সাঈদীর বিরুদ্ধে সপ্তম ও অষ্টম সাক্ষী যা বললেন-

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরের ৭ই মে পাড়েরহাট রিকশাস্ট্যান্ডে অন্যদের সঙ্গে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আসার অপেক্ষা করেন। পরে ২৬টি রিকশায় করে ৫২ জন হানাদার এলে তাদেরকে হিন্দু সমপ্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের    পৃষ্ঠা ৫ কলাম ৫
বাড়ি হাত দিয়ে দেখিয়ে দেন। এরপর শুরু হয় লুটপাট। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে এমন জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী মো. মোস্তফা হাওলাদার। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ সাক্ষ্য গ্রহণ করে। পরে মোস্তফাকে জেরা করা হয়। এর আগে সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন পসারীর জেরা শেষ হয়। সাঈদীর পক্ষে জেরা করেন এডভোকেট মিজানুল ইসলাম, এডভোকেট মনজুর আহসান আনসারী ও এডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আজ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। মোস্তফা বলেন, একাত্তরের মে মাসে আমি পাড়েরহাটের বাজারে ছিলাম। মে মাসে দেলোয়ার হোসেন সিকদার (সাঈদী), সেকান্দার সিকদার ও মোসলেম মাওলানা অন্য রাজাকারদের নিয়ে পাড়েরহাটের রিকশাস্ট্যান্ডের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য অপেক্ষা করেন। কিছুক্ষণ পরে পাক বাহিনী এলে সাঈদী, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার সিকদার ও মোসলেম মাওলানা হিন্দু সমপ্রদায় ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সাঈদী, মোসলেম মাওলানা, খলিল মৌলভিসহ আরও অনেক রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোক লুটপাট করে। এভাবে ঘণ্টা দেড়েক লুটপাটের পর পাক বাহিনী রাজলক্ষ্মী স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে। মোস্তফা আরও বলেন, পরের দিন ১৫-১৬ জন পাক সেনা ও ৩০-৩৫ জন রাজাকার বাদুরা গ্রামে যায়। পরে খালের এপার থেকে আমরা আগুন ও ধোঁয়া দেখি। এরপরে সেই বাড়ি থেকে তারা লুটপাট করে বের হয়। পরে ওই গ্রামের রইস উদ্দিন কোম্পানি পসারীর বাড়িতেও রাজাকাররা লুট করে। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সইজ উদ্দিন পসারীর বাড়ি লুট ও আগুন দেয়া হয়। পাক বাহিনী সইজ উদ্দিনের বাড়ি থেকে ইব্রাহিম কুট্টিকে ধরে নিয়ে গুলি করে পাড়েরহাটের খালে লাশ ফেলা দেয়। এর আগে সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিনকে জেরা করা হয়। জেরায় সাঈদীর আইনজীবী বলেন, আপনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। আইনজীবী বলেন, আপনার স্ত্রী ও শাশুড়ি পাড়েরহাটে ভিক্ষা করেন। সাক্ষী বলেন, আমার স্ত্রী ভিক্ষা করেন না। শাশুড়ি হয়তো করেন। আইনজীবী বলেন, আপনাকে ৮ই মে ধরে নিয়ে যাওয়া, মারধর করার বিষয়টি মানিক পসারী কবে জানতে পারেন। সাক্ষী বলেন, ৮ই মে পালিয়ে আসার পরে ফজরের সময়। আইনজীবী বলেন, মারধরের কারণে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন। সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, রাজাকার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসার পরে সুন্দরবনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে আপনার শ্বশুর বাড়িতে ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল। সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, আপনার শ্বশুরের ঘরে এসে তাদের বা আপনার শালীকে মারধর করেছিল কিনা। সাক্ষী বলেন, জানি না। এক পর্যায়ে আইনজীবী জিজ্ঞেস করেন, মে’র আগের মাসের নাম কি? সাক্ষী বলেন, বলতে পারবো না। আইনজীবী বলেন, মে মাস কত দিনে। সাক্ষী বলেন, সম্ভবত ২৯ দিনে। পরে অষ্টম সাক্ষী মোস্তফাকে জেরা করা হয়। জেরায় আইনজীবী বলেন, হোগলাবুনিয়ার মৃত আজহার আলীর ছেলে আবদুর রশিদ বয়াতীকে চেনেন। সাক্ষী বলেন, চিনি। আইনজীবী বলেন, তার দায়ের করা চুরির মামলায় আপনার সাজা হয়েছিল। সাজা বহাল আছে। সাক্ষী বলেন, সাজা হয়েছিল। বহাল নেই। আইনজীবী বলেন, সাজা কিভাবে বাতিল হলো। সাক্ষী বলেন, মীমাংসার মাধ্যমে। জজকোর্টে আপিলের পর উভয় পক্ষের মীমাংসার মাধ্যমে। আইনজীবী বলেন, পাড়েরহাটে পাকিস্তানি বাহিনী আসার পূর্ব পর্যন্ত এলাকাটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, পাক আর্মি আসার কতদিন আগে রাজলক্ষ্মী স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সাক্ষী বলেন, ১৫ দিন বা ১ মাস আগে। আইনজীবী বলেন, শান্তি কমিটি কবে গঠন হয়? সাক্ষী বলেন, পাক বাহিনী আসার পরে। আইনজীবী বলেন, পাড়েরহাট ইউনিয়নে ওই সময় চেয়ারম্যান কে ছিল? সাক্ষী বলেন, বলতে পারবো না। সাক্ষী পরে বলেন, আমজেদ গাজী। আইনজীবী বলেন, দানেশ মোল্লা কি করতেন? সাক্ষী বলেন, রাজাকার হওয়ার আগে মাস্টারি করতেন। আইনজীবী বলেন, সেকান্দার সিকদার কি করতেন? সাক্ষী বলেন, সৌখিন লোক। বাজারে তার দোকান ছিল। তাতে বসতেন। তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। আইনজীবী বলেন, রাজাকার বাহিনী গঠিত হওয়ার পরেই তারা হিন্দু সমপ্রদায় ও আওয়ামী লীগের লোকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে? সাক্ষী বলেন, জি। আইনজীবী বলেন, তাদের অত্যাচারের ধরন ছিল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ? সাক্ষী বলেন, জি। আইনজীবী বলেন, এ ভয়ে অনেক হিন্দু ও আওয়ামী লীগের লোক ভারতে চলে যায়? সাক্ষী বলেন- কিছু চলে যায়, কিছু থেকে যায়। আইনজীবী বলেন, তাদরে দু’-এক জনের নাম বলুন। সাক্ষী বলেন, স্মরণ নেই। আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম কুট্িটকে কতদিন আগে থেকে চিনতেন? সাক্ষী বলেন, তাকে হত্যার ঘটনার ২-১ বছর আগে থেকে। আইনজীবী বলেন, তার বাড়ি কোথায় ছিল, বাবার নাম কি? সাক্ষী বলেন, বাড়ি বাদুরা গ্রামে। বাবার নাম গফুর শেখ। আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম কুট্টির শালা সাহেব আলী  ওরফে সিরাজকে চিনতেন? সাক্ষী বলেন, না। আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর নাম কি? সাক্ষী বলেন, জানি না। আইনজীবী বলেন, তার কোন সন্তান ছিল কিনা? সাক্ষী বলেন, এ খোঁজ নেয়ার কোন দরকার নেই। আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম কুট্টির লাশ কি হয়েছিল? দাফন হয়েছিল কিনা? সাক্ষী বলেন, জানি না। শুনেছি লাশ পায়নি। আইনজীবী বলেন, ১৬ই ডিসেম্বরের কতদিন আগে পাড়েরহাট শত্রুমুক্ত হয়? সাক্ষী বলেন, বলতে পারবো না। আইনজীবী বলেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আপনার প্রথম কবে দেখা হয়? সাক্ষী বলেন, ১৮/০৮/১০ (২০১০ সালের ১৮ই আগস্ট)। আইনজীবী বলেন, ১৮/০৮/১০-এর মতো করে গতকালের (শনিবার) তারিখটি বলতে পারবেন। সাক্ষী বলেন, বলতে পারবো না।

No comments

Powered by Blogger.