ওষুধ বাজার-মুনাফার কাছে জিম্মি জীবন!

স্বীকার করা যাবে না, ওষুধের বাজারও আর দশটা বিনিময় ব্যবস্থার মতো বিনিয়োগ, উৎপাদন খরচ, মুনাফাসহ কিছু অনিবার্য অনুষঙ্গে বাঁধা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে মুনাফা নয়, সেবাই সবার আগে তা ভুলে যাওয়া চলবে না। ভুলে যাওয়া চলবে না, জীবন রক্ষাকারী পণ্য মুনাফার হাতিয়ার নয়। অথচ ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, এ দেশে ওষুধের বাজার কতটা অস্থির। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তার খণ্ডচিত্র ফুটে উঠেছে। সাধারণ ওষুধ তো বটেই, জেনেরিক


আইটেমগুলোরও সরকারিভাবে নির্ধারিত মূল্য যেভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বাক্সের গায়ে লেখা মূল্য কেটে কিংবা না কেটে বেশি দাম রাখা, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দাম হাঁকার মতো অপরাধমূলক তৎপরতাও কম নয়। স্বল্প দামের ওষুধ বিক্রি না করা বা সরবরাহে অনুৎসাহ প্রদর্শনের ঘটনাও অনেক সময় ক্রেতার জন্য বিড়ম্বনা তৈরি করে। হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোতেও ওষুধপত্রের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়িয়ে আদায় করার বিষয়টি তো ওপেন সিক্রেট। বস্তুত জীবন রক্ষা বা সুস্থতার জন্য ব্যাকুল রোগী কিংবা তার আত্মীয়-স্বজনের পক্ষে এসব ক্ষেত্রে অনিয়মের কাছে নতি স্বীকার ছাড়া স্বভাবতই কিছু করার থাকে না। মুনাফার কাছে জীবন এভাবে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে না। আমরা মনে করি, প্রশাসনের সামান্য সক্রিয়তাই চিকিৎসাপ্রার্থী লাখো মানুষের বিড়ম্বনা ও আর্থিক দণ্ড দূর করতে পারে। যে ১১৭টি জেনেরিক ওষুধের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ করা আছে, ওষুধের দোকানে দোকানে তা টানিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ওষুধ বিক্রেতা ও সরবরাহকারীরা তা মেনে চলছে কি-না সে ব্যাপারে নজরদারিও থাকতে হবে। তাহলেই পরিস্থিতির অনেকাংশে উন্নতি ঘটবে। একই সঙ্গে ওই তালিকা সম্প্রসারণ করাও সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, গত দুই দশকে দেশে নতুন নতুন রোগের বিস্তার ঘটেছে; এসেছে নতুন ধরনের ওষুধপত্রও। একই সঙ্গে উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী ও বিক্রেতাদের মধ্যে মুনাফা নয়, সেবার মনোভাব জাগ্রত করতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে। মনে রাখা জরুরি, চিকিৎসাপ্রার্থী ও তার স্বজনের জীবন এমনিতেই বেদনা ভারাক্রান্ত; এর ওপর ওষুধের অন্যায্য দামের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চরম অমানবিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.