টাকা নেই, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আটকে পড়েছে

ব্যাংকের তারল্য চাপের প্রভাব পড়েছে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। এতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। চার মাস ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা আমানত সংগ্রহ করে প্রধানত ব্যাংক থেকে।
ব্যাংকগুলো ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১৮-১৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেওয়া হচ্ছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রুগ্ণতায় ভুগছে। তাদের মুনাফার হার ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ অবস্থাকে এক প্রকার স্বীকার করে নিয়ে বলছে, শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের এক বৈঠকে গতকাল রোববার এসব আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বৈঠকে দেশের বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা, আমানত সংগ্রহ, স্থায়ী আমানতের ন্যূনতম মেয়াদকাল, আমানতের জন্য বিমা পলিসি করা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো অনধিক ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপোজিট পেনশন স্কিমে কর ছাড়ের জন্য আয়কর আইন সংশোধন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেওয়া ব্যাংকের মেয়াদি ঋণের সুদহার নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে গভর্নর তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে, যা দেশের বন্ড বাজার উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, এর আগে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ২০০৪ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান ১৭১ কোটি টাকা এবং ২০০১-০৮ সময়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ৮৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছিল। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তি আমানতকারীদের কাছ থেকে ন্যূনতম এক বছর এবং প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের কাছ থেকে ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদে আমানত নিতে পারে।
আতিউর রহমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত সংগ্রহের ন্যূনতম মেয়াদকাল তিন মাস করার দাবির বিপক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের অ-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের আমানত সংগ্রহের ন্যূনতম মেয়াদকাল এক বছর। তাই আমানত সংগ্রহের বিদ্যমান নীতিমালা পরিবর্তনের যৌক্তিক কারণ আছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে না।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান আসাদ খান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সুর চৌধুরী বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তারল্য সংকটের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে জানিয়েছে। এ ছাড়া যেসব অসুবিধার কথা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা বিবেচনায় নিয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুর চৌধুরী আরও বলেন, কর রেয়াতের বিষয়টি যেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাই এ নিয়ে তাদের তেমন কিছু করার নেই। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শাখা স্থাপন সহজীকরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
আসাদ খান বলেন, ব্যাংকগুলো থেকে আমানত নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পে মেয়াদি বিনিয়োগ করে। ব্যাংকগুলো ঘোষণা দিয়েছে, তারা সাড়ে ১৫ শতাংশ সুদে মেয়াদি ঋণ দেবে। অথচ ৯০ শতাংশ ব্যাংকই আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। এমনকি আগে নেওয়া ঋণের সুদহারও কয়েক মাস আগ থেকে (রেক্টোস্পেকটিভ) ১৮ শতাংশ ধরে হিসাব করছে।
অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত বা ঋণের জন্য বিদেশি তহবিল জোগাড় করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনাপত্তি দেওয়ার বিষয়টি ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী করা হবে বলে জানান সুর চৌধুরী।

No comments

Powered by Blogger.