে তিনি কি দেবেন? তুমি সরকারি নির্যাতনের কবলে পড়বে।
শফিক বললেন, 'আমার গায়ে এরশাদ হাত দিতে পারবেন না। উচ্চমহলে আমার আনাগোনা। তাঁদের মধ্যে অনেকে আমার বন্ধু। তাঁরাই আমাকে রক্ষা করবেন।' এই উচ্চমহলের কারা তাঁর বন্ধু_তা তখন আমি বুঝতে পারিনি। বুঝেছি অনেক পরে (সে কথায় পরে আসছি)। ঢাকায় ফিরে শফিক তাঁর সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকাটি বের করলেন। প্রথম সংখ্যা থেকেই তাতে আমার কলাম ছিল। তাঁর নিজের কলামও ছিল। এরশাদশাহীর বিরুদ্ধে কড়া চাবুকের মতো লেখা। সামরিক শাসনের বিরোধী লেখায় শফিকের মতো এতটা সাহস তখন আর কেউ দেখাতে পারেননি। কোনো বামপন্থী সম্পাদকও নন। গল্প নেই, কবিতা নেই। নিউজ প্রিন্টে ছাপা ছোট ক্রাউন সাইজের কাগজটির সার্কুলেশন লক্ষাধিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় 'সাপ্তাহিক যায়যায়দিন' একটি টার্নিং পয়েন্ট, একটি বিরাট মোড় ফেরা। গতানুগতিক সাংবাদিকতাকে পেছনে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংবাদ-সাহিত্যের (এবং তাও আবার প্রগিতশীল) যে শক্তিশালী নতুন ধারা শফিক রেহমান প্রবর্তন করেছেন, তারই অনুকরণ করে পরে আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো প্রভৃতি দৈনিকের যাত্রা ও সাফল্য লাভ।
শফিক রেহমান তখন খ্যাতি ও সাফল্যের তুঙ্গে। যথারীতি তিনি রাষ্ট্রপতি এরশাদের রোষে পড়লেন এবং তাঁর হাতে নানাভাবে নির্যাতিত হওয়ার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন। লন্ডনে থাকাকালে তিনি সরাসরি 'এরশাদ হঠাও আন্দোলনে' যুক্ত হন। আমি তখন লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক 'নতুন দিন' নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক। শফিককে লন্ডনে পেয়ে খুব খুশি হই। 'নতুন দিন' প্রকাশের শুরু থেকেই শফিক আমাকে সাহায্য-সহযোগিতা দিতে শুরু করেন। আমি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়লে শফিককে টেলিফোন করলেই তিনি 'নতুন দিন' অফিসে ছুটে যেতেন এবং পত্রিকাটি যাতে যথাসময়ে প্রকাশিত হয়, তার ব্যবস্থা করতেন।
এ সময় একটি ঘটনায় আমার সন্দেহ হতে শুরু করে। শফিক এরশাদবিরোধী বৃহত্তর গণ-আন্দোলনে কার্যত আর নেই। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেতরেই এরশাদবিরোধী ও বিএনপি সমর্থক একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং তাদের ইশারা-ইঙ্গিতে চলতে শুরু করেছেন। দুটি ঘটনায় আমার মনে এই সন্দেহটি প্রবল হয়ে ওঠে।
প্রথম ঘটনাটি বেগম জিয়ার ঢাকা থেকে দেশেরই এক মফস্বল শহরে বিমানের ফ্লাইটে যাওয়াকে কেন্দ্র করে। তখন আমি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী এবং শফিককে অনুরোধ করায় তিনি পত্রিকাটি সম্পাদনা করে প্রকাশ করছেন। সে সপ্তাহে কাগজটি প্রকাশিত হলে প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হেডিংয়ের খবরটি দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। কাগজের পৃষ্ঠাব্যাপী ব্যানার হেডিং হলো_'খালেদা জিয়ার বিমানে বোমা'। খবরটি আগের দিনই আমি ঢাকার কাগজে ছোট করে ছাপা হতে দেখেছি। খবরটি হলো, খালেদা জিয়া যে প্লেনে মফস্বল সফরে যাচ্ছিলেন, তাতে এক মহিলা যাত্রীর কোলে বসা তার চার বছরের ছেলের হাতে একটি খেলনা পিস্তল দেখতে পাওয়ায় প্লেনের কেবিন ক্রুরা খেলনাটি সরিয়ে ফেলেন।
এটি একটি গুরুত্বহীন খবর। কিন্তু সেই খবরটিকেই ফেনিয়ে-ফাঁপিয়ে শফিক রেহমান এমনভাবে লিখেছেন এবং পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় লিড নিউজ করেছেন, যাতে মনে হতে পারে, সত্যি সত্যি বিমানের ভেতর বেগম জিয়ার প্রাণনাশের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়। ওটি যে বোমা নয়, চার বছরের এক শিশুর হাতে খেলনা পিস্তল সে কথাটিও খবরে গোপন রাখা হয়।
আমি তখনই শফিককে টেলিফোন করে বলি, 'শফি, তুমি এটা কী করেছ? খালেদা জিয়ার বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। এক শিশুর হাতে খেলনা পিস্তল ছিল, তুমি তাও খবরে উল্লেখ করোনি। একটা গুরুত্বহীন খবরকে তুমি একেবারে ব্যানার হেডিং দিয়ে লিড নিউজ করে আমাকে বিব্রত অবস্থায় ফেলেছ। অনেকেই এমনভাবে খবরটি ছাপানো সম্পর্কে নানা সন্দেহ করতে পারে।' শফিক প্রবলভাবে আপত্তি জানিয়ে বললেন, 'না না, তোমার কাগজ বেশি চলবে এবং পাঠকরা খবরটি বেশি খাবে বলেই ওটা ওরকম করে ছেপেছি। আমি বিএনপির মতো ক্যান্টনমেন্টের দলের সমর্থক হতে পারি বলে কি তুমি ভাব যে অন্য কোনো কারণে এভাবে খবরটা ছাপতে যাব?
আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করেছি। শফিক রেহমান যেকোনো কারণেই আওয়ামী লীগের, শেখ হাসিনার বিরোধী হতে পারেন; কিন্তু যে ব্যক্তি এরশাদের সামরিক শাসনের বিরোধিতা করতে গিয়ে নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন এবং এখনো হচ্ছেন, তিনি যাবেন ক্যান্টনমেন্ট আশ্রিত আরেকটি দলের, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সঙ্গে যাদের সংশ্রম আছে বলে সন্দেহ করা হয়, তাদের সঙ্গে হাত মেলাতে? শফিককে সন্দেহ করার জন্য নিজেকেই নিজে ধিক্কার দিয়েছি।
এর কিছুদিন পরই এরশাদ-মরিয়ম কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হয়ে যায়। লন্ডনের 'সানডে অবজার্ভার' এবং দিলি্লর 'ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া' পত্রিকা এই কেলেঙ্কারির সচিত্র বিবরণ প্রকাশ করে। এই সময় শফিক রেহমান এমন একটি কাণ্ড করে বসেন, আমার মনে দৃঢ় সন্দেহ জন্মে যে তিনি বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার শক্তিশালী অংশের কবজায় পড়েছেন। তারা এরশাদবিরোধী বটে, কিন্তু গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়া ঠেকিয়ে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায়
আনতে চায়। (পরবর্তী অংশ আগামী মঙ্গলবার)
লন্ডন : ১৩ জুন, সোমবার ২০১১

No comments

Powered by Blogger.