রাঙামাটির ১০ নারীনেত্রী অপহৃত-অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র রুখতে হবে

শান্তিচুক্তির যুগপূর্তি হলেও পাহাড়ে শান্তি আসেনি। বরং মহলবিশেষ পাহাড়ের শান্তি বিনষ্ট করার জন্য নানা রকম ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে গত সোমবার রাঙামাটি শহরের বনরূপা সমতাঘাট এলাকা থেকে ১০ নারীনেত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে।


এঁরা সবাই শান্তিচুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ সমর্থক হিল উইম্যান্স ফেডারেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রী। তাঁদের মধ্যে সংগঠনটির জেলা সভাপতিও রয়েছেন। অপহৃত আরেক নারীনেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা সবাই রাঙামাটি থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ইউপিডিএফ প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এ জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে (পিসিজেএসএস) দায়ী করেছেন। তবে পিসিজেএসএস জোরালোভাবে সেই দায় অস্বীকার করেছে।
মাঝেমধ্যে ভুলে যেতে ইচ্ছে হয় যে আমরা কোনো সভ্য দেশে বাস করছি। ১৯৯৬ সালের জুন মাসে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রায় দেড় দশক কাল অতিবাহিত হলেও আজও কল্পনা চাকমার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তাঁকে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা ও বিচার করা যায়নি। শুধু কল্পনা চাকমা না, প্রায়ই পাহাড়ি নারীদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে তার কিছু প্রকাশ পায়, অনেক ঘটনাই অপ্রকাশ্য থেকে যায়। কেন এমনটি ঘটবে? তাঁরা কি এ দেশের নাগরিক নন? তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কি রাষ্ট্রের নয়? প্রত্যন্ত কোনো অঞ্চল নয়, গভীর রাতেও নয়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাঙামাটি শহরের কেন্দ্রস্থল বনরূপা থেকে একযোগে ১০ জন নারীনেত্রীকে তুলে নিয়ে গেল অপহরণকারীরা, অথচ আমাদের নিরাপত্তা প্রদানকারী বাহিনীগুলোর সদস্যরা কিছুই করতে পারেননি। কেন?
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী_সবাই নারী। একজন নারীর সম্ভ্রমহানির যাতনা নিশ্চয়ই তাঁরা উপলব্ধি করেন। তার পরও কিভাবে দেশে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে? যারা এসব করছে তারা কতটা শক্তিশালী কিংবা তারা কি রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী? আমরা চাই, রাঙামাটির নারীনেত্রীদের অবিলম্বে উদ্ধার করা হোক। এ জন্য যত বড় প্রচেষ্টা নিতে হয়, নিতে হবে। তা না হলে গোটা জাতির কপালে যে কলঙ্কতিলক আঁকা হবে, তা হবে অমোচনীয়।
পাশাপাশি আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, দেশবাসীর মতো পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরও বিশাল প্রত্যাশা ছিল যে শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সত্যি সত্যি শান্তির সুবাতাস বইবে। কিন্তু এক যুগ পরও শান্তিচুক্তিই পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রাষ্ট্র এ চুক্তি করেছিল। কাজেই এত দিনেও সেই চুক্তির বাস্তবায়ন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। ফলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি বঞ্চনার বোধ জন্ম নেয়, তাহলে তাকে অন্যায় বলা যাবে কি? আমরা অবিলম্বে শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। পাশাপাশি আমাদের পার্বত্যাঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার, হিংসা উসকে দেওয়ার পেছনে দেশি-বিদেশি যেসব ষড়যন্ত্র কাজ করছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোর হস্তে মোকাবিলা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.