জেরায় সাক্ষী মোস্তফা-এক দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে চেনেন তিনি সাঈদী

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অষ্টম সাক্ষী মো. মোস্তফা হাওলাদার বলেছেন, তিনি একজন দেলোয়ার হোসেন শিকদারকে চেনেন। তিনি বর্তমানে সাঈদী। আর কোনো দেলোয়ার শিকদারকে তিনি চেনেন না। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল সোমবার জেরায় আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিলউদ্দিন চৌধুরীর
এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী এ কথা বলেন। জেরায় আইনজীবী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে পিরোজপুরের পারেরহাটের রাজাকার দেলোয়ার শিকদারকে মুক্তিযোদ্ধা আবেদ আলী হত্যা করেন। দেলোয়ার শিকদার ও তাঁর বড় ভাই এনায়েত শিকদার পিরোজপুরের সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাস্তায় চিলা শিকদারের বাড়িতে থাকতেন। এই দেলোয়ার শিকদারকে সাক্ষী চেনেন কি না।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় একই সময়ে সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গতকাল সাক্ষী মোস্তফাকে আসামিপক্ষের অপর দুই আইনজীবী মিজানুল ইসলাম ও মনজুর আহমেদ আনসারীও জেরা করেন।
শুরুতে জেরা করেন মিজানুল। তিনি জানতে চান, যেদিন পাকিস্তানি সেনারা পারেরহাটে যায়, সেদিন সাক্ষী কয়টার দিকে পারেরহাট বাজারে গিয়েছিলেন। জবাবে সাক্ষী বলেন, তাঁর দোকান থাকায় তিনি প্রতিদিন খুব সকালে দোকানে যান। সেদিনও সকাল ছয়টার দিকে দোকানে গিয়েছিলেন। একপর্যায়ে মিজানুল রাজাকার হিসেবে ১২ জনের নামোল্লেখ করে জানতে চান, সাক্ষী তাঁদের চেনেন কি না। জবাবে মোস্তফা বলেন, তাঁদের মধ্যে তিনি দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, মোসলেম মাওলানা ও রুহুল আমিনকে চেনেন।
এরপর জেরা শুরু করেন কফিলউদ্দিন। তাঁর এক প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ করেন। পরে কফিলউদ্দিন আইনগত মতামতে বলেন, সাক্ষী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। সাক্ষী এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। আইনগত মতামতে আইনজীবী আরও বলেন, মোস্তফার সাক্ষ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি একাত্তরে পারেরহাট বাজারে ছোলামুড়ি বিক্রি করতেন না, কারণ তখন তাঁর কোনো পেশা ছিল না। আইনজীবীর এই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেন সাক্ষী।
মোস্তফা গত রোববার ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, একাত্তরে পারেরহাট বাজারে তিনি ছোলামুড়ি বিক্রি করতেন। একাত্তরের ৭ মে তিনি ২৬টি রিকশায় ৫২ জন পাকিস্তানি সেনাকে পারেরহাটে আসতে দেখেছেন। পরে সাঈদী, দানেশ মোল্লা, সেকান্দার আলী শিকদার, মোসলেম মাওলানা, খলিল মৌলভীসহ আরও অনেক রাজাকার বাজারে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের লোকজনের দোকানপাট পাকিস্তানি সেনাদের দেখিয়ে দিলে তারা সেগুলোতে লুটপাট করে।
মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বেলা সোয়া তিনটার দিকে মোস্তফার জেরা শেষ হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ রাষ্ট্রপক্ষের নবম সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা হবে।

No comments

Powered by Blogger.