কড়াইল বস্তিতে সরকারি আবাসন প্রকল্প-খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেই by রাশেদ মেহেদী

হাখালীর কড়াইল বস্তি এলাকার ৪৩ একর ভূমিতে গণপূর্ত অধিদফতর নির্মাণ করবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক প্রকল্প। এ জন্য একটি খসড়া মাস্টারপ্ল্যানও তৈরি করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মূলত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশেই আবাসিক প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সম্প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও এ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির তথ্য দিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব।


সূত্র জানিয়েছে, খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের বিষয়টি উল্লেখ নেই। এদিকে রাজউকের বর্তমান মহাখালী আঞ্চলিক কার্যালয়ে নির্মাণ করা হবে বাণিজ্যিক কার্যালয়।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক প্রকল্প সম্পর্কে পিডবি্লউডির প্রধান প্রকৌশলী কবীর আহমেদ ভূঁইয়া সমকালকে
বলেন, কড়াইল বস্তি এলাকায় ৪৩ একর জায়গায় একটি উন্নত আবাসন প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বর্তমানে এখানে অবৈধ বস্তি রয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের পাশে রাজউকের জোনাল অফিস সংলগ্ন জায়গায় প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় বহুতল অফিস নির্মাণ করা হবে। কারণ বর্তমান রাজউক ভবনে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন জোন অফিসের শাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। প্রকল্পের ব্যাপারে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম সমকালকে বলেন, কড়াইলের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি এখন অপরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা বলিনি, একটি ভালো পরিকল্পনার মাধ্যমে জায়গাটির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্যই সুপারিশ করেছি। অন্যদিকে পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবীব সমকালকে বলেন, কড়াইল এলাকায় কোনো আবাসন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের কথা ভাবতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাখালীর কড়াইল বস্তি এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের ৯০ একর জায়গা ছিল। এর মধ্যে ৪৭ একর জায়গা কিছুদিন আগে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৪৩ একর জায়গায় একটি উন্নত আবাসিক প্রকল্প গ্রহণের জন্য কয়েক মাস আগে সুপারিশ আসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছ থেকে। কমিটির ৩১ ও ৩২তম বৈঠকে এ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে একাধিক সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত অধিদফতর এবং রাজউক কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান ও প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩২তম সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কমিটিকে জানান, মহাখালীর কড়াইলে রাজউকের বর্তমান অফিস সংলগ্ন এলাকায় পিপিপির ভিত্তিতে ২০ তলা অফিস ভবন কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ এবং রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। কমিটির বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এ প্রকল্প গ্রহণে ঢাকা ওয়াসার আপত্তি এবং এ ব্যাপারে স্থাপত্য অধিদফতরের মতামতও তুলে ধরেন। এ এলাকায় রাজউকের আবাসিক প্রকল্প হলে বিদ্যমান জলাধারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে ঢাকা ওয়াসা। স্থাপত্য অধিদফতরের মন্তব্য, ঢাকা ওয়াসার আপত্তির বিষয়টি নিরসন না করে প্রকল্প চূড়ান্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পিডবি্লউডির প্রধান প্রকৌশলী কবীর আহমেদ ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, বর্তমানে কড়াইলে পিডবি্লউডির ৪৩ একর জায়গা আছে, যার পুরোটাতে আছে অবৈধ বস্তি। বর্তমান পরিকল্পনায় বস্তিবাসীর পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যারা আছে তারা সবাই অবৈধভাবে বাস করছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য পরিকল্পনা নেই।
রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা রাজউকের ২০ তলা ভবন নির্মাণ সম্পর্কে সমকালকে বলেন, মহাখালীতে তিতুমীর কলেজের পাশে রাজউকের যে জোনাল অফিস, বড় শেড এবং গ্যারেজ রয়েছে সেখানেই একটি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ রাজউকের নতুন আটটি জোন হচ্ছে। বিস্তৃত পরিসরে রাজউকের কাজও বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বর্তমান রাজউক ভবনে আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ কারণে এখানে বহুতল ভবন হবে, যেখানে হবে রাজউকের সেকেন্ড অফিস। ওই বহুতল ভবনের কিছু অংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের বিষয়টি পরে ভাবা হবে।
কড়াইলে সরকারি আবাসিক প্রকল্প সম্পর্কে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের অন্যতম নেতা পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবীব সমকালকে বলেন, এ এলাকায় নতুন আবাসিক প্রকল্প নির্মাণে জলাধার কোনো সমস্যা নয়। কারণ বর্তমানে জলাধারটির যে অবস্থা তা পরিবেশবান্ধব নয়। এর মধ্য দিয়ে একাধিক সেবা সংস্থার অবৈধ লাইন চলে গেছে। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এর অবস্থা খুবই করুণ। বরং সরকারি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এ জলাধার পরিবেশসম্মতভাবে রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটিই পরিবেশের জন্য ভালো হবে। তিনি বলেন, সরকারি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা এখানে বসবাসরত বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ। এ বস্তিবাসী এখানে অবৈধভাবে বাস করলেও দীর্ঘদিন বসবাসের কারণে তাদের এক ধরনের অধিকার জন্মে গেছে। এ কারণে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও মাস্টার প্ল্যানে রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.