আমার খুব আপন মানুষ আমাকে পিঠ দেখাচ্ছে, এটা থেকে আমিও অনেক নতুন জিনিস শিখছি-‘সাহায্য করতে না পারো, ক্ষতি করো না’

বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলার পর থেকেই বাইরে বসে। কারণ কি শুধুই কুঁচকির চোট? নানা রকম কথা উড়ছে বাতাসে। সেসব নিয়েই কাল চট্টগ্রামে তামিম ইকবাল-এর সাক্ষাৎকার নিলেন তারেক মাহমুদ  চট্টগ্রামে এসেও খেলতে পারলেন না বিপিএলের ম্যাচ। খুব হতাশ?


তামিম ইকবাল: খুবই হতাশ। আমি আবেগ সংবরণ করতে পারিনি। অনেক দিন ধরে এই টুর্নামেন্টের অপেক্ষায় ছিলাম। এখানে আমার মতো ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো বা আবার নিজেকে ফিরে পেতাম। তা ছাড়া মাঠে এসে যে রকম দর্শক দেখলাম, তারা যেভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, আসলেই খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু ফিটনেস পরীক্ষা দিতে গিয়ে যখন আবার ব্যথা হলো, তখন একটু ভেঙেই পড়েছি।
 পরিবারের লোকজনও তো মাঠে এসেছিলেন আপনার খেলা দেখতে...
তামিম: তারাও খুব হতাশ। কাল (পরশু) রাতেই টিম ম্যানেজমেন্টকে বলে হোটেল থেকে বাসায় আসি। এখনো বাসায়ই আছি। তবে বাসার সবাই আমার সঙ্গে স্বাভাবিক, আমিও স্বাভাবিক। কেউ আমাকে জিজ্ঞেসও করেনি কেন খেলিনি।
 কুঁচকির চোটটা কি এতই গুরুতর যে, এত দিনেও সুস্থ হলেন না?
তামিম: আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশের জন্য খেলা। ইনজুরিটা খুব বড় কিছু না। তবে আমি যদি জোরাজুরি করি, এটা বড় হয়ে যেতে পারে। ঝুঁকি নিলে যদি অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়, যদি এশিয়া কাপ মিস হয়ে যায়...আমি সেটা কোনো দিনই চাইব না। দেশের হয়ে খেলার অত ইচ্ছা না থাকলে হয়তো কাল (পরশু) খেলে ফেলতাম। এখানে অনেক টাকাও পাচ্ছি। কিন্তু আমি তামিম ইকবাল হয়েছি বাংলাদেশ দলে খেলে। ভবিষ্যতেও সেটা করতে পারলে এ রকম অনেক সুযোগ আসবে।
 জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা চোট পেলে তো সেটা বিসিবির চিকিৎসকদের জানানো হয়। কিন্তু আপনার চোট সম্পর্কে এখনো তাঁরা নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানেন না!
তামিম: আমি একটা টুর্নামেন্টের মাঝখানে আছি এবং এই মুহূর্তে চিটাগং কিংসের খেলোয়াড়। তার পরও আমি ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় দলের ফিজিওর সঙ্গে দেখা করেছি, বিসিবির চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলেছি।
 এই ম্যাচগুলো না খেলার সিদ্ধান্ত কি আপনারই?
তামিম: আমার নিজের সিদ্ধান্ত কোনো সময়ই ছিল না। এটা ফিজিও দেখছেন। আমি মনে করি, তারা আমার ভালোর জন্যই চিন্তা করছে। যদি আমরা সেমিফাইনালে উঠি আর আমি ফিট থাকি, তাহলে হয়তো খেলব।
 চোটের কারণে খেলতে না পারলে তো মনে হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে সব টাকা পাবেন না...
তামিম: যেহেতু ইনজুরিটা মাঠে হয়েছে, হয়তো বা কিছু টাকা পাব। তার পরও এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। ওনাদের বলে দিয়েছি, আপনারা যা ভালো মনে করবেন তাই করেন। টাকাপয়সা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।
 কিন্তু এ রকমও তো শোনা যায়, চিটাগং কিংসের মালিকের সঙ্গে কিছু সমস্যা আছে আপনার। দলের কোচ খালেদ মাহমুদের সঙ্গেও সম্পর্কটা সহজ নয়...
তামিম: আবারও বলছি, মালিকের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। তাঁকে তো আজকে চিনি না, আমাদের পরিচয় তিন বছরের। আর সুজন ভাই (খালেদ মাহমুদ) কিন্তু যখন আমি হাফপ্যান্ট পরে ঘুরতাম, তখন থেকেই আমাকে চেনেন। ওনার সঙ্গেও আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। এটা সুজন ভাইকে জিজ্ঞেস করলেও বুঝবেন।
 চিটাগং কিংসের ব্যাটিং কোচ মাইকেল বেভানের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার পড়ে মনে হয়েছে আপনার ওপর খানিকটা বিরক্ত ভদ্রলোক। ব্যাপারটা কী?
তামিম: একদমই না। বেভানের কাছে যে কেউ কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সে সাহায্য করে। তার সঙ্গে হয়তো ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে কথা বলিনি। তবে ক্রিকেটের অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। কীভাবে উনি অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচ জেতাতেন, ওই সময় কী চিন্তা করতেন—এসব নিয়ে কথা বলেছি। আমার কাছে মনে হয়, টেকনিকের চেয়ে বেভানের কাছ থেকে এসব জানাই বেশি জরুরি। টেকনিক তো দুই দিনে কিছু শিখতে পারব না। তার চেয়ে তার মানসিকতা থেকে যদি কিছু শিখতে পারি, সেটাই ভালো।
 ডিন জোন্সের সঙ্গেও সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। ব্যাটিং প্র্যাকটিসে গেলে চোটের কথা বলে উনি নাকি আপনাকে সরিয়ে দেন। গত ম্যাচের আগে তিন নম্বরে ব্যাট করতে বলেছিলেন, আপনি তাতে রাজি হননি...
তামিম: আমার সঙ্গে ডিন জোন্সের কোনো সমস্যাই হয়নি। ওনারা এসেছেন ২০ দিনের জন্য, ওনাদের সঙ্গে আমার কী সমস্যা হবে? উনি দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, সবই তাঁর জানা। চোট পাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছি। আর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের আলোচনা একবার হয়েছিল। পরে সুজন ভাই আমাকে নিশ্চিত করেছেন, আমি ওপেনই করব। বুঝি না, আমি ইনজুরিতে পড়লেই কেন এ রকম আলোচনা শুরু হয়!
 এই প্রশ্নটা কিন্তু সবারই। আপনার ইনজুরি নিয়ে সব সময়ই একটা সন্দেহ, একটা বিতর্ক থাকে...
তামিম: হয়তো ভাগ্যটাই খারাপ আমার। এটা বলব না যে আমার কোনো দোষ নেই, আমি সাধু। আমিও ভুল করেছি। কিন্তু এ রকম কোনো ভুল করিনি, যতটুকু আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
 কী ধরনের ভুল করেছেন, সেটা কি বলবেন?
তামিম: গত কিছুদিন আমাকে নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। হোক সেটা মাঠে আশরাফুল ভাইয়ের সঙ্গে ব্যাপারটা বা দলে সুযোগ না পাওয়ার ঘটনা, এসব বিষয়ে মানুষের সামনে আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এ রকম কোনো কিছুই করিনি আমি। এটা কি ব্যক্তিগত কোনো যুদ্ধ? আমি জানি না। আমি ও রকম ছেলে না। আমার চিন্তাধারাও ও রকম না। এ রকম অবস্থা থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে। আমার খুব আপন মানুষ আমাকে পিঠ দেখাচ্ছে, এটা থেকে আমিও অনেক নতুন জিনিস শিখছি।
 এই মানুষগুলো কারা?
তামিম: এটাই বলে বোঝাতে পারব না তারা কারা। তবে তারা আমার খুবই কাছের মানুষ।
 কঠিন একটা সময় কাটাচ্ছেন। মানসিক ঝড়টা কী রকম যাচ্ছে?
তামিম: নিজেকে অনেক কষ্টে ধরে রাখছি। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে ঠিক থাকতে পারত কি না, সন্দেহ আছে। পাকিস্তান সিরিজের পর থেকে এক দিন পরপরই আমি সংবাদপত্রে আসছি এবং তাতে আমার কোনো না কোনো সমালোচনা। তার পরও যে আমি শক্ত আছি, আমার মনে হয়, এই পারফরম্যান্সটা আমার খুবই ভালো (হাসি)। নিজের ওপর ভরসা আছে, আজ হোক, কাল হোক আমি ভালো খেলব। যারা আমার আশপাশে আছে, তাদের কাছে একটাই অনুরোধ, আমাকে সাহায্য করতে না পারো, আমার ক্ষতি কোরো না।

No comments

Powered by Blogger.