বুয়েটের ৩ ছাত্রলীগ কর্মী বহিষ্কার, ১৯ ঘণ্টা পর প্রো-ভিসি মুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিসহ অর্ধ শতাধিক শিক্ষক ১৯ ঘণ্টা পর অবরোধ থেকে মুক্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটির জরুরি    পৃষ্ঠা ৮ কলাম ৪
বৈঠক বসেছে। সিনিয়র এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম বিশেষ ক্ষমতাবলে গতকাল তাদের সাময়িক বহিষ্কার করেন। বহিষ্কৃতরা হলেন- মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র সুজিত সাহা (সুজিত), একই বিভাগের ছাত্র সাইফুল্লাহ শিকদার (মিঠুন) ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফ রায়হান (দ্বিপ)। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখনও অবরোধ তুলে নেয়নি। শনিবার বিকাল চারটা থেকে টানা তাদের অবরোধ চলছে। ঘটনা তদন্তে সাবেক ডীন অধ্যাপক আবদুর রশিদকে প্রধান করে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আজকের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। শনিবার শেষ বর্ষের ছাত্র তৌসিফ আহমেদকে মারধর করে মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র সুজিত সাহা, একই বিভাগের ছাত্র সাইফুল্লাহ শিকদার ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফ রায়হান। এরা তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তৌসিফকে হকিস্টিক ও রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এতে তার পা ভেঙে যায়। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের অবস্থান বাড়তে থাকে। তারা তাদের দাবি আদায়ে বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানসহ অর্ধ শতাধিক শিক্ষককে অবরোধ করে। ভিসি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি প্রো-ভিসি। প্রো-ভিসি দায়ীদের বহিষ্কারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বললেও তারা মেনে নেয়নি। টানা তাদের অবস্থান  চলে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভিসি তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার (৬ মাস) করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর প্রো-ভিসির কার্যালয়ের সামনে থেকে সাময়িক সময়ের জন্য অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। প্রো-ভিসি শিক্ষকদের নিয়ে সকাল ১১টার দিকে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাস এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ছাত্রদের অবস্থান রয়েছে। তবে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বলে জানান তিনি। প্রো-ভিসি বলেন, আমার সঙ্গে ৪০-৫০ জন শিক্ষক আটকা পড়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানিয়েছে। এখনও তারা অবস্থান করছে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক আমিনুল ইসলাম পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনিও প্রো-ভিসির সঙ্গে অবরুদ্ধ ছিলেন। তিনি শারীরিক অসুস্থার কারণ দেখিয়ে প্রো-ভিসি ও  রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি জানিয়েছেন, ছাত্রদের এ ধরনের আচরণে খুব কষ্ট পেয়েছি। তাই আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। ঘটনা তদন্তে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক আবদুর রশিদ সরকারকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম শহিদুল হাসান ও অধ্যাপক সাইদুর রহমান। কমিটিকে আজ রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের পরপরই কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম। ভিসি বলেন, এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ৩ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে বোর্ড অব রেসিডেন্ট অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি পরবর্তী শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। র‌্যাগ ডে উপলক্ষে গত বুধবার আয়োজিত কনসার্টে পেছন থেকে সামনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা হয়ে যায়। এরপরও শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের ওই তিন কর্মী তৌসিফকে পেটায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী। ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রীরাও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ওই তিন ছাত্রের আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা  রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসের আশেপাশে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গতকাল সন্ধ্যায় ৬টায় ডিসিপ্লিনারি কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনা যাতে আর অবনতির দিকে না যায় সেজন্যই বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।

No comments

Powered by Blogger.