ছয় জাতির জোটে বাংলাদেশ-বিপর্যয় রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা লাগবেই

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে উন্নত ও উন্নয়নশীল ছয়টি দেশের একটি নতুন জোট গঠিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সুইডেন, মেক্সিকো ও ঘানার পাশাপাশি বাংলাদেশও এই জোটের সদস্য থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গত বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা


দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ উষ্ণায়ন বৃদ্ধি এবং তার ক্ষয়ক্ষতি রোধের লক্ষ্যে দেশগুলো একযোগে কাজ করবে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি, অভিন্ন নদীগুলোতে প্রতিবেশী ভারতসহ কয়েকটি দেশের বাঁধ নির্মাণ ও পানি প্রত্যাহারসহ অন্যায় হস্তক্ষেপ ও সে কারণে দেশের অভ্যন্তরে নদীগুলো মরে যাওয়া, পরিণামে উপর্যুপরি বন্যা এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়া ইত্যাকার সব অবস্থা মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এই কারণগুলো রোধ করা না গেলে নদীনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি, পরিবেশ, জীবনযাত্রা কোনো কিছু ঠিক থাকবে না। ইতিমধ্যে ২২টি নদী সম্পূর্ণভাবে মরে গেছে, শতাধিক নদী মৃত্যুর মুখোমুখি। আর এই নদীগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলাদেশও। ভারতের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলি, তাদের ট্রানজিট দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, অথচ তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত এখনো আমাদের সঙ্গে নাটক করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত শনিবারও প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিপক্ষে তাঁর অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। বরং ফারাক্কা দিয়ে বাংলাদেশকে বেশি পানি দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন, যদিও অর্ধ শতাব্দী আগের প্রমত্তা পদ্মা আজ মৃতপ্রায়। ভারতের সঙ্গে থাকা আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদীর অবস্থাও কমবেশি একই রকম। স্বাধীনতা পরবর্তী চার দশক ধরে আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভারতের সঙ্গে ইনিয়েবিনিয়ে অনেক আলোচনাই করেছি, কিন্তু আমাদের নদীগুলোর মৃত্যু রোধ করার কোনো পথ সৃষ্টি হয়নি। এই অবস্থায় দক্ষিণে সাগর ক্রমেই বেশি করে হামলে পড়ছে জনপদে। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি আজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত। জনবসতিও চরম হুমকির মুখে। এই অবস্থায় আমাদের ক্রমেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মতো অভিন্ন নদীগুলোর সমস্যা নিয়েও আমাদের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে হবে এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন হবে শক্তিশালী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উত্তরোত্তর উন্নয়ন। সেদিক থেকে বলা যায়, প্রাকৃতিকভাবে চরম বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশের পক্ষে চারটি উন্নত দেশসহ ছয় জাতি জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আন্তর্জাতিক ফোরামে যত বেশি আমরা আমাদের অবস্থান, সমস্যার কারণ ও সম্ভাব্য পরিণতির দিকগুলো তুলে ধরতে পারব, এসব সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনাও ততটাই বাড়বে। পাশাপাশি অবশ্যই আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমাধানেরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া উন্নয়ন এগোয় না। তাই সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টাও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমাদের আরো কৌশলী হওয়ার প্রয়োজন আছে। কথায় বলে, 'নিজের ভালোটা নাকি পাগলেও বোঝে।' কিন্তু ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায়, চুক্তি সম্পাদনে কিংবা সেগুলোর বাস্তবায়নে আমরা তার প্রমাণ খুব একটা পাই না। আমাদের স্বার্থ আমরা না দেখলে অন্য কেউ দেখে দেবে না- এই সত্যটি আমাদের মনে রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.