প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এরশাদ - ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছে জাতীয় পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার: ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ চলছে জাতীয় পার্টির। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি শুরু করা হয়েছে। এ যাত্রা সেদিনই শেষ হবে যেদিন লক্ষ্য অর্জিত হবে। জাতীয় পার্টির ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানী মাঠে আয়োজিত এক সমাবেশে গতকাল এসব মন্তব্য করেন এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, অতীতে আমাদের হাতে শৃঙ্খল ছিল। পায়ে ছিল বেড়ি। মুখে দেয়া হয়েছিল তালা। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনেছি। সবকিছু ভেঙে মৃত্যুঞ্জয়ী পার্টি এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন প্রাণ খুলে হাসতে পারছি। জাতীয় পার্টিতে এখন যৌবন বিরাজ করছে। এ যৌবনই পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে। জাতীয়তাবাদের প্রহরী হয়ে আমরাই দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবো। এরশাদ বলেন, জাতির সামনে এখন একটাই প্রশ্ন- ৩ বছরে আমরা কি পেলাম? এ সময়ে দেশের মানুষ শেয়ারবাজারের মাধ্যমে সর্বস্ব হারিয়েছে। প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। গুপ্ত হত্যার খবরে শিউরে উঠছি। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। ফুটপাত দখল করে চলছে অবৈধ বাণিজ্য। দ্রব্যমূল্য চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দিনে-দুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সৃষ্টি হয়েছে অসহ্য যানজট। ঘটছে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। লক্ষ কোটি বেকার আজ হতাশাগ্রস্ত। পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হয়নি। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হয়নি। প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু হচ্ছে না। এসব কারণে মানুষ সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্ষমতায় গিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করব। কল-কারখানা চালু করব। কৃষক-শ্রমিককে বাঁচাব। ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করব। সন্ত্রাস ও দলীয়করণের কবর রচনা করব। এরশাদ বলেন, নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই। নীতি-আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে কোন রাজনীতি করবে না। তিনি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনকে তিনি সরকারের এসিড টেস্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শান্তির জন্যই আমরা সরকারের পরিবর্তন চাই। তিনি বলেন, আমি ভয় করব না, ভয় করব না। মরার আগে দু’বার করে মরব না। বক্তব্যের শেষপর্যায়ে তিনি নিজের লেখা দু’টি কবিতা শোনান। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমেদ বলেন, এরশাদ ঘোষণা দিয়েছেন- ১০০টি মামলা হলেও জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। এ ঘোষণার পর মহাজোটের আর অস্তিত্ব নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির ইতিহাসে নতুন সূর্য উঠেছে। পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তার কোনটিই ধোপে টেকেনি। এরশাদ গণতন্ত্রের যে বীজ রোপণ করে গিয়েছিলেন, কোন সরকারই তা এগিয়ে নিয়ে যায়নি। গণতন্ত্রকে তারা একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, কোন রক্তচক্ষুর কাছে জাতীয় পার্টি আর মাথা নত করবে না। জীবন দেব, রক্ত দেব- তারপর এককভাবে নির্বাচন করব। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী ফিরোজ রশিদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, এডভোকেট সালমা ইসলাম, গোলাম হাবিব দুলাল, সাইদুর রহমান টেপা, লিলি চৌধুরী, ফয়সাল চিশতি, শ্রমিক পার্টির সভাপতি আনোয়ারা বেগম, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মো. রাজু, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুল, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম রুবেল, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ঝন্টু এবং ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক আবুল কাশেম রিপন।
তোপের মুখে জিয়াউদ্দিন বাবলু: সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য দেয়ার জন্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুর নাম ঘোষণা করার পর নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পার্টির নেতা-কর্মীরা তাকে সরকারের দালাল হিসেবে উল্লেখ করে স্লোগান দিতে থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.