আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে: অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী তিন বছর বিদ্যুতের দাম পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। জ্বালানি তেল, কয়লা, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পর্যায়ক্রমে বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণে আগামীতে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে বলে   পৃষ্ঠা ২০ কলাম ১
মনে করেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান। বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে এর আওতাধীন সংস্থা ও কোম্পানিসমূহের সেবা সংক্রান্ত চুক্তি ও সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। রাজধানীর আবদুল গণি রোডের বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম বাড়ার আগাম কথা বললেও একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী অর্থমন্ত্রীর এই মন্তব্য সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর তৌফিক-ই-ইলাহী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, অর্থমন্ত্রী দাম বাড়ার বিষয়ে যে কথা বলেছেন তা হয়তো তিনি আক্ষরিক অর্থে বলেননি। বলে থাকলেও আমি তার এই বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয় একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে দাম বাড়ানোর বিষয়টি আগাম বলা যাবে না। দাম বাড়বে কি বাড়বে না- তা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। যদি জ্বালানির দাম কমে তাহলে দাম কমতেও পারে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকসহ বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকও কুইক রেন্টাল কেন্দ্র নয়। আমরা কি করতে পারতাম আর কি পারতাম না- তা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেন। কিন্তু আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে পারতাম। আমরা তা করিনি। ভর্তুকি তুলে না নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তো উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি কমিয়ে বাজার থেকে টাকা ওঠালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ব্যাংক থেকে টাকা নিলে তিন থেকে চার শতাংশ মূল্যস্ফীতি বাড়ে। সরকার ক্রমান্বয়ে ভর্তুকি তুলে নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভর্তুকি কমানোর কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে তা ঠিক নয়। আমরা এ খাত থেকে ক্রমান্বয়ে ভর্তুকি তুলে দিতে চাই। ভর্তুকি কমানো একটি সাউন্ড পলিসি।
এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে শুধু ভারত থেকে নয়, আরও কয়েকটি দেশ (ভুটান, নেপাল) থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।  রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট (ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র) থেকে বিদ্যুৎ কেনায় বিদ্যুতের দাম বাড়ছে এমন সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর মতো অসাড় স্টেটমেন্ট (বক্তব্য) আর হতে পারে না। এ ধরনের রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন না করলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকতো।
পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার বলেন, আমাদের অনেক কিছু ঘাটতি রয়েছে তা এখন পূরণ করতে হচ্ছে। আর মূল্যস্ফীতি বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে  যে শুধু মূল্যস্ফীতি বাড়ছে তা নয়। সারা পৃথিবীতে তা বাড়ছে। এর প্রভাব তো বাংলাদেশে অবশ্যই পড়বে।
তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিন বছরে সরকার অনেক কাজ করেছে। তবে সংবাদ মাধ্যমে ইতিবাচক সংবাদের চেয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ বেশি হয়ে থাকে। এতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তিনি বলেন, সরকারের ভুল ভ্রান্তি থাকতে পারে। তাই বলে সরকার কিছুই করেনি এটি তো বলা যাবে না। কিন্তু কিছু সংবাদ মাধ্যম তা বলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন। দেশে গণমাধ্যমকে এতো স্বাধীনতা আগে আর দেয়া হয়নি। এই স্বাধীনতার কারণেই এখন অনেকে যা ইচ্ছা বলছেন। টিভি টকশোগুলোতে ইচ্ছামতো সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে। শুধু নেতিবাচক খবর প্রকাশ না করে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীও তার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, একথা সত্য যে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার কারণে অনেকে যা ইচ্ছা তা-ই বলছে। সেদিন দেখলাম মধ্য রাতে একটি টিভি শোতে আমাকে অকথ্য গালিগালাজ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, সরকার মানুষকে সেবা দেয়ার জন্যই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু সমালোচনা করলে সরকারের সব উদ্যোগ সফল হবে না। সমালোচনার সঙ্গে ভাল পরামর্শ দেয়ার জন্য তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেনও বক্তব্য রাখেন। এতে গ্যাস, সিএনজি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তা এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানান, এসব বিষয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করে সার্বিক পরিস্থতি গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সংস্থা ও কোম্পানিসমূহের সঙ্গে সেবা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় সংস্থা ও কোম্পানিগুলো সিস্টেম লস কমানোসহ বিভিন্ন সেবা বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে এর মধ্যে ৪২১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র সরকারি মালিকানাধীন (শতকরা ৫৫ভাগ)। আর ৩৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্র রয়েছে বেসরকারি মালিকানাধীন (শতকরা ৪৫ভাগ)। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭৬১৩ মেগাওয়াট। আর চাহিদা ৬০০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে ৫০০০ থেকে ৫৩০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত তিন বছরে সরকার রেকর্ড পরিমাণ ৩০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়িয়েছে- যা অতীতের কোন সরকার করতে পারেনি।

No comments

Powered by Blogger.